যশোরে কবিরাজি -হারবাল চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারনার মহাউৎসব

জি এম মিজানুর রহমান মিজান, যশোর: যশোরে কবিরাজি-হারবাল চিকিৎসার আড়ালে চলছে অনিয়ম আর প্রতারণা। সেইসাথে চলছে মাদকের কেনাবেচাও। সরকারি নিয়মনীতি লংঘন করে যশোরের যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন কবিরাজি ও হারবাল চিকিৎসালয়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, ডিশ চ্যানেল সহ লিফলেট বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যবসা বেশ জোরেশোরেই চালিয়ে এই কবিরাজ ও হারবাল ব্যবসায়ীরা। প্রতারণার পর প্রতারনা দেখে অনেকেই বলেছেন, কবিরাজি-হারবাল চিকিৎসার নামে প্রতারণার মহা উৎসব। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে কয়েকটি হারবাল ও কবিরাজ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা, কারাদন্ড দেওয়ার পরও থামেনি তাদের এই অবৈধ কর্মকান্ড। যেন কিছুই হয়নি এমন ভাবেই আরো জোরে শোরে শুরু করেছে তাদের প্রচার ও অশ্লিল কথামালা সাজিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া, যাতে সামাজের সাধারণ মানুষ থেকে স্কুল কলেজগামী ছাত্রছাত্রীরা পড়ছে লজ্জার মধ্যে। কোনপ্রকার বিধিনিষেধকে এই ব্যবসায়ীরা তোয়াক্কা করছে না।
বিশেষ করে মানুষের যৌন শিক্ষা সচেতনতা কম থাকাকে পূঁজি করে এরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ওষুধ সেবনের পরই ১০০ ভাগ নিরাময়ের নিশ্চয়তা দিচ্ছে এই সব বিজ্ঞাপনে। আর এতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে অশিক্ষিত অবুঝ রোগীরা। যশোর শহরে অন্তত ২০টি হারবাল-কবিরাজ চিকিৎসার প্রতিষ্ঠান তাদের এই অবৈধ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে নিশ্চিন্তে। অভিযোগ আছে, হারবাল-কবিরাজি চিকিৎসার নামে এরা যৌন উত্তেজক মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। মূলত যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট গুড়ো করে হালুয়া বানিয়ে হারবাল ওষুধ হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে। হারবাল প্রতিষ্ঠানের মালিক চিকিৎসকরা রোগীদের আকৃষ্ট করতে নিজেরাই ওষুধের নাম তৈরি করে। বাহারি আর ইসলামী কায়দার নাম দেখে রোগীরা আকৃষ্ট হয়ে প্রতারণার কবলে পড়ছে। প্রায় তিন বছর নেই কোন অভিযান, ফলে নির্বিগ্নে চলছে তাদের তাদের অবৈধ কর্মকান্ড। কোন কোন প্রতিষ্ঠান ড্রাগ লাইসেন্সের আড়ালে ভেজাল ওষুধ তৈরি করে বিকিকিনি করছে। আবার কারো কারো কাছে কোন প্রকার লাইসেন্সই নেই। জানাগেছে এই সব হারাবাল-কবিরাজি ঔষাধালয়ে বিভিন্ন রোগের বিভিন্ন ঔষধ রংবেরং এর ফাইলে করে রাখা হয়, যা দেখে আকৃষ্ট হয় রোগিরা। এসব ঔষদের এর এক ফাইল ওষুধ ৪৫০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত আছে। এই এক ফাইলে রোগ নিরাময় হয়ে যাবে বলে গ্যারান্টিও দেওয়া হয় না হলে মূল্য ফেরত দেওয়া হবে বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু কাজ না হলেও লোকলজ্জার ভয়ে কোন রোগি উচ্চবাচ্চও করে না। মহিলাদের সাদা স্রাব ভাঙ্গার চিকিৎসায় গ্যারান্টি দিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। আসলে এখান থেকে রোগী ভাল হয়েছে এমন কোন নজির নেই। প্রচার করা হয় এ হারবাল-কবিরাজি ঔষধে সেক্স বৃদ্ধি, শুক্রকীট সবল, জীর্ণ শরীর মোটা করবে। আসলে এখানকার ওষুধ খেয়ে ভাল হয়েছে এমন নজির খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ঘোপ জেল রোডের জেলখানার সামনে গ্রামীণ মেডিকেল এন্ড হারবাল রেমিডি নামে একটি প্রতিষ্ঠান পুরুষ ও মহিলাদের যৌন রোগসহ জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা দেয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা টাকা। এখানে ট্যাবলেট জোর ৪৫০ টাকা, ট্যাবলেট টাস, ক্রিম টিলা বিক্রি করা হচ্ছে গ্যারান্টি দিয়ে। এছাড়াও মুখের কালো দাগ, ব্রেস্ট ছোট বড়, চিকন ও মোটা স্বাস্থ্য করা, অনিদ্রা, কাশি , হাপানী, অ্যাজমা, পাইলস অজীর্ণ, পেট ফাঁপা, একজিমা, গ্যাস্টিক ও চুল উঠে যাওয়া রোগের চিকিৎসা দেওয়ার প্রচার চলছে বেশ জোরে শোরেই। পালবাড়ী ভাস্কর্য মোড়ে আছে নিজাম হাকিমী দাওয়াখানা। এখানে রোগ নিরাময়ের মাত্র ২/৩ ঘন্টার মধ্যে ১০০ ভাগ কার্যকরী ও গ্যারান্টি দিচ্ছে। এসপি হালুয়া ৪৫০ টাকা, শক্র বড়ি ৩৫০ টাকা, জিংসেং এসপি বড়ি ৭০০ টাকা, জিংসেং ওয়েল ২৮০ টাকা বিক্রি ও ১০০ টাকা অগ্রিম ডাকযোগে পাঠালে ওষুধ পাঠনো হয় বলে প্রচার চালানো হচ্ছে। এখানকার ওষুধে স্থায়ীভাবে রোগ সেরেছে এমন নজির নেই। ক্ষনিকের জন্য কাজ করলেও পরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কিছু দিনের মধ্যেই। উপশহর খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে কোরিয়ান হারবাল কমপ্লেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১ ঘন্টার মধ্যে বিশেষ কাজে ৩০/৪০ মিনিট থাকা সম্ভব বলে প্রচার চালিয়ে রোগীদের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। এছাড়াও কলকাতা হারবাল, মাদ্রাজ, চায়না হারবাল, চাঁচড়া মোড়ের হারবাল হেলথ কেয়ার, ন্যাচারাল হারবাল বিভিন্ন রোগের নিরাময়ের গ্যারান্টি দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। মাদ্রাজ হারবালের মালিক ইমদাদুল হক পান্নু একই সাথে চালাচ্ছেন চাঁচড়া মোড়ের ন্যাচারাল হারবাল হেলথ কেয়ার। ন্যাচারালে সব সময় বসে থাকেন একজন রিসিসপনিস্ট। রোগী আসলে ডেকে আনা হয় চিকিৎসক। তবে প্রচার চালানো হয় এখানে নিয়মি বসেন হাকিম। অবশ্য এপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে কোন হাকিমকে পাওয়া যায়নি। বসেছিলেন একজন রিসিসপনিস্ট কাম ম্যানেজার।ঘোপ জেল রোড এলাকার চট্টগ্রাম মেডিকোতে কোন হেকিম থাকে না। রেলগেট এলাকার দিল্লী ইউনানী আর্যূবেদি প্রতিষ্ঠানের নেই কোন ড্রাগ লাইসেন্স। শহরের চার খাম্বার মোড়ে কাজী বখতিয়ার নামে এক প্রতারক পাইলস চিকিৎসার নামে ক্লিনিক খুলে বসেছে। দীর্ঘ দিন ধরে বখতিয়ার ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগ সম্পূর্ন নিরাময় করার গ্যারান্টি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রতি বৃহস্পতিবার বখতিয়ার এখানে বসে। যশোরের বিশিষ্ট ঔষধ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে হারবাল চিকিৎসার নামে স্রেফ প্রতারনা করছে এইসব হারবাল কবিরাজি চিকিৎসক ব্যবসায়ীরা। ফার্মেসী থেকে বিভিন্ন যৌন উত্তেজক ওষুধ কিনে নিয়ে তাদের মতো করে অন্যান্য মেডিসিনের সাথে মিশিয়ে বড়ি আর হালুয়া তৈরি করে বিক্রি করে। প্রকৃত হারবাল চিকিৎসার জনপ্রিয়তাকে পূঁজি করে এ চক্র ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। আসলে এরা এক ধরনের প্রতারক চক্র। এদের মূল ধান্দা টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়া। এব্যাপারে যশোর ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক জানিয়েছেন, অবৈধ হারবাল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের ড্রাগ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তাদের ভেজাল ঔষধ তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়নি। যারা এ কর্মকান্ডের সাথে তাদের ছাড় দেয়া হবেনা।

জি এম মিজানুর রহমান মিজান, যশোর
মোবাইল ঃ ০১৮৪২১৮২৮৩২
তারিখ ঃ ২৯.১০.১৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *