ঈশানবালার নদীভাঙন রোধে ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ
মোঃ জাবেদ হোসেন: হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়ন পশ্চিম তীর ঈশানবালা একটি নদী ভাঙনগ্রস্ত এলাকা। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ব্যাপক ভাঙন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তাবিত প্রকল্প মতে প্রাথমিক পর্যায়ে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার একটি প্রকল্পের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।গত ৭ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পূর্বাঞ্চল, পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লা অস্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ অনুন্নয়ন রাজস্ব বাজেটের আওতায় এ প্রকল্পটির অর্থ যোগান দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে। সেই আলোকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক’জন কর্মকর্তা ঈশানবালার নদী ভাঙন পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি ঈশানবালার নদী ভাঙ্গনগ্রস্ত মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা হাট-বাজার, স্কুল-মাদ্রাসা ও শত শত পরিবারের বাড়ি ঘর ও বিষয় সম্পত্তির কথা বিবেচনা করে গত ২২ সেপ্টেম্বর’২০১৫ ১ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রেরণ করে।সেই আলোকেই পানি উন্নয়ন বোর্ড পূর্বাঞ্চল কুমিল্লাও বরাদ্দ প্রদান করে।এছাড়াও ঈশানবালার ৮৫০ মিটার নদী ভাঙ্গনগ্রস্ত এলাকায় ১শ ৩৫ কেজি ওজনের ২ লাখ ৪৪ হাজার জিও টেক্সটাইল ব্যাগও বরাদ্দ হয়েছে। যা দ্বারা তীর সংরক্ষণ ও ডাম্পিং এর কাজে ব্যবহৃত হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের এ কাজ বাস্তবায়ন করবে।গত ১২ অক্টোবর একটি দৈনিকে এ ব্যাপারে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।প্রসঙ্গত, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ এ দু’অর্থ বছরে মেঘনার প্রবল মেঘনার কবল জোয়ার ভাটার টানে ও বর্ষা মৌসুমে ঈশানবালায় ব্যাপক ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়।বিষয়টি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি এমপির দৃষ্টিগোচর করা হলে ও স্থানীয়ভাবে মানববন্ধনের মাধ্যমে মিডিয়াতে প্রকাশ পেলে তিনি তাৎক্ষণাৎ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সরজমিন পরিদর্শনে যাওয়ার নির্দেশ দেন।ঈশানবালায় ইতোমধ্যে কয়েকশ’ বাড়ি ঘর, ১০/১৫টি দোকানপাট, মাছের আড়ৎ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে ঈশানবালার বাজার চরকোড়ালিয়া ও মনিপুর মুলাম বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈশানবালা বাজার এমজে এস বালিকা বিদ্যালয়, বাহের তদন্ত কেন্দ্র, টাওয়ার, মসজিদ, মাদ্রাসা বর্তমানে নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে।নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই ওই সব স্থাপনা নদীর গর্ভে চলে যাবে। এবং আরো শত শত পরিবার বাড়ি ঘরহারা হবে। কয়েক শ’ একর ফসলি জমি জমা বিলীন হবে।প্রাথমিকভাবে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রাথমিক বরাদ্দ পাওয়ায় ঈশানবালাবাসী অনেকেই আনন্দে আত্মহারা।তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারি কোরের মাধ্যমে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ ব্যবস্থার কাজটি করলে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পাদন হবে বলে মনে করেন।ঈশানবালা নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মোঃ সালাউদ্দিন সর্দার তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, আমরা ঈশানবালাবাসী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি ও হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারীর নিকট কৃতজ্ঞ। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করেছেন। তাই তাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি হাইমচরের মিডিয়াকেও ধন্যবাদ এবং আন্তরিক অভিনন্দন জানান।এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোঃ মিজানুর রহমান সর্দার বলেন, বরাদ্দকৃত টাকার কাজটি যেন সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় এ জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।যুবলীগ নেতা সউদ আল নাছের বলেন, ঈশানবালাবাসীর পক্ষে সর্বপ্রথম সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। এদিকে কাজটি যেন শতভাগই সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য তিনি অনুরোধ জানাই।ঈশানবালা বাজার কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম দেওয়ান বলেন, নদী রক্ষা চাই। এলাকায় লোক যাতে বাঁচতে পারে সেই জন্য নদী ভাঙ্গন কাজটি সুন্দরভাবে সম্পাদন করার জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা চান।মেম্বার খলিল মাতাব্বর বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কম হলেও তিনি এ কাজের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শতভাগ কাজ যাতে হয় সে জন্য অনুরোধ জানান।ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আল আমিন হাওলাদার ঈশানবালাবাসী প্রাণের দাবি ডা. দীপু মনি এমপি ও পানি বোর্ডের সুদৃষ্টি হওয়ায় তিনি তাদের প্রতি কৃজ্ঞতা জানান। এজেএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মুন্নাফ মাস্টার জানান, নদী ভাঙ্গন কাজটি শতভাগই সুন্দর ও সুষ্ঠু হবে বলে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি কামনা করেন।