বিসিআইসিসহ উর্ধতন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ- ছাতক সিমেন্ট কারখানায় মেরামত ও প্রতিস্থাপন কাজে অনিয়মঃ দেড়মাসে ৯কোটি টাকা গচ্ছা
নাজমুল ইসলাম, ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: ছাতক সিমেন্ট কারখানার এইচইসি কিলনের শেল, রোলার প্রতিস্থাপনসহ মেরামত কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে দেড়মাসে কোটি ৫৫লাখ টাকা গচ্ছা দিতে হয়েছে। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে শ্রমিক-কর্মচারিদের দেয়া লিখিত অভিযোগে জানা যায়, এইচইসি কিলনের শেল ও রোলার প্রতিস্থাপনসহ বিভিন্ন মেরামত কাজের চুক্তিনামা সূত্র নং- সিসিসিএল/পার/ওয়ার্কস/০১/২০১৩-১৪-১৫ইং সিপি-৩২/৪৪৭, তাং ২৭.০৯.১৪ইং অনুসারে গত ১৭.১২.২০১৪ইং ঠিকাদারী প্রতিষ্টান ক্যাথওয়েল্ড কনস্ট্রাকশনের অনুকূলে এইচইসি কিলনের শেল ও রোলার প্রতিস্থাপন এবং মেরামত কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়। চুক্তিনামার শর্তানুযায়ী ৮মাসের মধ্যে গত ১৬.আগষ্ট ১৫ইং কাজটি শেষ করে ক্লিংকার উৎপাদন শুরু করার কথা। কিন্তু যথাসময়ে কাজ শেষ না হয়ে ১৯সেপ্টেম্বর ১৫ইং পরীক্ষামূলকভাবে কিলন চালুর জন্যে ৮ঘন্টা গ্যাস পার্জিং করে কিলন রুটেশনে দেয়ার পর মারাত্মক ত্রুটি দেখা দেয়। যে কারণে কিলন চালু করা সম্ভব হয়নি। ২১সেপ্টেম্বর ১৫ইং পূনরায় কিলন রুটেশনে দিলে এসি ড্রাইভ-মোটরের ক্যাবল পুড়ে যায়। ২৩সেপ্টেম্বর ১৫ইং ক্যাবল পরিবর্তন করে ডিসি ড্রাইভ-মোটর দ্বারা ২৪সেপ্টেম্বর ১৫ইং কিলন রুটেশনে দিলে প্যানেল বোর্ডে ফলস সিগন্যাল এবং এমপিআর-৪৮০ থেকে ৫০০পর্যন্ত উঠানামা করতে থাকে এবং মোটর গরম হয়ে ট্রিপ করে কিলন বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে ডিসি ড্রাইভ মোটরের ক্ষমতা ১৪০কিলোওয়াট এবং সর্বোচ্চ এমপিআর-৩২৮। কিলন স্থাপনের পর হতে এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের কাছে হস্তান্তরের পূর্ব মুহুর্ত পর্য়ন্ত এ মোটর দ্বারাই কিলনটি সূষ্টুভাবে চলছিল। ২৫সেপ্টেম্বর ১৫ইং পূনরায় পার্জিং করে কিলন রুটেশনে দিলে পূর্বের ন্যায় এমপিআর উঠানামা করে এবং ৮ঘন্টা চলার পর মোটর গরম হয়ে ট্রিপ করে কিলন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে কিলনের নানাবিধ মেকানিক্যাল ত্রুটির ফলে এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, কিলনের শেল ও রোলার প্রতিস্থাপন এবং অন্যান্য মেরামত কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন না হওয়ায় কারখানাটি কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির কবলে পড়েছে। এছাড়া ৪নং ফাউন্ডেশনের টায়ার ও রোলারের ম্যাসিং এবং গিয়ার ও পিনিয়নের ম্যাসিং সটিকভাবে লাগানো না হওয়ায় এপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ৪নং ফাউন্ডেশন থেকে বার্নিং জোন পর্যন্ত কিলনের শেল বাঁকা থাকার কারনে মোটরে অত্যধিক চাঁপ সৃষ্টি হয়ে মোটর গরম হয় এবং এমপিআর উঠানামা করে এটি বারবার ট্রিপ করে এমন ধারণা অভিজ্ঞমহলের। ২৬সেপ্টেম্বর ১৫ইং হতে ২৯সেপ্টেম্বর ১৫ইং পর্যন্ত কিলনের এ্যালাইনমেন্টসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ইতোমধ্যেই ডিসি মোটরের জায়গায় প্রতিস্থাপনের জন্যে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মোটর চট্রগ্রাম হতে ৩০সেপ্টেম্বর ১৫ইং কারখানায় আনা হয়েছে।
কারখানার দক্ষ শ্রমিক ও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীদের ধারণা করছেন, কিলনের মেকানিক্যাল ত্রুটি নিরসন না করে, কেন এবং কি কারনে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মোটরটি স্থাপন করে কিলন চালানোর অপচেষ্টা চলছে তা- নিতান্তই রহস্যজনক। কিলনের মূল মেকানিক্যাল সমস্যা ধামাচাপা দিয়ে মোটরটি প্রতিস্থাপন করে কিলন চালানো হলে এতে মোটরের ক্যাবল পুড়ে যাওয়াসহ মেটাল বিয়ারিং দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত, গিয়ার ও পিনিয়নের ট্রিথ ভেঙ্গে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এইচইসি কিলনের শেল ও রোলার প্রতিস্থাপনসহ মেরামত কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগন কাজ চলাকালিন যথাযথভাবে মনিটরিং না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এর দায়-দায়িত্ব কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না। চুক্তি মতে ৮মাসের মধ্যে ১৬আগষ্ট ১৫ইং কিলন উৎপাদনে গেলে দৈনিক ২৫০ মেঃটন ক্লিংকার/সিমেন্ট উৎপাদন হতো। এসব উৎপাদিত সিমেন্টের বাজার মূল্য প্রতি মেঃটন ৭৬০০/-হিসেবে ৩০সেপ্টেম্বর ১৫ইং পর্যন্ত ৪৫দিনের (৭৬০০*২৫০মেঃটন*৪৫দিন)= ৮,৫৫,০০,০০০/-টাকা কারখানার আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এর দায়ভার কে বহন করবে? এপ্রশ্ন সর্বস্থরের শ্রমিক-কর্মচারির। বিপুল পরিমান টাকা ব্যয়ের পর শেল ও রোলার প্রতিস্থাপনসহ অন্যান্য মেরামত কাজ করার পরও কিলন উৎপাদনে না যাওয়ায় কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে বিসিআইসি প্রধান কার্যালয় হতে ৩সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করে কিলনের মেরামত কাজে মেকানিক্যাল ত্রুটি রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন। এইচইসি কিলনে নতুন গ্যাস ফ্লো মিটার স্থাপন করা হলেও মিটারে কেন রিডিং দেখা যাচ্ছেনা এবং মেরামত কাজে নানা অসংগতি ও ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য উক্ত কমিটি অসন্তোস প্রকাশ করেন।
শীঘ্রই কিলনের মেকানিক্যাল/আনুসাঙ্গিক যান্ত্রিক সমস্যা সমাধান কল্পে ব্যবস্থাসহ উৎপাদনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার অনুরুধ করেন শ্রমিক-কর্মচারি। গত ৬অক্টোবর ১৫ইং পর্যন্ত কিলনটি চালু না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্টান সুষ্টুভাবে কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে অক্টোবর মাসেই রহস্যজনকভাবে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। এখন কারখানার যাবতীয় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ কাজে ২০কোটি টাকা বরাদ্ধের সিংহভাগই দূর্নীতি ও নিয়মের মাধ্যমে ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে বলে আবেদনে বলা হয়। ##