খুলনা- মংলা -ঢাকা নৌ-রুটে ফের চালু হচ্ছে জনপ্রিয় স্টিমার সার্ভিস
এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা: দীর্ঘ ৪ বছর বন্ধ থাকার পর ফের চালু হতে যাচ্ছে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খুলনা- মংলা- মোরেলগঞ্জ -ঢাকা স্টিমার (রকেট) সার্ভিস। তবে প্রতিদিন নয়, পর্যাটন সার্ভিস হিসেবে সপ্তাহে মাত্র এক দিন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। আপাতত মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল দিয়ে নয়, স্টিমার চলবে সুন্দরবনের ভেতর দিয়েজয়মনিরঘোল-বগি হয়ে। বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিটিসি) কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নদীর নব্যতার অযুহাতে খুলনা-ঢাকা স্টিমার সার্ভিস বন্ধ করার পর থেকে বিকল্প নৌ-রুটে সার্ভিসটি চালু করার দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সরেজমিনে তদন্তপূর্বক সার্ভিসটি বিকল্প রুটে চালু করার পক্ষে মতামত দেয়া হলেও বিআইডব্লিটিসি’র পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিকল্প রুট হিসেবে স্টিমার সার্ভিস চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।ঞ্চ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদী পথে মালামাল ও যাত্রী পরিবহনের সুবিধার্থে ব্রিটিশ শাসনামলে সরকারিভাবে খুলনা-ঢাকা স্টিমার সার্ভিস (রকেট সার্ভিস) চালু হয়। পরবর্তিতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিআইডব্লিটিসি’র নিয়ন্ত্রণে নদীমাত্রিক, উপকূলীয় অঞ্চল ও কম ভাড়া হওয়ায় এ অঞ্চলে এই পরিবহন জনসাধাররণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
প্রথমে ‘ইন্ডিয়া জেনারেল নেভিগেশন এন্ড রেলওয়ে কোম্পানী’ নামে যাত্রা শুরু হয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের পর রেলওয়েকে পৃথক করে ‘পাকিস্তান রিভার স্টিমার সার্ভিস’ নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি দেশের অর্পিত সম্পত্তি এই প্রতিষ্ঠানে যুক্ত করে এক আদেশ জারির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা দেন। সেই থেকে বাংলাদেশ অভ্রন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিটিসি) নিয়ন্ত্রণে স্টিমার সার্ভিস চলাচল করে আসছে। বিগত ২০১১ সালের ১ অক্টোবর স্টিমারটি সর্বোশেষ ঢাকা থেকে খুলনায় আসে। এর পর হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া হয় শতাব্দী প্রচীন ঐতিহ্যবাহী স্টিমার সার্ভিসটি। বিআইডব্লিটিসি থেকে বলা হয় রামপাল-ঘষিয়াখালী চ্যানেলেঞ্চ নাব্যতার না থাকায় স্টিমার খুলনায় যাওয়া সম্ভব নয়।
এদিকে, জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহি স্টিমার সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ২০১১ মালের ২৮ এপ্রিল মংলা-জয়মনিরঘোল, বগি-সন্ন্যাসী-কাউখালী চ্যানেল দিয়ে সব ধরনের জলযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এই চ্যানেল দিয়ে স্টিমার সার্ভিসটি চলাচলের পরামর্শও দেয় নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ। এর পরও এই চ্যানেল দিয়ে স্টিমার চালু করা না হলে বিক্ষুব্ধ হয়ে এ অঞ্চলের জনসাধারণ। যার প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিসি ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর চ্যানেলটি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে তিন সদস্যে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যরা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে জাতীয় ও জনস্বার্থকে বিবেচনা করে প্রস্তাবিত চ্যানেল জয়মনিরঘোল-বগি-সন্ন্যাসী-কাউখালী হয়ে খুলনায় স্টিমার সার্ভির চলাচলের পক্ষে মতামত পেশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয় এই চ্যানেল দিয়ে স্টিমার সার্ভিসটি চালু করা হলে সুন্দরবন ভ্রমণ পিপাসু যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এর পরও চালু হয়না খুলনা-ঢাকা রুটের ঐতিহ্যবাহি স্টিমার সার্ভিসটি।
বিআইডব্লিটিসি একটি বিশ্বাস্ত সূত্র জানায়, চলতি বছর ১৪ জুলাই বিআইডব্লিটিসি’র যাত্রীবাহী নতুন জলযান ‘মধুমতি’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জরুরী ভিত্তিতে খুলনা-ঢাকা নৌ-রুটে মধুমতিসহ বন্ধ থাকা রকেট সার্ভিস চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রেক্ষিতে নৌ মন্ত্রণালয় বিআইডব্লিটিসি’র কার্গো প্রশাসনের মহা-ব্যবস্থাপক নুরুল আলম আকনকে আহবায়ক এবং বিআইডব্লিটি’র উপ-পরিচালক মহিউদ্দিন রতন, বিআইডব্লিউটিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সিরাজুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিকে সুন্দরবনের ভেরত দিয়ে বগি-জয়মনিরঘোল দিয়ে খুলনা-ঢাকা স্টিমার সার্ভিস চালু করা যায় কিনা সে বিষয়ে সমীক্ষা করার নির্দেশ দেয়। গঠিত কমিটি চলতি বছর ১১ আগস্ট কমিটি কোষ্টগার্ডের দ্রুতগামী একটি জলযানের সহযোগিতায় সরেজমিনে সার্ভে করেন। সর্ভে শেষে বর্গি-জয়মনিরঘোল দিয়ে সপ্তাহে একদিন পর্যটক সার্ভিস হিসেবে স্টিমার সার্ভির চালু করার মতামত পেশ করে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান পর্যটক সার্ভিস হিসেবে সপ্তাহে একদিন স্টিমার সার্ভিস চালু করা যেতে পারে মর্মে মতামত দেন। বিষয়টি এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে।এ ব্যাপারে বিআইডব্লিটিসির যাত্রী ও ফেরী বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, বগি-জয়মনিরঘোল হয়ে খুলনা-ঢাকা স্টিমার সার্ভিস চালু এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। চলতি মাসের যে কোন দিন স্টিমার সার্ভিস চালুর করার ঘোষণা আসতে পারে।