সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী আর নেই
সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। তিনি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ সোমবার সকালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবীর এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেতা শোক প্রকাশ করেছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সৈয়দ মহসিন আলীকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। নিউমোনিয়া ও কিডনির সমস্যাসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন মহসিন আলী। ওই হাসপাতালে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা চলাকালে ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হন মন্ত্রী। এরপর থেকে তাঁকে কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস (মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন) দেওয়া হচ্ছিল। পরদিন তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সৈয়দ মহসিন আলী ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রজীবনেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন সৈয়দ মহসিন আলী। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। সিলেট বিভাগ সি. এন. সি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। সম্মুখসমরে আহত হন। সৈয়দ মহসিন আলী আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। ছিলেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য। সিলেট জেলা ও বিভাগীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ মহসিন আলী আওয়ামী লীগের সাংসদ হন। ওই মেয়াদে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। সৈয়দ মহসিন আলী তিনবার মৌলভীবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা চেয়ারম্যান হন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজসেবায় অবদানের জন্য ভারতের আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি সৈয়দ মহসিন আলীকে ‘আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক ২০১৪’ প্রদান করে। ‘হ্যালো কলকাতা’ নামে কলকাতাভিত্তিক একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান তাঁকে ‘নেহেরু সাম্য সম্মাননা ২০১৪’ পুরস্কারে ভূষিত করে। সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী ও তিন মেয়ে আছে।