গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পাঁচ ব্যবসায়ী সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলন

eb89aa8213297d4ef0cd200727de364e-13বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপক কমলেও দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশের অনেক স্টিল রি-রোলিং মিল বন্ধ হয়ে যাবে। এ শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। আবার যখন দেশে বিদ্যুতের সংকট ছিল তখন সরকার ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে উৎসাহিত করেছে। ব্যবসায়ীরা ক্যাপটিভ পাওয়ারের মাধ্যমে নিজের শিল্পের চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতেন। এত দিন এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৪ টাকা ১৮ পয়সায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাস দেওয়া হলেও এখন দেওয়া হচ্ছে ৮ টাকা ৩৬ পয়সায়। এর ফলে কোটি কোটি টাকায় গড়া এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস হয়ে যাবে। এই দুই খাতসহ তিনটি খাতের পাঁচ ব্যবসায়ী সংগঠন রোববার সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছে। নেতারা বর্ধিত গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ডিপিডিসি, আরইবি এবং ডেসকোর বিদ্যুতের মূল্য সমান করার দাবিও জানিয়েছেন। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ক্যাপটিভ পাওয়ার প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। লিখিত বক্তব্যে অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসাদুল আলম বলেন, দেশের ইস্পাতশিল্পের বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৮০ লাখ টন। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে উৎপাদন হচ্ছে অর্ধেক, ৪০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশের চাহিদা হলো ৩০ লাখ টন। উদ্বৃত্ত থাকছে ১০ লাখ টন। ফলে এই শিল্পের উদ্যোক্তারা লোকসান গুনছেন। সরকারিভাবে নির্মাণকাজ তেমন না হওয়ায় ইস্পাতপণ্যের প্রধান ক্রেতাই বেসরকারি খাত। এ অবস্থায় বাসাবাড়ি ও শিল্পকারখানায় গ্যাস-সংযোগ বন্ধ রাখলে রডের ব্যবহার আরও কমে যাবে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে রডের দাম আরও বাড়বে। বিক্রিও কমে যাবে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বর্ধিত মূল্য কমানো না হলে দেশের ইস্পাতশিল্প হুমকির মুখে পড়বে। পর্যায়ক্রমে এসব শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে। স্থানীয় বাজার আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে। ফলে দেশ শিল্পবান্ধব না হয়ে বিদেশি পণ্যের একটি বাজারে পরিণত হবে। পরে মাসাদুল আলম বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করতে চাই না। কিন্তু আমাদের মিল-ফ্যাক্টরি যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কি আমরা ঘরে বসে থাকব। তবে সবার প্রথমে আমরা এফবিসিসিআই ঘেরাও করব। কারণ তারা এখনো কেন এটা নিয়ে মাঠে নামেনি।’ সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার গ্রুপের ইস্পাত ও নির্মাণসংক্রান্ত বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারের অদক্ষতা ঢাকার জন্যই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাদের সেই অদক্ষতা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা আসলে বাংলাদেশে অস্বাভাবিক ঘটনা না। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বলছে বিশ্ববাজারের চেয়ে দেশে গ্যাসের দাম অনেক কম। আমার দেশের সম্পদ গ্যাস আমি কেন আন্তর্জাতিক বাজার দরে কিনব। তাহলে কি আমি বাংলাদেশের সেকেন্ড সিটিজেন।’ বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের আগে ৪০০ মিল ছিল। গ্যাস-বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে ১০০-১৫০টি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আবারও দাম বাড়ানো হলো। আরও মিল বন্ধ হয়ে যাবে।’ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও মেট্রোসেম ইস্পাতের এমডি শহিদউল্লাহ বলেন, দেশের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ সিমেন্ট এখন দেশীয় বিনিয়োগে করা হচ্ছে। আবার রপ্তানিও হচ্ছে। কিন্তু বর্ধিত গ্যাস-বিদ্যুতের দামের কারণে এসব বন্ধ হয়ে যাবে। কম দামে সিমেন্ট সরবরাহও সম্ভব হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেসরকারি ক্যাপটিভ পাওয়ারে সরবরাহ করা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা হলেও সরকারিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। সেখানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস দেওয়া হচ্ছে ২ টাকা ৮২ পয়সায়। ফলে বেসরকারি ক্যাপটিভ পাওয়ারগুলো অসম প্রতিযোগিতায় টিকবে না। তাই আগের দামেই এখানে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. শাহজাহান, ক্রাউন সিমেন্টের এমডি আলমগীর হোসেন, বন্দর স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *