বাগেরহাটে সুদ কারবারীদের হুমকির মুখে ভাস্কর্য শিল্পীর আত্মহত্যা ; জনমনে ক্ষোভ
বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের চিতলমারীতে সুদের কারবারীদের হুমকির মুখে এক ভাস্কর্য শিল্পী আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে। এ করুণ মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কালশিরা গ্রামের হরিপদ মালাকারের পুত্র অজয় মালাকার বছর খানেক আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তার চিকিৎসার জন্য এলাকার কতিপয় সুদখোর মহাজনের কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য টাকা ধার আনেন তার পরিবার। এ অবস্থায় তিনি ভারতে চিকিৎসা নিতে গেলে এ সব সুদের কারবারীরা তার বড় ভাই রামকৃষ্ণ মালাকারের উপর এ টাকার জন্য চাপ দেন। তিনি বাড়ির বাস্তু ভিটা বাদে সমস্ত জমি-জায়গা বিক্রি করে ভাইয়ের দেনা পরিশোধ করলেও, এ সব লোকজন আরো টাকা দাবি করেন। এ টাকার জন্য তার বাস্তু ভিটা লিখে দিতে বলেন তারা। নইলে তাকে নানা ধরণের ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ বাড়ি থেকে তুলে নেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। এ ধরণের হুমকির মুখে রবিবার সকাল ১১টার দিকে সবার অলক্ষে রামকৃষ্ণ ঘরের আঁড়ায় ঝুলে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। বাড়ির লোকজন ঘরের আড়ায় তার লাশ ঝুলতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। তিনি এলাকার একজন ভাস্কর শিল্পী ছিলেন বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহতের কন্যা বিথী মালাকার আহাজারি করে বলেন, গত কয়েক দিন ধরে উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের সবুর শেখ, হানিফ শেখ, রফিক শেখ, মনোতোষ বালাসহ কয়েক জন তার বাবাকে সুদের টাকার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিল। এ সব লোকজনের হুমকির কারণে তার বাবা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন বিথী। তিনি চিতলমারী শেরেবাংলা মহাবিদ্যালযের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সুুদেকারবারীদের হুমকির মুখে তিনিও ঠিক মত কলেজে যেতে পারছেন না বলে জানান।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় এক শ্রেণীর সুদখোর মহাজন চড়া সুদে নীরিহ মানুষকে ঝৃণের জালে আটকে ফায়দা লোটাসহ নানা পন্থায় নির্যাতন করে আসছে। কখনও এ সব সুদখোর মহাজন বা এনজিওর ঝৃণের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে সস্তায় ভিটে-মাটি বেঁচে সপরিবারে দেশ ত্যাগ করে চলে গেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে চিতলমারী থানার ওসি মো. ইকবাল বাহার চৌধূরি দেনার দায়ে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আরও কোন কারণ আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে একটি অপমৃুত্যর মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। কারো বিরুদ্ধ আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।