বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে বাংলাদেশের পাট রফতানি বন্ধ

SAM_5548বেনাপোল প্রতিনিধি: ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হবার পর এবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট ও পাটজাতদ্রব্য রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। ভারত সরকারের বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপন জারির কারণে ওইদিন বিকাল ৩ টা থেকে বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে ভারতে পাট রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের পাট রফতানিকারকদের অভিমত, এই প্রজ্ঞাপনের কারণে বাংলাদেশের কাঁচাপাটের বাজারে ধস নেমে আসবে। বেকার হয়ে পড়বে লক্ষাধিক শ্রমিক।
ভারত সরকারের পাট মন্ত্রণালয় না থাকায় টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের জুট কমিশন সে দেশের পাট নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যার প্রধান কার্যালয় কলকাতার সল্টলেকে। ১০ সেপ্টেম্বর এই পাট কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে সে দেশে পাট আমদানিকারকদের জন্য কঠিন শর্তারোপ করেছে। এই প্রজ্ঞাপনের কপি বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টা নাগাদ বেনাপোল বন্দর বা হরিদাসপুরে ভারতীয় কাস্টম পেয়ে সেদেশে পাটের ট্রাক প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। ফলে পাট রফতানিকারকদের শতাধিক পাট বোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে গেছে।খুলনার অন্যতম পাট রফতানিকারক ঢাকা ট্রেডিং লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আলহাজ টিপু সুলতান স্বীকার করেন পাট রফতানি বন্ধের কথা। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ভারতের পাট কমিশন প্রজ্ঞাপন জারির পর বিকাল ৩ টা থেকে পাটবোঝাই কোন ট্রাক ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তিনি দাবি করেন, খুলনার পাট রফতানিকারকদের এক শত ট্রাক আটকা পড়ে গেছে। অনেক রফতানিকারক ট্রাক ডেমারেজের ভয়ে পাটবোঝাই ট্রাক ফেরত নিয়ে এসেছেন। জুট কমিশনের জারি করা প্রজ্ঞাপনের সাথে ভারতীয় আমদানিকারকদের নতুন ফরমেট করা ফরম দেয়া হয়েছে সেটি পূরণ করে নতুনভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে। যদিও সকল আমদানিকারকের আগে থেকেই আমদানি-রফতানি লাইসেন্স রয়েছে। এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, প্রতি চালান আমদানির পূর্বে কমিশন থেকে চালান হিসেবে এনওসি নিতে হবে। আলহাজ টিপু সুলতান জানান, বিশ হাজার বেল এলসির পাট ২/৩ শত ট্রাকের চালান ভারতে রফতানি হয়। এখন প্রতি চালানে এনওসি আনতে গেলে এলসির সময়সীমা পার হয়ে যাবে। একইভাবে বলা হয়েছে, ভারতে আমদানি করা পাট দিয়ে বস্তা তৈরি করা যাবে না। অথচ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যে পাট রফতানি হয় তা দিয়ে সে দেশের জুটমিলগুলিতে বেশির ভাগই বস্তা তৈরি করে থাকে। প্রবীণ পাট রফতানিকারক হারুন অর রশিদ জানান, ভারতের প্লাস্টিক তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা প্রভাব বি¯তার করে এই ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করাতে পারেন বলে তাদের ধারনা। তিনি বলেন, ভারতে পাট আমদানিকারকদের সাথে কথা বললে তারা মন্তব্য করেছেন, ভারত সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের পাটের বাজার অচল হয়ে পড়বে। অপরদিকে ভারতের কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। একইভাবে পাট চোরাপথে ভারতে পাচার হবে। তিনি জানান, প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ভারতে আমদানি করা পাট সে দেশে নেই এমন নিশ্চয়তা দেবার পরই ভারতে আমদানি করা যাবে। একইভাবে ভারতের জুট মিল ছাড়া কোন আমদানিকারক পাট মজুদ করতে পারবে না। বাংলাদেশ হতে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ লাখ বেল পাট রফততানি হত। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে চীন, পাকিস্তান ইউরোপ পাট আমদানি না করায় তা নেমে আসে ৮/৯ লাখ বেলে। যার ৮০-৯০ ভাগই ভারতে রফতানি হত, যা দিয়ে ভারতের জুট মিলগুলো বস্তা তৈরি করে থাকে। এই পাট রফতানি খাতে রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাংকগুলোর প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ শুধু খুলনায় রয়েছে। পাট রফতানিতে ধস নামলে সে খাতেও অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। আর এই পাট রফতানি খাতের সাথে এদেশের কৃষক ছাড়াও কয়েক লাখ শ্রমিক জড়িত। চলতি বছর পাট মৌসুম শুর হবার পর থেকে কাঁচা পাটের বাজার চাঙ্গা ছিল। বৃহস্পতিবার ভারত পাট গ্রহন করছে না শুনে শুক্রবার খুলনার দৌলতপুর মোকামে পাট কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগের ভারতীয় স্বরাষ্টমন্ত্রীর নির্দেশের ফলে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হয়ে গেছে। আর এ কারণে বাংলাদেশে গরুর মাংসর দাম বৃদ্ধি পেয়ে ২৮০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। পাট ব্যবসায়ীদের সাথে জড়িতদের অভিমত এ ব্যাপারে এখন বাংলাদেশের সরকারি ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় একদা সোনালী আশখ্যাত পাট শিল্পে আবারও ধস নেমে আসবে। এতে কৃষক পাটের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *