চাঁদপুর বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকের কান্ড! স্কুল ছাত্রীকে একাধিক বার ধর্ষণের ঘটনায় একাডেমি ভবন ভাংচুর ও বিক্ষোভ ॥ লম্পট মাষ্টার আটক
মোঃ জাবেদ হোসেন: চাঁদপুর শহরের বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের খন্ডকালীন সহকারী ইংরেজি শিক্ষক অঞ্জন কুমার দে (৩৬) স্কুল ছাত্রীকে একাধিক বার ধর্ষণের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাডেমিক ভবন ভাংচুর ও বিক্ষোভ করে ছাত্ররা। এই ঘটনায় মূল আসামী লম্পট অঞ্জন কুমার দেকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ১০ খিঃ সকাল ১১ টায় বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী প্রবাসী মেয়ে লম্পট শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এলাকাবাসী ও বিক্ষোভদ্ধ ছাত্ররা অভিযুক্ত অঞ্জন কুমার দের মালিকানাধীন শিলন্দীয়া গ্রামে বাবুরহাট মডেল একাডেমি ভাংচুর করে। খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি তদন্ত আরিচুল হক এস.আই সেলিম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত অঞ্জন কুমার দে এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেয়। ওসি তদন্ত আরিচুল হক অঞ্জন কুমার দের বাবা শ্রী নান্টু চন্দ্র ও তার ভাই সঞ্চয় দেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়ে আসার পথে হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে অবশেষে পথেই ছেড়ে দেয়। এই ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর মা বাদী হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে। চাঁদপুর মডেল থানার ওসি তদন্ত আরিচুল হক ও এস.আই জাহাঙ্গীর দক্ষতার পরিচয় দিয়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে পালাতক অঞ্জন কুমার দেকে দক্ষিন বালিয়া নাহা বাড়ি মন্দিদের পাশ থেকে মোবাইলে কথা বলার সময় আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, দাসশী গাজীর হাটের সৌদি প্রবাসী নাছির উদ্দিনের স্ত্রী ৩ বছর পূর্বে বাবুরহাট মডেল টাউনের সৌদি প্রবাসী স্বপন হাজরার মালিকানাধীন ৫ম তলা ভবনের ২য় তলায় বাসা ভাড়া নেয়। তার দুই মেয়ে বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজে লেখাপড়া করে। বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের খন্ডকালীন ইংরেজির সহকারী শিক্ষক শিলন্দীয়া গ্রামের বাবুরহাট কলেজের পিছনে শ্রী নান্টু চন্দ্র দের ছেলে অমল কুমার দে মডেল টাউনে প্রবাসীর বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে পড়াতেন। সেই সময়ে শিক্ষক ছাত্রীর মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। পড়ে অমল কুমার দের মালিকানাধীন বাবুরহাট মডেল একাডেমীতে নিয়ে স্কুল ছাত্রীকে পড়াশুনা করাতেন। সেখানে স্কুল ছাত্রীকে পরীক্ষা প্রশ্নপত্র দিবে ও পাশ করিয়ে দেওয়া প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। শিক্ষকের কথা মতো ছাত্রীকে প্রশ্ন পত্র না দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনাটি ও তার মায়ের কাছ থেকে হাওলাত বাবদ দেড় লক্ষ টাকা না দেওয়ায় বুধবার সকালে স্কুল ছাত্রী বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেনকে জানায়। অধ্যক্ষ জানতে পেরে অভিযুক্ত অঞ্জন কুমার দের মুঠোফোনে ফোন করে ঘটনাটি জানতে চায়। ধর্ষণের ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বুধবার দুপুরে অঞ্জন কুমার দে এক স্কুল ছাত্রের মাধ্যমে তার অব্যহতি পত্র স্বেচ্ছায় অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেনের কাছে পাঠিয়ে দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী ও তার মা লিখিতভাবে অধ্যক্ষের কাছে অভিযুক্ত অঞ্জন কুমার দের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই ঘটনা জানতে পেরে ছাত্ররা ও এলাকাবাসী অঞ্জন কুমার দে বাবুরহাট মডেল একাডেমি ভাংচুর করে ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ করে। ঘটনার পরেই চাঁদপুর মডেল থানার ওসি তদন্ত আরিচুল হক ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে। স্কুল ছাত্রীর ও তার মা মডেল থানায় এসে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর ওসি তদন্ত আরিচুল হক এস.আই জাহাঙ্গীর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তার লম্পট অঞ্জন কুমার দেকে ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি দক্ষিন বালিয়া নাহা বাড়ি মন্দিরের কাছ থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ধর্ষণের ঘটনাটি অন্য দিকে প্রভাহিত করার জন্য হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নৃত্রিবৃন্দরা ষড়যন্ত্র মূলকভাবে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত অঞ্জন কুমার দের বাবা নান্টু চন্দ্র ও ভাই সঞ্জয় দে জানায়, অঞ্জন কুমার দে বাবুরহাট স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে চাকরী করা অবস্থায় স্কুলের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাইভেট পড়তে বাবুরহাট মডেল একাডেমীতে আসে। অনান্য শিক্ষকরা প্রতি হিংসায় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য শাহ আলমের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘটনা রটিয়ে এই ঘটনা ঘটায়। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩ বছর পূর্বে খন্ডকালীন ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে অঞ্জন কুমার দেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি তার মালিকাধীন মডেল একাডেমীতে ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াতেন। সেখানেই এই ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে স্কুল ছাত্রী জানিয়েছেন। অমল কুমার দেকে মুঠোফোনে ফোন করে জানতে চাইলে সে ঘটনাটি মিথ্যে ও ষড়যন্ত্র মূলক বলে জানায়। বৃহস্পতিবার তিনি স্কুল ছাত্রের মাধ্যমে তার অব্যহতি পত্র পাঠিয়েছেন। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য শাহ আলম জানায়, স্কুলে এই ধরণের ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটেছে অঞ্জন কুমার দের বাবুরহাট মডেল একাডেমিতে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে। এখানে স্কুলের কোন শিক্ষক ষড়যন্ত্র করেনি। বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী জানায়, লম্পট অঞ্জন কুমার দে গত ছয় মাস আগে স্কুলের আরেক ছাত্রীর সাথে চাঁদপুর-ঢাকাগামী লঞ্চে আপত্তিকর অবস্থায় যাত্রীদের কাছে ধরা পরেছে। এসময় ২০ হাজার টাকা ও মুচলেখা দিয়ে রক্ষামিলে। চাঁদপুর মডেল থানায় নারী ও শিশু নিযার্তন আইনে অভিযুক্ত অমল কুমার দের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর অবশেষে পুলিশ তাকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।