সুন্দরবনে মাছ শিকারে ব্যবহৃত কীটনাশক সহ ৪ জেলে আটক বন বিভাগের হাতে বিষ মিশ্রিত মাছ পরীক্ষার উপকরণ নেই
বাগেরহাট প্রতিনিধি : পূর্ব সুন্দরবনে টোপ হিসাবে বিষ ব্যবহার করে মাছ ধরার সময় কীটনাশক সহ ৪ জেলেকে আটক করেছে বনরক্ষীরা । তাদের বিরুদ্ধে বন বিভাগীয় আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটককৃতদের আদালতে সোপর্দ্দ করা হয়েছে। বিষ মিশ্রিত মাছ পরীক্ষার কোন উপকরণ ও ব্যবস্থা বন বিভাগের নেই। অপরাধীদের ধরতে এ যন্ত্রটি জরুরী হয়ে পড়েছে।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহম্মেদ জানায়, বুধবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সুপতি স্টেশনের চাঁন্দেশ্বর ক্যাম্পের ওসি জুলফিকার আলীর নেতৃত্বে বনরক্ষীরা কাতলেশ্বর খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার সময় আঃ হক হাওলাদারের পুত্র মোঃ দুলাল, মোসলেম হাওলাদারের পুত্র মোঃ আলমগীর, ইউসুফ আলী খাঁর পুত্র মোঃ রফিক ও খোকন দাসের পুত্র মিঠুন দাসকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৫ কেজি মাছ, কীটনাশক (রিবকট) ১ বোতল ও একটি ট্রলার জব্দ করে। আটককৃতদের বাড়ি পার্শ্ববর্তী বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ও সায়রাবাদ গ্রামে। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীদের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাগেরহাট আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
এক সময়ের মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত এবং প্রজনন ও লালন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খাল। কিন্তু কতিপয় অসাধু জেলের কারণে সুন্দরবনের এ সুনামটি ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিণা খরচায় অধিক মুনাফার লোভে এক শ্রেণীর অসাধু জেলেরা অল্প সময় বেশি মাছ আহরণের জন্য বনের অভ্যন্তরে খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরে থাকে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত জেলেরা খালের শেষ মাথা থেকে ভাটির সময় বিষ ঢেলে দেয়। বিষাক্ত পানি যতদূর যায়, সেই পর্যন্ত ১ ঘন্টার মধ্যে পানিতে থাকা মাছ কিনারে লাফিয়ে ওঠে এবং পানিতে ভেসে ওঠে। খালের পানি কমলে তখন অসাধু জেলেরা সেই মাছ আহরণ করে। কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরার ফলে কোটি কোটি বিভিন্ন মাছের রেণু পোনা ও ডিম ধ্বংস হয়। যার কারণে পূর্ব সুন্দরবনে মাছের উৎপাদন পূর্বের তুলনায় বর্তমানে মারাত্মক ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
জানা যায়, এ কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এক দিকে যেমন পানিতে বিষাক্ততা দীর্ঘ দিন ধরে বজায় থাকে। অপরদিকে, এ বিষযুক্ত মাছ খাবার ফলে দীর্ঘ দিন ধরে মানুষের শরীরে এর প্রভাব থাকে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। পানিতে বিষ প্রয়োগের ফলে জীব-বৈচিত্রের জন্যও হুমকি স্বরূপ।
এদিকে সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা শরণখোলার জেলে মৎস্য ব্যবসায়ীরা চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন অফিসে গত ২৪ আগস্ট বিষ দিয়ে আর কেউ মাছ ধরবে না, ধরলে ধরিয়ে দেয়া হবে বলে পবিত্র ক্বোরআন শপথ করে বন কর্মকর্ত্তাদের আশ্বস্ত করেছে। সম্প্রতি বিষ দিয়ে মাছ ধরা প্রতিরোধে শরণখোলায় মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের সমন্বয়ে বিষ প্রতিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বিষ দিয়ে মাছ ধরার ঘটনা অনেকটাই কমে গেছে। এখন এই অনৈতিক কাজ করে কেউ রেহাই পাবে না। বিষ মিশ্রিত মাছ পরীক্ষা করার জন্য তাদের কাছে কোন উপকরণ না থাকায়, অনেক সময় অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। এই উপকরণ এখন জরুরী হয়ে পড়েছে।