যমুনায় অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি ভূঞাপুরে ১৫ হাজার পরিবার পানি বন্দি
মো. আল-আমিন খান: ভারতের আসাম থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে প্রবাহমান যমুনা নদীতে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫হাজার পরিবার এখন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। অথচ অভিযোগ রয়েছে পানিবন্দি পরিবারে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিচ্ছে না কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়রা জানান, গত চারদিন ধরে পানি বৃদ্ধি পেলেও মঙ্গলবার দুপুর পযন্ত যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৯সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলের অন্তত ৩০গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বন্যার আতঙ্কে ভুগছেন। সরজমিনে দেখা যায়, ভূঞাপুর উপজেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহমান যমুনা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪টি ইউনিয়নে প্রায় ১৫হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যায় আক্রান্ত পরিবারগুলো অসহায় হয়ে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে দিনআতিপাত করছে। এছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় তারা রান্না করা খাবার ক্ষেতে না পেরে শুকনা খাবার খেয়ে দিন পার করছে। এখন তারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আকুতি মিনতি শুরু করেছে। বন্যা আক্রান্ত এলাকাগুলো হলো উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের চর বলরামপুর, চর তাড়াই, চর কুঠিবয়ড়া, চুড়ানগর, অর্জুনা পশ্চিম, জগৎকুড়া উত্তর, জগৎকুড়া দক্ষিণ, চর বড়–য়া, কুমারপাড়া, শুশুয়া, বানিয়াবাড়ি, রাময়াইল, গোবিন্দপুর, খানকরাপাড়া, বাসিদিপকুল এলাকা, গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া, কষ্টা পাড়া, খানুরবাড়ি, জিগাতরা, এবং গাবসারা ইউনিয়নের সব কটি গ্রামে ৫/৬ফুট পর্যন্ত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও নিকরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে অন্তত ১৫হাজার পরিবার এখন পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এছাড়া উপজেলার হাজার হাজার একর আবাদি জমি বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে হয়ে গেছে এবং উপজেলা চরাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ডুকে পড়ায় সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করেছে কর্তৃপক্ষ। অথচ সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্য কোন কার্যকারি কোন ব্যবস্থা এবং সহায়তা প্রদান করা হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুদৃষ্টির অভাবে কুঠিবয়ড়া-জগৎপুরা বেড়ি বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় অর্জুনা, চর অর্জুনা ও চুকাইনগর এই দুইটি গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়াসহ ভূঞাপুর তারাকান্দী সি এ- বি পাকা সড়কটি হুমকির সম্মূখিন হয়ে পড়েছে। এই বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে যমুনা সার কারখানার সাথে ভূঞাপুর টাঙ্গাইল ও রাজধানী ঢাকাসহ উত্তর বঙ্গেরযোগাযোগই শুধু বিচ্ছিন্ন হবে না, বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হওয়াসহ ইতিপূর্বে স্থানাস্তরিত দ্বিতল ভবন শোভিত অর্জুনা মহসিন উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা ও একটি কলেজসহ নানা স্থাপনা, ঘরবাড়ী, গাছপালা রাতারাতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। হঠাৎ যমুনায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হলে এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি সত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় ইতোমধ্যেই বাঁধটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পাশাপাশি অর্জুনা, গাবসারা, নিকরাইল, গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চর অর্জুনা, চুকাইনগর, খানুবাড়ি, কুকাদাইর, ভালকুটিয়া, কোনাবাড়ি, পাটিতাপাড়া, বানতাইন, মাটিকাটা, বাসুদেবকোল, চরচুন্দনী, ভদ্র শিমুল, গোবিন্দপুর, বোরার বয়ড়া, মেঘার পোটলসহ অর্ধসহস্ব্রাধিক পরিবারকে ঘর বাড়ি হারাতে হয়েছে। এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন তিনি। খুব শ্রীগ্রই তাদের মাঝে ত্রান পৌচ্ছে দেওয়া হবে।