টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে উপনির্বাচনের আগাম হাওয়া বইছে
টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি: টাঙ্গাইল -৪ কালিহাতির সাংসদ জনাব আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী স্বেচ্ছায় সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ায় কালিহাতিতে উপনির্বাচনের আগাম হাওয়া বইছে। এর আগেও আওয়ামী লীগ থেকে লতিফ সিদ্দিকী কে বহিস্কারের পর একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। যারা সম্ভাব্য প্রার্থী তাদের সবাই সনাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা ও একজন নির্দলীয় প্রার্থী বলে শুনা যাচ্ছে। মোজাহারুল ইসলাম তালুকদারঃ কালিহাতি উপজেলা পরিষদের এই চেয়ারম্যান হলেন জনাব আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর অনুপস্থিতিতে দলের যেমন হাল ধরেছেন তেমনি ক্ষমতাও পেয়েছেন একচ্ছত্র। গত দুই যুগ যাবত কালিহাতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী এই নেতা নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করে একাধিকবার পরাজিত হলেও একবার তিনি চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ফেল করলেও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল হাজারী কে হতাশ করে তাকে উপজেলায় মনোনয়ন দেন। উপজেলা নির্বাচন শেষ হবার কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা ঘটিয়ে সরকার ও দল থেকে ছিটকে পড়েন মন্ত্রী। আসন্ন উপনির্বাচনে তিনিই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে থাকবেন বলে আওয়ামী লীগের মুল নেতৃত্ব মনে করে। কালিহাতি উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা মনে করেন দল তিকিয়ে রাখার স্বার্থে মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার কেই তারা এমপি দেখতে চান।
সোহেল হাজারীঃ তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন এই নেতা। অনেক দিন কালিহাতির বাইরে থাকা এই নেতা লতিফ সিদ্দিকির পতনের পর মাঠ দখলের চেষ্টা করলেও মোজহারুল ইসলাম তাকে মাঠে আসতে দেন নি। তারপর মাঠ দখলের চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। এখন এলাকার কোন ছোটখাটো অনুষ্ঠানেও দেখা যায় না সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান কে। তবে রাজনীতির মাঠের এক পরিক্ষিত সৈনিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক এবারের উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে শুনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এক প্রভাশালী নেতা বলেন, সোহেল হাজারী কে মনোনয়ন দিলে দলে বিভক্তির সৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্রে দল থেকে একাধিক প্রার্থী দেখা যেতে পারে যা দলের কাম্য নয়। তবে তিনি মনোনয়ন পেলে লতিফ সিদ্দিকীর সমর্থন পেতে পারেন বলেও কেউ কেউ মনে করেন।
আবু নাসেরঃ গত দুই বছর যাবত কালিহাতির পশ্চিমাঞ্চলকে টার্গেট করে সবচেয়ে বেশী প্রচার চালিয়েছেন এই নেতা। হটাত এলাকায় এসে বিপুল পরিমান টাকা পয়সা খরচ করে ব্যাপক আলোচিত হয়ে উঠলেও মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী প্রদান নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক অঘোষিত দন্দে জড়িয়ে যান তিনি। তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে এলাকা থেকে গুটিয়ে নেন নিজেকে। এর কারন উদ্ঘাতন করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি এলাকায় এখন আসেন না বললেই চলে। কিন্তু ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তিনি দলে সক্রিয় হয়ে উঠেন। এফবিসিসিআই এর পরিচালক এই বেবসায়ী নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগের বর্তমান উপজেলা সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম মেনে নিলেও আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা মেন নিবে না বলে কিছু কিছু নেতা উল্লেখ করেন। কারণ হসেবে তারা আবু নাসের সাহেবের বিএনপি জামাতের সাথে সখ্যতাকে দায়ী করেন। আব্দুল আলীমঃ যারা মনোনয়ন চাচ্ছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে তরুন এবং একমাত্র নির্দলীয় প্রার্থী তিনি। তরুন এই ববসায়ী কাজ করেন মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা নিয়ে। তার নেই কোন রাজনৈতিক পরিচয়। শিক্ষাকে টার্গেট করে কালিহাতির বিভিন্ন এলাকায় বিচরন করছেন কালিহাতিকে নিরক্ষর মুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে। বিভিন্ন শিক্ষামুলক অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতি লক্ষনীয়। আলোকিত কালিহাতী নামে একটি সংগঠন করে কিছু যুবক নিয়ে দিনের পর দিন বিভিন্ন শিক্ষামুলক কাজে নিজে যুক্ত রাখছেন। তিনি ইতিমধ্যে তরুন ও যুব সমাজের মধ্যে একটা গ্রহণযোগ্যতা আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন বলে অনেকের ধারনা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এর বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতার সাথে কথা বলে জানা যায় জনাব আব্দুল আলীম কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নন তবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করেন বলে মনে হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এর নেতাদের সাথে তিনি ভাল সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। এতদিন তার কোন রাজনৈতিক অভিলাষ বুঝা না গেলেও তিনি নির্বাচন করবেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে জানা যায়। তবে অনেকেই বলাবলি করছেন, যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে আসছে না এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতের তালিকা লম্বা হবে সেহেতু এই নির্দলীয় প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মাথা বেথার কারণ হয়ে উঠতে পারেন। যেহেতু তিনি সতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে শুনা যাচ্ছে সেহেতু তার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এক প্রকার নিশ্চিত। মনোনয়ন পত্র বাতিল না হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কারো নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা সেক্ষেত্রে আর থাকবেনা।
আনোয়ার হোসেন মোল্লাঃ তরুণদের পছন্দের এই নেতা এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে একটু ছিটকে পরেছেন লতিফ সিদ্দিকির মানুষ হওয়ার কারনে। তিনি এখন স্কুল, কলেজ, পেশাজীবি সংগঠনের কাজকর্মে বেশী মনযোগী। কালিহাতি উপজেলা পরিষদের এক সময়ের ভাইছ চেয়ারম্যান এখন প্রশাসন ও দলে পদহীন। লোকমুখে প্রচার আছে ঠান্ডু মিয়ার সাথে তার দিন ভাল যাচ্ছে না। তবে তিনি বৃহত্তর এলেঙ্গাতে তার অবস্থান ধরে রেখেছেন। সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন সব দল ও মতের মানুষের সাথে। আবু নাসের, আব্দুল আলীম সহ অন্যান্য নেতাদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বলে জানা যায়। তিনি কখনও নির্বাচন করবেন বলে প্রকাশে না বললেও লোকমুখে শুনা যায় তিনি দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন তবে দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিবেন। তার সরব উপস্থিতি আছে এলেঙ্গা অঞ্চলের বিভিন্ন সামাজিক, শিক্ষামুলক অনুষ্ঠানে।
সাবিনা ইয়াসমিনঃ তিনি হটাত উপনির্বাচনের হাওয়ায় সরব হন স্বামীর পরিচয়ে বেশী পরিচিত এই মহিলা নেত্রী। কিন্তু কিছদিন তাকে কোন ধরনের তৎপরতা চালাতে দেখা না গেলেও লতিফ সিদ্দিকির পদত্যাগের ঘোষণায় আবার সরব হতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নারী খমতায়নের তকমা ববহার করে তিনি আসতেই পারেন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ।