লোহাগড়ার ডিক্রীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়ের ভবন মধুমতী নদীতে বিলীন, ৫ বছর ধরে কোনো ঘর নেই
কাজী আশরাফ, লোহাগড়া (নড়াইল)প্রতিনিধি:নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের ডিক্রীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন মধুমতী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত পাঁচ বছর ধরে গোয়ালঘর, পোল্ট্রি খামারের ঘর ও খোলা আকাশের নিচে কোনোরকমে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে ৩৩ শতাংশ জমির ওপর ডিক্রীরচর গ্রামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান শিক্ষার্থী ২৪৭ ও শিক্ষক চারজন। ২০০৯ সালে বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের পাকা ভবন নদীগর্ভে চলে যায়। ওই বছর বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ৩০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ হয়। সেই টাকায় বিদ্যালয় মাঠের এক পাশে একটি ছাপরা তুলে চলতে থাকে বিদ্যালয়ের কাজ। সেটিও পরের বছর (২০১০ সালে) নদীতে চলে যায়। এরপর থেকে বিদ্যালয়ের কোনো জায়গা বা ঘর নেই। শুকনো মৌসুমে গ্রামের একটি বাঁশঝাড় তলায় ক্লাস নেওয়া হয়। সেখানে স্যাঁতস্যাঁতে, বৃষ্টি হলেই কাঁদা হয়। আশপাশের বাগান থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। শৌচাগারের কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই খাবার পানির ব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে কিছুদিন একটি পোল্ট্রি খামারের ঘরে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। চলতি বর্ষায় একাধারে বৃষ্টি যখন, সে সময় একটি গোয়াল ঘরে চলেছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। রাতে সেখানে গরু থাকে। দিনে পরিষ্কার করে ক্লাস নেওয়া হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ডিক্রীরচর গ্রামে এ বিদ্যালয়। রাস্তার পাশে শক্ত মাটির উঁচু ফাঁকা জায়গা। সেখানে গাদাগাদি করে বস্তা ও মাদুরে বসে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সহকারী শিক্ষক সেলিনা পারভীন বলেন, ‘কয়েকদিন বৃষ্টি না থাকায় এখানে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় উপকরণ ব্যবহার করা যায় না। শিক্ষার্থীদের নিচে বসে লিখতে-পড়তে সমস্যা হয়। শীতকালে কুাঁয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস। শৌচাগার ও খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। বিদ্যালয়ের ফাইলপত্র, চক-ডাস্টার ইত্যাদি ব্যাগে ভরে বাড়িতে নিতে হয়। এভাবে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে।’ পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল আমিন বলে, ‘সামনে সমাপনী পরীক্ষা। এ অবস্থায় খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’ অভিভাবক মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘নাতি-পোতারা বৃষ্টির জন্যি স্কুলে আসে না। বাড়িতে প্রাইভেট দিছি।’ প্রধান শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জানান, ৬২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের জন্য নতুন একতলা ভবন নির্মাণ গত অক্টোবর মাসে শেষ হয়েছে। চেয়ার, বেঞ্চ এবং অন্যান্য আসবাবও তখন এসেছে। যিনি বিদ্যালয়ের জন্য ৩৩ শতাংশ জমি দান করেছিলেন, শরীকানা সম্পত্তি হওয়ায় মালিকানা জটিলাতায় তিনি ওই জমি লিখে দেননি। তাই গত নয় মাসেও ওই ভবনে ওঠা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জামাল শেখ বলেন, ‘আমরা গ্রামবাসী চেষ্টা করেও ওই ভবনে ওঠার ব্যবস্থা করতে পারিনি। তাই প্রায় পাঁচ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত ডিক্রীরচর গ্রামের নদীভাঙন কবলিত এ মানুষগুলো কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।’ লোহাগড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে গত ৩০ জুলাই উপজেলা মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভাও আলোচনা করা হয়েছে হয়েছে। সমাধানের চেষ্টা চলছে। এখনও সমাধান হয় নাই।”