খুলনা জেনারেল হাসপাতাল চিকিৎসা দেওয়ার প্রধান পদ গুলো শুন্য সঠিক সেবা পাচ্ছে না খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলো
বি, এম, রাকিব হাসান : খুলনা মহানগরীর প্রধান হাসপাতল গুলোর মধ্যে খুলনা জেনারেল হসপিটাল একটু কোন দুর্ঘটনা হলে প্রথমে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র, হত দরিদ্র এই বিপুল সংখ্যক জনগন ছুটে যায় এই হাসপাতালে। দুর্ঘটনা বা প্রতিপক্ষের হামলায় আহতই শুধু নয়, যে কোন ধরনের টিউমার বা অন্য কোন অপারেশনের জন্য সার্জারী বিভাগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিভাগেরই কনসালটেন্ট পদটি শূন্য রয়েছে দীর্ঘ চার বছর। একই অবস্থা আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড চক্ষু বিভাগেও। এমনিভাবে মেডিসিন, রেডিওলজি ও প্যাথলজি বিভাগেও রয়েছে চিকিৎসক সংকট। জরুরী বিভাগের চারটি পদের সব ক’টিই শূণ্য। একজন ধার করা চিকিৎসককে দিয়ে চালানো হচ্ছে জরুরী বিভাগ। রেডিওলজিষ্ট না থাকায় এক্স-রে রিপোর্ট করছেন টেকনিশিয়ান। এভাবেই নানা সংকটের মধ্যদিয়ে চলছে খুলনার গুরুত্বপূর্ণ ও জেলার ঐতিহ্যবাহী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান খুলনা জেনারেল হাসপাতাল। দেড়শ’ বেডের এ হাসপাতালটি আড়াইশ’ বেডে উন্নীত করার জনদাবি থাকলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এটির ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন বলেই মনে হচ্ছে। আবার রাজনৈতিক কারণে অনেক অভিজ্ঞ চিকিৎসককে বদলী করা হলেও খুলনার রোগীরা হচ্ছে সেবা বঞ্চিত। যা’ নিয়ে এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিদেরও যেন নেই কোন ভাবনা।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, জেনারেল হাসপাতালের পুরাতন তিন তলা ভবনের একটি কক্ষেই রয়েছে সার্জারী, অর্থো, মেডিসিনসহ ৫টি ওয়ার্ডের রোগী। নতুন ভবনের তৃতীয় তলায়ও অর্থো, চক্ষু, ইএনটি বিভাগের মহিলা রোগীদের অবস্থান করতে হয় এক সাথে। সেখানে দরজা থেকে ঢুকেই দেখা গেল এক চোখের অপারেশনের রোগীকে। তেরখাদা থেকে আসা ৭০ বছর বয়সী রুইজান নামের ওই রোগীই শুধু নয় এভাবে অনেক স্পর্শকাতর রোগীকে থাকতে হয় একই সাথে।
হাসপাতালের মধ্যবর্তী জায়গায় ১৯৩৫ সালে স্থাপিত ভবনটি গণপূর্ত বিভাগ থেকে আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নোটিশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তার পরেও সেখানে ঝুলছে দু’টি সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড। একটি জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী অপরটি সদর আরবান ডিসপেনসারী। এর পশ্চিম পাশের অপর পরিত্যক্ত ভবনটিতেও ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী। ভবন সংকটের কারনে বহির্বিভাগের ডাক্তার বসছেন রান্না ঘরে। কেবিনের উপর দিয়ে যেমন পানি পড়ছে তেমনি একটি কেবিনের সামনে নোটিশ ঝুলিয়ে বলা হয়েছে ‘কেবিন নষ্ট’। এক্স-রে কক্ষেও পানি পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের এমন সংকটের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি সংকট জনবলের। শুধুমাত্র নার্স ছাড়া এ হাসপাতালে সকল প্রকার জনবল সংকট রয়েছে। হাসপাতালের দেয়া তথ্য মতে গাইনী, এ্যানেসথেসিয়া, প্যাথলজি ও ইএনটি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্টের পদ শূন্য রয়েছে। সার্জারী বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্টকে বিগত চার বছর আগে রাজনৈতিক কারনে বদলী করা হলেও এখনও সে পদটি শূন্য অবস্থায় রয়েছে। সহকারী রেজিষ্টারের দু’টি পদও শূন্য। সম্প্রতি খুলনার একটি উপজেলা থেকে সার্জারী ওয়ার্ডের জন্য একজন সহকারী রেজিষ্ট্রারকে আনা হয়েছে কিছুদিনের জন্য। তিনি চলে যাওয়ার পর কি হবে তার কোন উত্তর নেই হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত খোদ খুলনার সিভিল সার্জনের কাছেও।
জনবলসহ ভবন সংকটের কথা উল্লেখ করে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ ইয়াছিন আলী সরদার জানান, ৩৪টি কনসালটেন্ট পদের মধ্যে বর্তমানে ১১টিই খালী রয়েছে। প্রতি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ ব্যাপারে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল পরিদর্শনও করে গেছেন। সার্কিট হাউজে ব্যক্তিগতভাবেও সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু কোন ফল হচ্ছে না। ভবন নির্মানের বিষয়টি রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিতলার জালে আটকা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত তৎপরতা বাড়ানো হলে হয়ত সংকট দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হত বলেও তিনি মনে করেন। হাসপাতালের সার্বিক বিষয় সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখে গেছেন খুলনার জনপ্রতিনিধিবৃন্দ। তবে সুধু কি পরিদর্শন করে খ্যান্ত হবেন তারই জানার বিষয়। কবে পাবে সঠিক সেবা সাধারণ জনগন ?