টিপ টিপ বর্ষায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে
বি, এম, রাকিব হাসান : মৌসুমী নিম্নচাপের প্রভাবে গত ৬ দিনের টানা বর্ষনে সমগ্র উপকূল ও দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। যাতায়াত ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে বীজতলা ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে, মাছের ঘের ভেসে গিয়েছে, কোথাও কোথাও ঢেউয়ের তোড়ে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে. পণ্য চলাচলে ব্যঘাত ঘটছে এবং সর্বোপরি দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের কাজ না থাকায় আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। চাষীরা তাদের কৃষি কর্ম আর ফসল নিয়ে রয়েছেন দারুন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে। উপকুলে তিন নং সতর্ক সঙ্কেত থাকায় মংলা বন্দরে কাজকর্ম বন্থ রয়েছে।
খিছু কিছু জেলার/এলাকার পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ নিচে উপস্থাপন করা হল।
বেশী সমস্যায় পড়েছে শিশুরা , শিশু খাদ্য ও গো খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সব মিলিয়ে প্লাবিত এলাকার মানুষের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এদিকে খুলনা পাইকগাছা সড়কের উপর পানি ওঠায় ও রাস্তা সংস্কারের অভাবে ছোট বড় গর্ত হওয়ায় যে কোন সময় সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে ঈদ ও পূজায় ঘরে ফেরার মানুষ সহ দূর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজার হাজার পথযাত্রী । প্লাবিত এলাকায় নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় নেই। অনেকে আবার খোলা আকাশের নিচে উচু যায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। পুটিমারি গ্রামের সবুর আলী (৬৫) সহ এলাকার অনেকেই জানান এখনও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়নি । প্রতিদিন বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রাম। আমাদের নেই তেমন কোন ত্রাণের ব্যবস্থা,পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি । ছেলে মেয়ে স্কুলে যেতে পারছেনা। অভিভাবকেরা সবাই বেকার হয়ে বাড়িতে আছে। হাতে কোন কাজ নেই , ত্রাণের অপেক্ষায় চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকতে হয়, কখন আসবে একমুঠো ত্রাণ, কখন দিবো পরিবারে মুখে একমুঠো অন্ন।
আশাশুনি উপজেলার সকল ইউনিয়নের ঘর-বাড়ি, খাল-বিল-পুকুর, মাছের ঘের বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে গেছে। আমন ধানের চাষ অসম্ভব হয়ে পড়তে যাচ্ছে, কোটি কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ভেসে গেছে, অসংখ্য মানুষ আশ্রয়হীন হতে বসেছে।
একাধারে টিপ টিপ বৃষ্টি ও মাঝে মধ্যে মুষুল ধারা বৃষ্টিপাতের ফলে উপজেলার এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েনি। অনেকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদে উঠতে বাঁধ্য হয়েছে। সকল বিলে ধানের বীজতলা, অনেকের রোপণকৃত ধানের চারা পানির নিচে থাকায় পঁচে গেছে। চাষীদের মধ্যে হাহাকার শোনা যাচ্ছে। উপজেলার সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়ে থাকে বড়দল ইউনিয়নে। এখানে কোন লোনা পানির মাছের ঘের নেই। প্রচুর বৃষ্টিতে বড়দলের ধানচাষ মাটিতে মিশে গেছে। বড়দল, মাঝেরডাঙ্গা, মধ্যম বড়দল, ফকরাবাদ, জামালনগর, গোয়ালডাঙ্গা গ্রাম এলাকা সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ মানুষের বাড়িঘর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। একটুকরো জমি অবশিষ্ট নেই যেখানে ধানের চাষ সম্ভব হবে। মানিকখালী-বড়দল সড়কের বহু স্থানে ভেঙে পানি সরবরাহ করছে। একস্থানে পুরাপুরি পাকা রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্দের উপক্রম হয়েছে। মোটরসাইকেল চালকরা কোন রকমে ৪হাত গর্তে নেমে চলাচল করছে। বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম সানা জানান, ৫/৭ শ’ ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে, প্রায় অর্ধশত ঘর ভেঙে গেছে। ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর স্থানীয় মানুষের তাৎক্ষণিক প্রচেষ্টায় রক্ষা হয়েছে।
উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জেলেপাড়ার কাছে শতাধিক হাত ও চণ্ডিতলার কাছে ৫০ হাত বাঁধ বড় ধরনের ফাটলে হুমকিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এলাকার জনগণ বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা চালালেও শেষ রক্ষা নিয়ে তারা সন্ধিহান। এখানে এখুনি কাজ করা না হলে বর্ষা মৌসুমে দুর্ঘনার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলেখালী, বলাবাড়িয়া, কোলা-ঘোলা, বামনডাঙ্গা ওয়াপদার বাঁধ, আনুলিয়া, খাজরা, প্রতাপনগর, কাদাকাটি, কুল্যা ইউনিয়নে একাধিক স্থানে ভেড়ী বাঁধের অবস্থা আশ´খা গ্রস্থ। এসব জায়গার কয়েক স্থানে ভাঙ্গন ও ফাটলের ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকার মানুষ বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও কপোতাক্ষের উপছে পড়া পানিতে পাটকেলঘাটার বিস্তর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের নওয়াপাড়া ও বিনেরপোতা নামক স্থানে পানি দ্রুত বেগে যাওয়ার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্নর পথে। বন্যা দূর্গত এলাকার লোকজন বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, রাস্তার উপর আশ্রয় নিয়েছে। এপর্যন্ত আশ্রয় শিবিরগুলোতে সরকারিভাবে ত্রান পৌছায়নি।