অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেনা লোহাগড়ায় নির্যাতিত গৃহবধু ববিতা

Lohagara pic 24 07 15কাজী আশরাফ,লোহাগড়া (নড়াইল) : অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেনা নড়াইলের লোহাগড়ায় নির্যাতিত গৃহবধু ববিতা। উন্নত চিকিৎসার অভাবে শরীরে আঘাতের স্থানে দেখা দিয়েছে চুলকানী আর ক্ষত। নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও শারীরিক উন্নতি ঘটছে না। হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ জয়ন্ত কুমার পোদ্দার ববিতাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা খুলনায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ অবস্থায় ববিতার পরিবার চিন্তিত হয়ে পড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উন্নত চিকিৎসা ও সংসার বাঁচাতে ববিতা একটি চাকুরীর আকুতি জানিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার চিকিৎসার জন্য যে পরিমাণ অর্থের দরকার, তা আমার কৃষক বাবার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। গতকাল শুক্রবার দুপুরে এড়েন্দায় ববিতার বাড়িতে তার জীবনযাত্রার খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে দেখা যায়, ঘিঞ্জি পরিবেশে ঘরের বারান্দায় বসে আছে ববিতা। কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করতেই ববিতা বলেন, স্নাতক প্রথম বর্ষের ফরম পূরণ করেছি। কিন্তু শরীর ভালো না থাকায় পড়ালেখা করতে পারছি না। গত ১৩ জুন হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসার পর প্রায় বমি হচ্ছে।
পুলিশী নিরাপত্তায় গতবারের থেকে এবার ববিতার ঈদ কেটেছে ভিন্নভাবে। কেউ খোঁজ নেয়নি তার। অর্থাভাবে ঈদে নতুন জামা কাপড়ও ছিল না। পুরাতন কাপড়েই ঈদ কেটেছে ববিতার। ঈদে আর্থিক সাহায্য দেয়নি কেউ বলে কেঁদে ফেলেন ববিতা। ববিতা আরও জানান, আমি আর দশটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাই।
মেয়ের সম্পর্কে পিতা মোঃ ইসমাইল মোল্যা বলেন, ববিতা আমার আদরের ধন। তিনি আরও বলেন, ওর ইহকালও গেল, পরকালও গেল। আপসোস এটাই-আমি মরে গেলে ও’কে দেখার কেউ থাকবে না। সরকার ইচ্ছে করলে,আমার মেয়েকে একটা চাকুরী দিয়ে পূণর্বাসন করতে পারে।
ববিতার বাড়িতে তার ও তার পরিবারের নিরাপত্তায় থাকা এএসআই আব্দুল মতিন বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে আমরা ২৪ ঘন্টা এখানে অবস্থান করছি। কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশী নিরাপত্তা অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ এপ্রিল সকাল ৭ টার দিকে ববিতার স্বামীসহ শশুরবাড়ির লোকজন ববিতাকে গাছের সাথে বেঁধে বেধড়ক লাঠিপেটা করলে ববিতা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। খবর পেয়ে লোহাগড়া থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পরে আহত ববিতাকে তার পরিবার নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় ববিতার মা খাদিজা বেগম বাদি হয়ে ৭ জনকে আসামী করে ৫ মে লোহাগড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন( মামলা নং-০৭,তারিখ ০৫/০৫/১৫)। এ ঘটনার সচিত্র প্রতিবেদন সংবাদপত্রে প্রকাশের পর ১০ মে রবিবার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আইনজীবী মনজিল মোরশেদের এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো: সাইফুর রহমানের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশের পর পুলিশ সব আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। বর্তমানে ওই মামলার ৭ আসামীর মধ্যে স্থানীয় আ’লীগ নেতা আজিজুর রহমান আরজু গত ২ জুন থেকে জামিনে আছেন। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুল গত ২০ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *