জলাবদ্ধতা নিরসনের খুলনায় ২২ খাল এখন দখলদারদের দখলে
বি, এম, রাকিব হাসান : খুলনা মহানগরীর প্রধান জলাবদ্ধতা নিরসনের একমাত্র মাধ্যম খান এখন দলখদারেরা ইচ্ছা মত দখল করে ঘের ব্যবসায় লিপ্ত। সাধারণ জনগন জানতে চাইলে তাদের বলা হচ্ছে উপর থেকে পাশ আনা হয়েছে। খুলনামহানগরির পাশদিয়ে প্রবাহিত ২২টি খালই এখন চরম দুর্দশার ও যন্ত্রনার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। ২২ খালের মাধ্যমে মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন হতো। বর্তমানে প্রভাবশালীদের দখল বাণিজ্যের কারণে খালগুলোর আয়তন এখন আর নেই বললেই চলে। এরমধ্যে ৫টি খালের অবস্থা আরো করুন। এসব খাল দিয়ে মহানগরীর পানিবন্ধতা দুর করার যাচ্ছে না। ফলে বর্ষা হলেই মহানগর খুলনার প্রায় সকল রাস্তা-ঘাটে দু/আড়াই ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। স্থায়ী হচ্ছে জলাবদ্ধতা। যার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না মহানগরীর ১৬ লাখ মানুষ। পানিবন্ধ হয়ে পড়ছে তারা।
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)’র সুত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে ২২টি খাল। অতীতে এসব খালগুলোতে নৌকা চলতো। দু’পাশে ছিল সবুজ প্রকৃতি। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখল বাণিজ্যে খালগুলো এখন রুগ্ন, অনেকটা মৃতপ্রায়। ২২টি খালের মধ্যে পাঁচটির অবস্থা করুণ।
কেসিসি’র সূত্রমতে, গোড়া খাল (লবণচরা খাল)’র দৈার্ঘ প্রায় দু’কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৪০ থেকে ৫০ ফুট। দু’পাশের অধিকাংশ জায়গা দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় ৪৫ ব্যক্তি খালের জমিতে পাকা, কাঁচা, আধাপাকা স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছেন। ১৯৯০ সালে লবণচরা এলাকার প্রভাবশালী আব্দুল মালেক খালটির ইজারা নেন। তাঁর মৃত্যর পর খালটির দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তি খালের বিভিন্ন অংশ দখল করে প্লট তৈরি করে মানুষের কাছে বিক্রি করেছেন। এরমধ্যে আব্দুল মতিন, আব্দুস সালাম ও আব্দুর রহমান দাবি করেন, তারা আব্দুল মালেকের আত্মীয় সেকেন্দার মুহুরির কাছ থেকে খালের জমি কিনে বসবাস করছেন। তাদের কাছে জমির দলিলপত্র আছে। ১৯৯৯ সালে কেসিসি অবৈধভাবে খালটির লবনচরা এলাকায় ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় ও নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রের ভবন নির্মাণ করেছে।
এদিকে, মান্দার খাল নগরীর বানরগাতি আল-আমিন মহল্লা দিয়ে ঢুকে শ্মশান ঘাটের পাশ দিয়ে ময়ূর নদে মিশেছে। এর দৈর্ঘ দু’কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৫০ থেকে ৬০ ফুট। এর প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে। মান্দার খালের বিশাল অংশ দখলে নিয়েছেন ১৩ জন। তারা হলেন, বন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা শাহজাহান, স্থানীয় বাসিন্দা যশুয়া পাটোয়ারী, মোহন বাড়ৈই, চান মিয়া, বজলুর রহমান, হক বেপারী, রফিকুল ইসলাম, মকবুল হোসেন, মোস্তফা, মাহমুদা, হাবিউল্লাহ ও মাহবুব মোর্শেদ। দখলদারদের বিরুদ্ধে কেসিসি উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু তারা কেসিসির বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালত উচ্ছেদের বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এ বিষয়ে শাহজাহান দাবি করেন, খাল দখলের অভিযোগ সঠিক নয়। এ জমি নিয়ে মামলা চলছে।
অপরদিকে, চার কিলোমিটার দীর্ঘ গল্লামারী নর্থ ব্যাংক খালটি নগরীর ফারাজী পাড়া ও ময়লাপোতা মোড় থেকে গল্লামারী সেতুর পাশে ময়ূর নদে মিশেছে। এর প্রস্থ ২০ থেকে ২৫ ফুট। দীর্ঘদিন খালের দু’পাশ দখল হয়ে প্রস্থ ৫ থেকে ১০ ফুটে নেমে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দা জলিল তালুকদার, মো. নূর, মো. ইউসুফ, কাশেম সরদার, বক্কার, ওয়াহিদুজ্জামান ও আবু সাঈদসহ কয়েকজন খালের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এ বিষয়ে জলিল তালুকদার, ওয়াহিদুজ্জামান ও বক্কার দাবি করেন, তাদের কাছে জমির কাগজপত্র আছে। তারা বৈধভাবে ঘর বাড়ি বানিয়েছেন। এ খালে স্থাপনা নির্মাণ করায় বানরগাতি, পশ্চিম বানিয়াখামার, বসুপাড়া, ইকবাল নগর, সোলায়মান নগর ও ফারাজীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হলে পানি নামতে পারে না। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
একই ভাবে হরিণটানা নারকেলবাড়িয়া খালটি নগরীর হরিণটানা এলাকা দিয়ে নিরালা দিয়ে ময়ূর নদে মিশেছে। এর দৈর্ঘ্য তিন কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬০ ফুট। এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি খালের জায়গা দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন খলিলুর রহমান, ক্লিপ অধিকারী, শহিদুল, আব্দুল মান্নান, সাহেব আলী, বাদল, চপল ও হেকমত। অপরদিকে, খুলনা শিপইয়ার্ডের উত্তর পাশ দিয়ে রূপসা নদী দিয়ে বের হয়ে নগরীর ২৮নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম টুটপাড়া ছড়িছড়া খালের সঙ্গে মিশেছে মতিয়াখালী খাল। এ খালের জায়গা দখল করে পশ্চিম টুটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। এর বিভিন্ন অংশে বাঁধ বা পাটা দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া খালের ওপর কেসিসি রাস্তাও নির্মাণ করেছে। খালের উভয় পাশের বাসিন্দারা অবৈধভাবে জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এ খালটির দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার ও প্রস্থ ৫০ থেকে ৬০ ফুট। তবে দখলের কারণে এখন খালটির বিভিন্ন স্থান সরু নালায় পরিণত হয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এখন খালের জমি নিজেদের বলে দাবি করছেন।
কেসিসি’র এস্টেট অফিসার নূরুজ্জামান তালুকদার বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভূয়া কাগজপত্র বানিয়ে খালগুলো দখল করে রেখেছে। তবে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য তালিকা তৈরি করে দখলদারদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবেও জানান তিনি। যদি এই উদ্যোগ বাস্তাবায়ন হয় তাহলে খুলনার ১৬ লাখ মানুষের একটু হলেও নিস্তার পাওয়া যাবে।
বি, এম, রাকিব হাসান
খুলনা ব্যুরো
২৩/০৭/১৫ ইং