সুন্দরবনের বাঘ এখন নেই বললেই চলে ৫ বছরে বিলুপ্তির আশঙ্কা

বি, এম, রাকিব হাসান,খুলনা ব্যুরো: বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রধান পশু এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, খাদ্যাভাব, রোগাক্রান্ত ও শিকারীদের কারণে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমছে। গত কয়েক বছরে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ৬৯ শতাংশ কমেছে। তবে ভারতের অংশে বেড়েছে ২৫ শতাংশ। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পাঁচ বছরের মধ্যে সুন্দরবন থেকে বাঘ বিলুপ্ত হবে। বন বিভাগ ও বাংলাদেশ বন্য প্রাণি ট্রাস্ট্রের এক জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, উজানের দেশ ভারতে আন্তঃসীমান্ত গঙ্গা ও অন্যান্য নদীর পানি আটক ও সরিয়ে নেয়ার ফলে সুন্দরবনের মধ্যকার পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বনের গাছগুলো কিছুটা লবণ সহনশীল হলেও অতিরিক্ত লবণ বনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্যানেলের চতুর্থ প্রতিবেদন মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ২৮ সেন্টিমিটার বাড়লে বনের অনেক কিছুর সাথে রয়েল বেঙ্গল টাঈগারও বিলুপ্ত হবে। বাংলাদেশের সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডাব্লিউ এম’র মতে, দেশের ১৪টি উপকূলীয় শহর জলোচ্ছাসের হুমকির মুখে রয়েছে। জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে চোরা শিকারিদের তৎপরতাও বেড়েছে। সুন্দরবন উপকুলীয় বাসিন্দারা বলেছে, ২০১৩ সালে বন থেকে বাঘের শাবেক পাচার হওয়া মামলা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। গেল পাঁচ বছরে আইন-শৃংখলা রক্ষাবাহিনী খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এলাকা থেকে পাঁচটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে। সুন্দরবন বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, বাঘ না থাকলে বনের জীব বৈচিত্র থাকবে না। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চেয়ে বাঘ শিকারি ও মানবসৃষ্ট কারণ রয়েল বেঙ্গল টাঈগারের জন্য এখন বড় হুমকি। বাঘের বিচরণ ক্ষেত্র সাতক্ষীরা রেঞ্জ, কচিখালি, কটকা, চান্দেশ্বর, কুকিলমুনি ও শাপলা খালিতে শিকারিদের তৎপরতা বেশি। এসব স্থানে বাঘের চলাচল কমে গেছে। বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও প্রকৃতি বিভাগের ডিএফও মোঃ জাহেদুল কবির জানান, বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। ১১ বছর আগে পায়ের ছাপ নিয়ে বাঘ শুমারি পদ্ধতি ভুল ছিল। এ পদ্ধতিতে কয়েকগুণ বেশি দেখানো হয়েছে। খুবি’র সুন্দরবন রিচার্স সেন্টারের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিনিয়ত হত্যা ও পাচারের কারণে বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বাঘ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গেল মাসে সংসদকে জানিয়েছিলেন, গত ১৫ বছরে গণপিটুনিতে ১৪টি, শিকারিদের হাতে ৪টি এবং বার্ধক্য, অসুস্থজনিত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাতটি বাঘ মারা যায়। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০টি। যা দেশের প্রধান বনকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিবে বলে আশা করছেন অনেকে। এত যথাযথ প্রতিকারও চায় সচেতন মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *