মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকরা মজুরী বকেয়া রয়েছে ১৪ কোটি টাকা
বি, এম, রাকিব হাসান : পৃথিবীর যত কষ্ঠ যেন মুখ বুঝে সহ্য করতে হয় শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনাতো পায়না, পায়না ঈদ উৎসবের মত বড় ধর্মীও দিনগুলোতে বাড়তি সুবিধা। আর অনাচার সহ্য করতে হয় প্রতি বছর। খুলনাঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের অন্তত ৪২ সহস্রধিক শ্রমিক নিয়মিত বেতন না পেয়ে অসহায়-মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে শ্রমিকরা হিমশিম খাচ্ছেন। তারপর আবার সামনে সর্বোবৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদের আগে শ্রমিকরা তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ নিয়ে হতাশায় রয়েছেন। এদিকে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে পাটকল শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক ঈদের আগে শ্রমিকদের সকল বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানালেন পাটকল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সরদার মোতাহার রহমান।
খুলনা বিজেএমসি ও মিলগুলোর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি জুট মিল ত্রিমুখী সংকটের কারণে জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। আর্থিক সংকট, পাটের অভাবে উৎপাদন হ্রাস এবং তাঁত বন্ধ থাকায় অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। সেই সাথে শ্রমিকদের মজুরীও বকেয়া রয়েছে। স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছে ৪২ সহ¯্রাধিক। এরমধ্যে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার। আর ২৫ সহস্রাধিক বদলি শ্রমিকের মধ্যে কাজ পাচ্ছেন মাত্র ৪ হাজার শ্রমিক। কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে প্রায় এক হাজার ৯০০। শুধুমাত্র শ্রমিকদের মজুরী বকেয়া রয়েছে শ্রমিকদের কমপক্ষে ১৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে খুলনার আলিম জুট মিল শ্রমিকদের ৬ সপ্তাহে প্রায় এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা, প্লাটিনাম জুট মিলের ৬ সপ্তাহে প্রায় ৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, ক্রিসেন্ট জুট মিলের ৩ সপ্তাহে প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, স্টার জুট মিলের ২ সপ্তাহে প্রায় এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা, দৌলতপুর জুট মিলের ২ সপ্তাহে ১৯ লাখ টাকা, জেজেআই জুট মিলের ২ সপ্তাহে প্রায় ৮১ লাখ টাকা ও ইস্টার্ণ জুট মিলের শ্রমিকদের ২ সপ্তাহে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা, খালিশপুর জুট মিলের এক সপ্তাহে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা এবং কার্পেটিং জুট মিলের এক সপ্তাহে ১৫ লাখ টাকা মজুরী বকেয়া রয়েছে। এছাড়াও শ্রমিকদের ঈদ বোনাস তো রয়েছেই। আর শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন এক মাসের প্রায় ৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
আলিম জুট মিলের সাবেক সিবিএ সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম লিটু বলেন, মিলটি গত ৩০ এপ্রিল থেকে বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। ফলে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শ্রমিকরা পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাতে ঋণে বোঝা মাথায় নিয়ে চলছে। ঈদের আগে বকেয়া পাওনা ও মিল চালু না হলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব এসএম জাকির হোসেন বলেন, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে গত বুধবার পাট মন্ত্রণালয়ে এক মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী সিবিএ-ননসিবিএ নেতাদের আশ্বস্থ করেন। এছাড়া চলতি মৌসুমে পাট ক্রয়ের জন্য টাকা ছাড় দেয়ারও আশ্বাস দেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার পাটকল শ্রমিক লীগের নেতাদের সাথে বৈঠকে পাওনা পরিশোধের বিষয়ে ঘোষণা দেন বলে জানা গেছে।
খুলনা বিজেএমসির আঞ্চলিক লিয়াজো কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, অর্থ সংকটের কারণে মিলগুলোতে প্রয়োজনীয় পাট ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। ফলে উৎপাদন কমেছে। রয়েছে অনেক তাঁত বন্ধ। অর্থাভাবে শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরী দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ঈদের আগে বোনাস ও মজুরী প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধানস্ত হতে পারে। বর্তমানের উৎপাদন অনুযায়ী পাট রয়েছে মাত্র ১১ দিনের। আর এবারের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৩৪ শতাংশ পাটক্রয় করা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে পাট ব্যবসায়ীদের কাছে অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে। মিলের পাটক্রয়, ব্যবসায়ী, সরবরাহকারীসহ পাওনাদারদের বকেয়াসহ মেইনট্যানেন্স খরচ মিলিয়ে খুলনাঞ্চলে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার প্রয়োজন।
পাটকল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সরদার মোতাহার রহমান বলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক ঈদের আগে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী ও বোনাস প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সাথে শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি ২০ শতাংশ মহার্ঘভাতা ঈদের বন্ধের সপ্তাহে প্রদান করা হবে বলে মন্ত্রী আশ্বাস দেন।