সুন্দরগঞ্জে কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকাবাসী হতাশ
মোশাররফ হোসেন বুলু, সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা):সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে চাকুির বাচাঁতে টাকা ব্যাংক একাউন্টে ফেরত দিলেও অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরূদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকারের এই মহৎ উদ্যেগ নস্যাৎ কারীদের খুটির জোর কোথায় এ প্রশ্ন এলাকাবাসির। অভিযোগে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে অতি-দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান (কর্মসৃজন) প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৪ হাজার ৪৭৪ টি বরাদ্দ দেয়া হয়। শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২০০ টাকা হারে ৪০ দিনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় মোট ৩ কোটি ৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এই প্রথম পর্যায়ের কাজ ৬ ডিসেম্বার/১৪ শুরু হয়ে ৩১ জানুয়ারি/১৫ শেষ হয়। কর্মসৃজন প্রকল্পের নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে সাবেক ভারপ্রাপ্ত ইউএনও এবং পিআইও ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে যোগসাজসে হত দরিদ্র শ্রমিকদের নাম গোপন, ভুয়া শ্রমিক ও কাগজপত্র দেখিয়ে চেকের মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্ট থেকে ১ কোটি ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫’শ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। নিয়ম বহির্ভুতভাবে শ্রমিকের পরিবর্তে পিআইও’র অফিস সহকারী দেলোয়ার হোসেনের নামে ৭ টি চেক ইস্যু করেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত ইউএনও রাশেদুল হক প্রধান ও সাবেক পিআইও জহিরুল ইসলাম। ৭ চেকের মাধ্যমে মোট ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৪৩ টাকা উত্তোলন করেন দেলোয়ার। এর পর ইউএনও, পিআইও ও অফিস সহকারী মিলে এ টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। ৬ জানুয়ারি/১৫ থেকে টাকা উত্তোলন শুরু করে। এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংকের মাদার একাউন্ট নং-৩০০৩ থেকে ১৭৭৬৩০৪ নং চেকের মাধ্যমে ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার, ১৭৭৬৩৪০ নং চেকের মাধ্যমে ৫ লাখ, ১০৭৮৬৭৫ নং চেকের মাধ্যমে ২৯ হাজার ৬০৫ টাকা, ১০৭৮৬৫৭ নং চেকের মাধ্যমে ১ লাখ ৯৫ হাজার, ১০৭৭৮৬৭৬ নং চেকের মাধ্যমে ৩৫ হাজার ৮১৩ টাকা, ১০৭৮৬৭৭ নং চেকের মাধ্যমে ২ লাখ ৬৪ হাজার ২২৫ টাকা ও ১০৭৭৮৬৭৮ নং চেকের মাধ্যমে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করে। কাজ চলমান অবস্থায় গত ২৬ জানুয়ারি/১৫ বদলি জনিত কারণে পিআইও নরুন্নবী সরকার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেন। এতে পিআইও জহিরুলের মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পড়ে। তাই সুন্দরগঞ্জ থেকে চলে যাওয়ার পরিবর্তে ইউএও রাশেদুল হক প্রধান ও অফিস সহকারী দেলোয়ার হোসেনের সহযোগিতায় নব্য যোগদানকৃত পিআইও নরুন্নবী সরকারের কাজের ব্যঘাত সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন এবং তাকে সরানোর জন্য চেষ্টা করেন। ঐ চেষ্টা সফল হলে আদেশ বাতিল করে নুরুন্নবীকে হেড অফিসে পদায়ন করেন কর্তৃপক্ষ। যোগদানের ২০ দিনের মাথায় আদেশ বাতিল হওয়ার বিরুদ্ধে ১৬ ফেব্রুয়ারি মহামান্য হাইকোর্টে রীট আনয়ন করলে নরুন্নবী সরকারকে সুন্দরগঞ্জে বহাল রাখার আদেশ দেয় হাইকোর্ট। বাধ্য হয়ে পিআইও জহিরুল ইসলাম অন্যত্র চলে গেলে অফিস সহকারী দেলোয়ার হোসেন দূর্নীতি সংক্রান্ত নথিপত্র গোপন করেন। এরই মধ্যে আবদুল হাই মিলটন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করায় রাশেদুল হক প্রধান অল্প দিনের মধ্যেই বদলি জনিত কারণে অন্যত্র চলে যান। এরপর ফাইল গোপনের বিষয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে কোটি টাকা আত্মসাতের রহস্য। সেই সঙ্গে দহবন্দ, বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের মেম্বারগণ কর্তৃক কর্মসৃজন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের করায় টাকা আতœসাতের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনাটি এলাকায় তোলপার সৃষ্টি করে। ইতোমধ্যে জেলা পর্যায় এবং ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রনালয় থেকে তদন্ত শুরু করা হয়। দূর্নীতিবাজরা বাধ্য হয়ে চাকুরি বাচাঁতে এ পর্যন্ত ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমা দেয়। এর মধ্যে ২৫ জুন অফিস সহকারী দেলোয়ার হোসেন একটি চেকের মাধ্যেমে ৩০৬৪৩ নং একাউন্টে ১৪ লাখ টাকা জমা দেন। ঐ দিনেই অনলাইনে আরো ৫ লাখ টাকা ও ৩ লাখ টাকা পৃথকভাবে জমা করা হয়। এছাড়া ২৮ জুন আরো ৩ টি অনলাইন চেকের মাধ্যমে যথাক্রমে ৭ লাখ, ১ লাখ, ৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জমা করা হয়। গত ৩০ জুন এ টাকা গুলো ট্রেজারি চালানের মাধোমে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়। ইউএনও আবদুল হাই মিলটন ও পিআইও নরুন্নবী সরকার সরকারী কোষাগারে টাকা জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চত করেছেন। অপর দিকে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তদন্তে প্রমানিত হওয়ার পরও দোষিদের প্রকৃত শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় এলাকাবাসী হতাঁশ হয়ে পড়েছে। দোষীদের খুটির জোর কোথায় এ প্রশ্ন সকলের।