খুলনা মহানগরীর ঝুকিপূর্ণ ভবনসমূহ দিন দিন বেড়ে চলছে কিন্তু অপসারণ করার উদ্যোগ নেই, ১ জনের মৃত্যু আরো দুর্ঘটনার আশংকা
বি, এম, রাকিব হাসান (খুলনা ব্যুরো):খুলনা মহানগরীরতে তিন দফা তালিকা তৈরি করেও খুলনা মহানগরীর অর্ধশত ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবন অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরে চলার নীতি অবলম্বন করায় ঝুঁকি ক্রমান্বয় বেড়েই চলেছে। ভবনগুলিতে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। যে কোন মুহূর্তে ভবন ধসে জীবনহানির আশংকা করা হচ্ছে। এমন এক ঘটনা গত শনিবার পাঁচ দিনের টানা বর্ষণে সৃষ্ট বিপর্যয়ের প্রথম শিকার হলো স্কুল ছাত্রী শাপলা (১৩)। বহু পুরাতন বাসভবনের ছাদ ধ্বসে পড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় নিহত হয়েছে সে। শনিবার সকাল ১০ টার দিকে নগরীর আহসান আহমেদ রোডে মর্মান্তিক এ দূর্ঘটনা ঘটে। শাপলা খুলনার সরকারি ইকবালনগর বহুমুখি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার তৎপরতা চালিছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনরা জানান, স্কুল ছাত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা নগরীর ৫১ আহসান আহমেদ রোডস্থ নিজ বাস ভবনে সেহরী খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। সকাল ১০ টার দিকে হঠাৎ দ্বিতল ভবনের এক অংশের ছাদ ধ্বসে নিচতলায় ঘুমন্ত শাপলার ওপর পড়ে। এতে সে মারাত্মক আহত হয়। তাৎক্ষনিকভাবে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের পিতা ব্যবসায়ী ইমামুল হাকিম টিটো জানান, একই সময় পাশের রুমে তার ছোট ছেলে ফয়সালসহ অন্যরা থাকলেও তারা অক্ষত রয়েছে। কিন্তু তার মেয়েটিকে রক্ষা করা গেলনা। এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এবং বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন ভবনের ধংবসাশেষ উদ্ধারের কাজ শুরু করে। তবে ধসে পড়া ভবনটি দীর্ঘ দিনের পুরাতন ছিল বলে জানা গেছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, কেসিসি’র এবং কেডিএ’র চিহ্নিত মোট ১৫৩ টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য প্রতিবেদন তৈরি করতে ২০১০ সারের ১৪ জুন খুলনা নগর ভবনের সভাকক্ষে একটি সভা আহবান করা হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঐ সভায় এ সংক্রান্ত একটি উপ কমিটি গঠন করা হয়। কেসিসি’র প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে আহবায়ক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)কে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করেন এবং নগরীর বড় বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কে পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ৪৮টি বাড়ী চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ২৬টি বাড়ি সম্পূর্ণ, ৫টি বাড়ির বর্ধিত অংশ এবং ১৭টি বাড়ির নিচতলা বহাল রেখে বাকি অংশ ভেঙ্গে ফেলার প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবের আলোকে একই বছর ২৯ আগষ্ট কেসিসির ২০ তম সাধারণ সভায় বিস্তারিত আলোচনা করে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গৃহীত সিদ্ধান্তু অনুযায়ী উক্ত বাড়ীসমূহ ভেঙ্গে ফেলার জন্য বাড়ীর মালিক ও দখলদারদের নোটিশ পাঠানো হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপ কমিটির চিহ্নিত ৪৮টি বাড়ীর মধ্যে ১৩টি ঝুঁকিপূর্ণ বাড়ি জেলা প্রশাসনের এবং ১৬টি গণপূর্ত বিভাগের। বাকীগুলি ব্যক্তি মালিকানাধীন। জেলা প্রশাসনের ১৩টি বাড়ী অপসারণের জন্য ১৪ লক্ষ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয় এবং প্রস্তাবিত ব্যয় অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীর ক্লে রোডের একটি পরিত্যক্ত বাড়ী টেন্ডারের মাধ্যমে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বাকীগুলি অপসারণের ব্যাপারে আর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। প্রভাবশীদের তদ্বির এবং আদালতে মামলা থাকার কারণে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থমকে গেছে। সূত্র বলছে, খুলনা মহানগরীতে বসবাসের অযোগ্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহ অপসারণ করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালে কেসিসি’র পক্ষ থেকে প্রথম একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকা অনুযায়ী ৫৯ টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দ্রুত অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা’ কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ২০০৮ সালে কেডিএ’র পক্ষ থেকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৯৪টি ভবন দ্বিতীয় দফা চিহ্নিত করা হলেও তা’ অপসারণ করার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। চার বছর আগে তৃতীয় দফা চিহিৃত ৪৮ টি বাড়ী অপসারণের উদ্যোগও ব্যর্থ হতে চলেছে। ফলে এ সকল ভবনে বসবাসকারীদের ঝুঁকি ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। ঝুঁকি এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহ দ্রুত ভেঙ্গে ফেলাসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছে নগরবাসী।