টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান আতœসাতের অভিযোগ দুদকে
টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি : টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ১৫ লাখ টাকা অনুদান ও সরকারি তহবিল থেকে দুই দফায় দেয়া ৫০ লাখ টাকা অনুদানের অর্থ প্রেসক্লাবের কতিপয় কর্মকর্তা ভাগবাটোয়ারা করে আতœসাত করেছেন বলে দুদকে অভিযোগ করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে ২৮ জুন (রোববার) সাংবাদিক আ. রশিদ তালুকদারের দেয়া অভিযোগে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ১৯৯৯ সালে নামমাত্র মূল্যে টাঙ্গাইল শহরের জেলা সদর সড়কের আকুর টাকুর পাড়া মৌজায় ১৫ শতাংশ জায়গা টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের নামে স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেন। জায়গা বরাদ্দের পাশাপাশি ভবন নির্মানের জন্য সে সময় প্রধানমন্ত্রী ৫ লাখ টাকা অনুদান দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রেসক্লাব ভবন নির্মানের জন্য আরো ১০ লাখ টাকা অনুদান দেন। ওই অর্থে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুদান ও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পাওয়া অনুদানের অর্থে নির্মিত টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব মার্কেটের নীচতলায় ২৩টি দোকান ও দ্বিতীয় তলায় কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি দোকানের আয়তন ৯০ থেকে ১০০ বর্গফুট। পক্ষান্তরে শুধু তিনটি দোকানের আয়তন ২০০ বর্গফুট করে। ওই তিনটি দ্বিগুন আয়তনের দোকান বরাদ্দ নেন, প্রেসক্লাবের তৎকালীন কর্মকর্তা জামায়াত সমর্থিত তথ্য উপদেষ্টা আতাউর রহমান আজাদ(বর্তমানে সভাপতি) তার স্ত্রীর নামে, জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক জাফর আহমেদ(বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক) তার সহোদর ভাইয়ের নামে এবং অপর কর্মকর্তা বিএনপি নেতা কাজী জাকেরুল মওলা জুনুন(বর্তমানে সহ-সভাপতি) তার স্ত্রীর নামে। এছাড়া তাদের আতœীয়-স্বজনের নামে আরও দোকান বরাদ্দ নেন। মার্কেটের ৯০ থেকে ১০০ বর্গফুটের প্রতিটি দোকানের পজেশন বাবদ দেড় লাখ টাকা নেয়া হয়, অথচ ক্ষমতার অপব্যবহার করে উল্লেখিত তিনজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ২০০ বর্গফুটের দোকানও বরাদ্দ নেন দেড় লাখ টাকা করে জমা দেখিয়ে। এতে প্রেসক্লাবের ক্ষতি হয় চার লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখনও পদ আগলে রাখা সরকার বিরোধী ওই চক্রটি এভাবে দুর্নীতি করে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া জায়গা, অনুদান ও বিপুল পরিমাণ টাকা অবৈধভাবে লুটপাট করছে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অর্থে নির্মিত টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব ভবনের চারতলার নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে এবং তিন তলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে তাতে কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে তার কোন সঠিক হিসাব প্রেসক্লাবের কাছে নেই। তাছাড়া প্রেসক্লাবের নিচতলার সৌন্দর্য বর্ধন ও তিন তলায় বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম নির্মাণের সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করেছে টাঙ্গাইল পৌরসভা এবং প্রেসক্লাবের সকল কম্পিউটার সরবরাহ করেছে ঢাকাস্থ সিটি ইউনিভার্সিটি। বর্তমানে প্রেসক্লাব ভবনের চার তলার নির্মাণ কাজ চলছে। অথচ ভবনটির কোন অনুমোদিত নকশা নেই। টাঙ্গাইল পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট কোন বিভাগ বা দপ্তরের অনুমোদন নেই। সম্পুর্ণ নকশা বহির্ভুত ওই চারতলা ভবন নির্মানের জন্য টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সরকারি তহবিল থেকে দুই দফায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়। ভবন নির্মানের নামে যে বিপুল পরিমান সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে তার সিংহভাগই আতœসাত ও লুটপাট করেছেন ক্লাবের ওই চক্রটি। প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠানটি তারা ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে হরিলুট করে যাচ্ছে। আর হলুদ সাংবাদিকতার ভয় দেখিয়ে তারা টাঙ্গাইলবাসী এবং প্রেসক্লাবকে জিম্মি করে রেখেছে।
উল্লেখিত চক্রটির এসব দুর্নীতিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানা ভাবে হয়রানীসহ প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিল, মিথ্যে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে নাজেহাল করা হয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দুদকের টাঙ্গাইল জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হক জানান, অভিযোগটি তিনি পেয়েছেন। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তায় জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সভায় নীতিগত অনুমোদনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।