লোহাগড়ার চারণ কবি আঃ গফুর ভালো নেই
কাজী আশরাফ,লোহাগড়া(নড়াইল) প্রতিনিধিঃনড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বয়রা গ্রামের চারণ কবি আঃ গফুর ভালো নেই। রোগ-ব্যধিতে জর্জরিত তিনি। তার ওপর সম্প্রতি সড়ক দূর্ঘটনায় তিনি মাথায় মারাত্বক আঘাত পেয়েছেন। সব কিছু মিলে, চরম অভাব-অনটনের মধ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে কাটছে চারণ কবি আঃ গফুরের দিনলিপি। আলাপকালে চারণ কবি আঃ গফুর বলেন, বয়রা গ্রামের মরহুম অলেকা বিবির ৪ সন্তানের মধ্যে একমাত্র আঃ গফুর জীবিত। তার পিতার নাম মরহুম মালু শেখ। বয়রা গ্রামের ঝন্টু মিয়ার পাঠশালায় তার লেখা পড়ার হাতে খড়ি। এখানে কিছুদিন পড়াশোনার পর তিনি দিঘলিয়া পাল পাড়ার সামনে প্রয়াত পটু চন্দ্র চক্রবর্ত্তীর পাঠশালায় পড়াশোনা শুরু করেন। পাঠশালার লেখাপড়া শেষে আঃ গফুর কেডিআরকে স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। এখানে তিনি ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। খুব ছোট বেলা থেকেই তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি কবিতা লেখা ও গানের চর্চ্চা করতেন। কেডিআরকে স্কুল থেকে তিনি তৎকালীন লক্ষীপাশা দূর্গা চরণ ইনষ্টিটিউটে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। এখানে এক বছর পড়াশোনা শেষে তিনি পুনরায় কেডিআরকে স্কুলের দশম শ্রেণীতে ভর্তি হন। দিঘলিয়া বাজারে আঃ গফুরের সাথে প্রখ্যাত চারণ কবি বিজয় সরকারের সাথে পরিচয় হয় এবং তিনি গফুরের কবিত্ব চর্চ্চা দেখে মুগ্ধ হন। এরপর বিজয় সরকার দিঘলিয়া বাজারে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়শই আঃ গফুরের বাড়িতে এসে বসতেন এবং বিভিন্ন সাহিত্য আলোচনা করতেন। কিন্তু,সর্বগ্রাসী অভাবের কাছে লেখাপড়া সহ কোন সাধনাই আলোর মুখ দেখে না। চারণ কবি আঃ গফূরের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হয় নাই। অভাবের কারণে কবি আঃ গফুরের এন্ট্রাস(ম্যাট্রিক) পাশ করা সম্ভব হয়নি। এরপর তিনি অনেকটা ভবঘূরে জীবনযাপন শুরু করেন। এ সময় তার সাথে পরিচয় হয় প্রখ্যাত জারী গানের সম্রাট মোসলেম উদ্দিনের সাথে। এর পর তিনি যশোরের তৎকালীন কবি অবলা কান্ত মজুমদারের সাহিত্য আসরে একে একে পরিচিত হন পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, পাবনার কবি দিজেন্দ্রলাল বাগ্চী, খুলনার ডুমুরিয়া এলাকার কবি ও নাট্যকার ধীরাজ ভট্টাচার্য, কবি বন্দে আলী মিয়া, কবি গোলাম মোস্তফার সাথে। এখান থেকেই আঃ গফুর কে “চারণ কবি” হিসেবে ভূষিত করা হয়। শুরু হয় আঃ গফুরের লেখালেখির পথচলা। দীর্ঘ ৪০ বছর বয়সে তিনি আপন খালাত বোন কোলা গ্রামের মরহুম মানিক বিশ্বাসের ছোট মেয়ে আলেয়া বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবন তিনি বেশ সুখে-শান্তিতে কাটান। এ সময় আলেয়ার গর্ভে ২টি পুত্র সস্তান ও ২ টি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করে। ইতোমধ্যে ২ টি মেয়ের বিয়ে হয়েছে। রবি নামের একটি পুত্র সন্তান গত বছর বি-ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ছোট ছেলে কবির ঢাকার একটি কোম্পানিতে চাকরী করেন এবং বর্তমানে সেও বি-ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ১৯৮১ সাল থেকে আঃ গফুর প্রতি মাসে কবি ভাতা হিসেবে ১২শত টাকা পেয়ে আসছেন। ভাতার টাকা দিয়ে তিনি কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। ২০১০ সালে আঃ গফুরের “ আমার গান আমার আনন্দ” নামে একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়। বইটিতে ৫০টি গান ও কবিতা রয়েছে। তার কবিতা ও গানের অনেক পান্ডুলিপি চুরি হয়ে গেছে। ৯৫ বছর বয়স্ক কবি আঃ গফুর আরও বলেন, তার নামে বয়রা গ্রামে একটি সড়কের নামকরন করা হলেও সেই সড়কটি আজও পাঁকা করা হয় নাই। তিনি তার নামে একটি ফাউন্ডেশন চালু করার দাবী জানান।