স্বপ্ন দেখাও যেন ওদের পাপ চৌগাছার আলোবিহীন জনপদ বিশ্বনাথপুর
বিশেষ প্রতিনিধি : সামাজিক নিরাপত্তার চরম অভাব। অভাব, দারিদ্রতা যাদের নিত্য সঙ্গী। মৌলিক চাহিদার নূন্যতম বালাই নেই। পৌঁছায়নি শিক্ষার আলো। রয়েছে সামাজিক নেতৃত্বের সংকট আর বৈষম্য। যেখানে শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্করা ভূগছে পুষ্টিহীনতায়। মানুষগুলো শীর্ণকায় চেহারা। রোগে শোকে কাতর। মনে হয় অনেকদিন তারা পেটপুরে ভাত খাইনি। আধুনিকতার সামান্য ছোঁয়া লাগেনি সেখানে। ওরা যেনো বাঁচার স্বপ্ন দেখে না। স্বপ্ন দেখাও যেন ওদের কাছে পাপ। ঊপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দুরে ছোট্র একটি জনপদ পাতিবিলা ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রাম। গ্রামের মাঝ বরাবর আকা বাকা পথ চলে গেছে। রাস্তার দুধারে ছোট ছোট বাঁশ বা মাটির খুপড়ির ঘর। আধুনিকতার ছোঁয়া নেই। যেন প্রকৃতির সাথে বসবাস তাদের । গ্রামের চারিধারে নিঝুম দ্বীপের মত মাঠ। বিশ্বনাথপুর গ্রামে সকলেই ঋষি, কাষম্য গোত্রের মানুষ। তবে এরা মণিঋষি পরিচয় দিতে অভ্যস্ত। বর্তমানে এখানে ৩০ টি পরিবারে ১’শ ৩৫ জন নারী পুরুষ শিশুরা বসবাস করেন। ভোটার সংখ্যা মাত্র ৫০। কথা বলে জানা গেছে এ গ্রামের সবচে বয়স্ক পুরুষ ননী গোপাল (৭০) ও বয়স্ক মহিলা ঠেকারী রাণী (৭৫)। এখানে শিশুরা আছে ২৫ জন। যাদের বয়স ২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। এখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই । পাকা ল্যাট্রিনের সংখ্যা মাত্র ১টি।
গ্রামের বিনয় ঋষি (৬০) বলেন তাদের পূর্বপূরুষরা ঢাক ঢোলের বাজনা বাজিয়ে সংসার চালাতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা নিমন্ত্রন পেতেন। পরবর্তীতে পেশা বদল করে তারা বাঁশ ও বেতর কাজ করে কোন মতে সংসার টিকিয়ে রেখেছে। স্কুল বিমূখ শিশুরা মাঠে মাঠে খড়ি কুড়ায় এবং সামান্য মজুরিতে অন্যের ক্ষেতে কাজ করে। বর্তমান সরকারের আমলে এই ইউনিয়নে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন হলেও উন্নয়ন হয়নি এদের জীবন মানের। সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এরা। এই গ্রামের ১২ জন বিধবা সরকারি ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
এখানে গবিন্দ (৪০) নামের প্রতিবন্ধীও প্রতিবন্ধি ভাতা পাননা। সরকার প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলেও এখানে তা প্রতিফলিত হয়নি। এখানে গবিন্দের ছেলে পলাশ (৯), কার্তিকের ছেলে সমির (১৬), সন্দিপের ছেলে আকাশ (১৪), গবিন্দেও ছেলে সত্য (১২), নিমায়ের ছেলে সম্রাট (১৫), রবির ছেলে বিশ্বনাথ (১৩), গোরের ছেলে কিনারাম (১২) ও অন্তর (১০) দারিদ্রতার কারনে স্কুলে পড়ালেখা করেনা। এই সকল শিশুরা অন্যের ক্ষেতে ঝাল, পেয়াজ তোলার কাজ করে। সরকার বাল্য বিয়েতে কঠোরতা অবলম্বন করলেও ১২/১৪ বছর বয়স হলেই বিয়ে দেবার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন এখানকার পিতামাতা। গৃহবধু দিপা (১৮) জানায় ৬ বছর আগে তার বিয়ে হয়। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। বাল্য বিয়ের বিষয়ে বিনয় (৬০) বলেন সব কিছুর মূলেই হচ্ছে আমরা গরীব। চরম বিড়াম্বনা আর অতি কষ্টে জীবন যাপন তাদের। এই ঋষি পল্লীতে রয়েছে নিরাপত্তার অভাব। কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে মরার মত বেঁচে থাকার অভ্যাস তৈরি হয়েছে তাদের। এব্যাপাওে পাতিবিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামর জানান বিশ্বনাথপুর গ্রাম সত্যিই হত দরিদ্র। বিগত সরকারের আমলে এরা নানা ভাবে অত্যাচারিত হয়েছে। আগামী থেকে উই গ্রামের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হবে।