পরিবহন চাঁদাবাজিতে জড়িত ৯৮ পুলিশ
রাজবাড়ী থেকে শেখ মোঃ বিল্লাল হোসেন : পন্য পরিবহনে চাঁদাবাজি করেন সারা দেশে এমন ৯৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে থানার ওসি ট্রাফিক ইন্সপেক্টর, ট্রাফিক সার্জেন্ট, থানার সাব ইন্সপেক্টর ও কনষ্টেবল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দ সংস্থা এ সংক্রাšত একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সেটা গত সপ্তাহে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা পণ্য পরিবহনের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। আগামী রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে তারা চাঁদাবাজি বাড়িয়ে দিতে পারেন বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এই চাঁদাবাজির কারণে বর্তমানে প্রায় স্বাভাবিক থাকা পণ্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে, যে কারনে আগেভাগেই এসব কর্মকর্তার বিষয়ে খোজখবর রাখা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাঁদাবাজিতে জড়িত রয়েছে কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের সাবইন্সপেক্টর মোঃ জামান, সার্জেন্ট মোঃ আমিরুল ইসলাম, এএসআই মুজিবুর রহমান, এএসআই আবদুল করিম, হাবিলদার শ্রী কুমারেশ, টিআই মোঃ ইমরান আলী, সার্জেন্ট মেহেদী হাসান, সার্জেন্ট অচেন্দ্র কুমার মুন্সী, এটিএসআই আবুল হোসেন, এটিএসআই আব্দুল হান্নান ও এটিএআই নূরে আলমের নাম। মানিকগঞ্জের সাব ইন্সপেক্টর শহিদ, কনস্টেবল আবুল হোসেন, মোঃ মনোয়ার, স্বপন, ও মোঃ ইসহাকের নাম ও আছে এ তালিকায়। রাজবাড়ী জেলায় আছেন নৌপুলিশ ফাঁড়ির এসআই আক্তার হোসেন, এএসআই মামুন, ইব্রাহিম, সার্জেন্ট মোঃ আরিফ, এএসআই শাহীন, ও এসআই মোঃ ফিরোজ। চাপাইনবাবগঞ্জের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ আব্দুল মমিন, ট্রাফিক সার্জেন্ট মোজাম্মেল ও মোঃ আমিন; জয়পুরহাটের সাজের্ন্ট মোঃ মাহবুবুর রহমান। ট্রাফিক সদস্য মিজান, মোবারক ও হাফিজের নাম রয়েছে তালিকায়। তালিকা রাজশাহীর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবু রায়হান, সাজের্ন্ট সাজ্জাদ, এসআই আনোয়ার হোসেন, রফিক, মেহেদী হাসান, মোঃ আঃ রহিম, মোঃ জহুরুল ইসলাম, আব্দুল হালিম, নূর আলম, গোপাল, এটিএসআই মোজাম্মেল হক, কনস্টেবল নুমন পারভেজ, টিএসআই জোহার নাম রয়েছে। বগুড়ার সার্জেন্ট নাহিদ ও রেজার নাম রয়েছে তালিকায়। হবিগঞ্জের এসআই সাখাওয়াত হোসেন ও জয়নাল; দিনাজপুর জেলা সদরের ট্রাফিক সার্জেন্ট বেলাল, তারেক মামুন সাব-ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন ও আব্দুল হালিম (চম্পতলী হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি); পঞ্চগড়েরর পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল জাফরুল ইসলাম, রিপন গাজী, শামসুল হক, মোক্তার হোসেন, আপেল মাহমুদ, ফজলুল হক, আবুল কালাম, সরোয়ার হোসেন, জাবেদআলী, নজরুল ইসলাম ও আমজাদ হোসেন; বরিশাল মেট্টোপলিটনের ট্রাফিক সার্জেন্ট আবু বকর ছিদ্দিক, মশিউর রহমান, সঞ্জিব কুমার,টিআই শাহ আলম, টিএসআই জেলকদ, আবু বক্কর, সার্জেন্ট জাকির হোসেন, সুভাশিষ দাস ও ইজাজ আহমেদের নাম রয়েছে। পিরোজপুরের এসআই গোলাম রহমান, কনষ্টেবল লোকমান, আবু জাফর, মোতালেব ও নিজামের নাম রয়েছে তালিকায়। ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সার্জেন্ট মাসুদ আল আমিন, জুলহাস এসআই নুরুল হক, কনস্টেবল ইউনুস মোঃ সিদ্দিক মোঃ নজরুল ইসলাম যশোরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নুরুল হক ছিদ্দিকী, সার্জেন্ট মোঃ সাহাবুদ্দিন, টিএসআই আবদুল মান্নান, সার্জেন্ট বুলবুল,এসআই জামাল হোসেন, বিধান রুদ্র ও রহমান ও তালিকায় অভিযুক্ত। তালিকায় আরো রয়েছে কুমিল্লার পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট জিল্লুর রহমান, হাইওয়ে পুলিশের ইন্সপেক্টর মোঃ ইয়াসিন, এসআই মোঃ সামাদ ও ফৌজদারহাট পুলিম ফাঁড়ির সার্জেন্ট রফিকুল হাসান। এ তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডু থানার ওসি ইফতেখার হাসান সাবইন্সপেক্টর মিজান ও কামালের নাম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সন্ধায় সীতাকুন্ডু থানার ওসি ইফতেখার হাসান বলেন আমাকে এখান থেকে বদলি করার অনেক চেষ্টা চলছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে এ অভিযোগ হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমার সঙ্গে গাড়ি-ঘোড়ার কোন সম্পর্ক নেই। অন্য এক পশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসআই মিজান ও কামালের বিরুদ্ধে পন্য পরিবহনে চাঁদাবাজির কোন অভিযোগ আমি পাইনি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব পদক্ষেপের ফলে দেশে খাদ্যশষ্যের উৎপাদন লক্ষনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পেয়াজ, রসুন, আদাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দব্যের উৎপাদনও বেড়েছে। বিগত রমজান থেকে এখন পর্যন্ত দ্রব্য মূল্যে স্বাভাবিক রয়েছে। পরিবহন চাঁদাবাজি পন্য মূল্য বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখে। আগামী রমজান মাস ও ঈদকে কেন্দ্র করে যাতে পরিবহন চাদাবাজি ও কারসাজি করে পন্যের দাম বাড়াতে না পারে সে কারনে আগে ভাগেই সন্দেহভাজনদের বিষয়ে খোজ খবর রাখার জন্য গোয়েন্দ প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হযেছে পন্য মূল্য স্বাভাবিক রাখতে পুরো রমজান মাস টিসিবির মাধ্যমে খোলা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কুষ্টিয়া ৫টি পয়েন্টে টাকা আদায় করে হাইওয়ে পুলিশ; গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী পরিবহন চাঁদাবাজিতে পুলিশের বেশি জড়িত থাকা জেলা গুলোর মধ্যে অন্যতম কুষ্টিয়া। ৫টি পয়েন্টে কুষ্টিয়া হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত টাকা আদায় করে থাকে। এগুলো হচ্ছে শহরের প্রাণ কেন্দ্র মোজমপুর রেলগেট ট্রাফিকমোড়, কুষ্টিয়া ঈশ্বদি সড়কের তালবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের সামনে ও ভেড়ামারা লালনশাহ সেতুর পশ্চিমে এবং কুষ্টিয়া ঝিনাইদাহ সড়কের বটতৈল মোড় ও বিত্তিপাড়ার আশপাশে। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন এ ধরনের যানবাহন থেকে টাকা আদায় অব্যহত থাকলেও দেখার কেউ নেই। আর নানা ধরনের ভুলক্রটি থেকে রেহাই পেতে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা যুগ যুগ ধরে হাইওয়ে ও ট্রাফিকপুলিশের অন্যায় এ আবদার মিটিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছূক কুষ্টিয়ার পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতারা বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেও এই টাকা আদায় বন্ধ করতে পারিনি। এখন আমরা মাস চুক্তিতে চলে গেছি। অন্য জেলার গাড়ী এ জেলায় ঢুকলে সেই টাকা তাৎক্ষনিক আদায় করা হয়। রোডে গাড়ি চালাতে গেলে আমাদের কিছু টাকা ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশকে দিতেই হয়। না হলে তারা নানা ধরনের মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করে। পরিবহনে চাঁদা আদায়ে অভিযুক্ত কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের এসআই ও কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জামান তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা যেহেতু সড়কে কাজ করি এবং অনেক যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করি, এ কারনে শত্র“তা করে যানবাহন মালিকরা এ অভিযোগ করতে পারে। একই কথা জানান, অভিযুক্ত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মেহেদী হাসান। কুষ্টিয়া ট্রাক মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, আমরা বহু চেষ্টা করেও সড়কে, হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের এই চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারিনি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আমরা লেখা লেখি করেও কোন সুফল পাইনি। বাধ্য হয়ে আমার চাঁদা দিয়েই যাচ্ছি। আর না দিলে আলতু ফালতু মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হয়।