দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ন দুর্ভোগে উপকূলীয় সাধারণ মানুষ
বি, এম, রাকিব হাসান খুলনা ব্যুারো:দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় জনপদের অন্তত ৩২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বছরের পর বছর মেরামত না করায় বর্ষা মৌসুমে সাইক্লোন বা জলোচ্ছ্বাসে পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের। আগামী পূর্ণিমা বা অমাবস্যার জোয়ারে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে উপকূলীয় জনপদের মানুষ ভীষণ উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। উপকূলবাসীদের মাধ্যমে জানা গেছে, খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি উপজেলা, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, রামপাল ও মংলা উপজেলায় পাউবোর বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। সংস্কার না হওয়ায় বাঁধের মাটি বর্ষার পানিতে ধুয়ে গেছে বা ঢেবে নিচু হয়ে গেছে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার পূর্ণ জোয়ারে লোনাপানি ওই বাঁধ ওভারফ্লো প্রবাহিত হতে পারে। তখনি ঘটবে বিপর্যয়। ভেঙে যেতে পারে বেড়িবাঁধ। জানা গেছে, খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন, তাছাড়া ১৩/১৪ পোল্ডারের মঠবাড়ী লঞ্চঘাট, হায়াতখালী বাজারের পূর্বদিক, দশহালিয়া, লোকা, ১৪/১ পোল্ডারের ৪নং কয়রা লঞ্চঘাট, পাথরখালী, হরিহরপুর নামক স্থানে প্রতিনিয়ত পানির তোড়ে ধসে পড়ছে বাঁধ। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাড. মঞ্জুর আলম নান্নু বলেন, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বেড়িবাঁধ নিয়ে এলাকাবাসী আতঙ্কে রয়েছেন। বাঁধ মেরামত দ্রুত না হলে আবার লোনাপানিতে ডুবতে হবে তাদের। ভয়াবহ আইলা ও সিডরের ধ্বংসযজ্ঞ এখনো ভুলতে পারিনি। দাকোপের স্থানীয় সাংবাদিক মোঃ মোজাফ্ফর বলেন, ‘আইলার তান্ডবে এলাকার মানুষ বেড়িবাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) স্বদ্বিচ্ছার অভাবে যেকোন সময়ে ঘটতে পারে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পাউবো খুলনা-১ এর অধীনে বেড়িবাঁধ ৩৬৫ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। মেরামতের অভাবে প্রায় ৩০ ভাগ বা ১০৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। খুলনা-২ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এর অধীনে ৫১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। তারমধ্যে ৩২নং পোল্ডারের ৫ দশমিক ১০ কিলোমিটার ও ৩৩নং পোল্ডারের ২ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। পাউবো-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মুজিবর রহমান জানান, ‘অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সঠিক সময় মেরামত করা যাচ্ছে না।’ খুলনা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কুন্ডুুু বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বর্ষা মৌসুমের আগেই মেরামত করা জরুরি। প্রয়োজনীয় অর্থ পেলে কাজ শুরু হবে। একই অবস্থা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের।’ সাতক্ষীরা-২ এর অধীন ৪২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ভেতর ৮৪ কিলোমিটার বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় স্থানীয়ভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে তা মেরামত করা হয়েছে। স্পর্শকাতর স্থানগুলো পুনঃমেরামত না করা হলে আগামী অমাবস্যায় ভেঙে যেতে পারে। অস্থায়ী মেরামত টেকসই করা জরুরী দরকার। একই অবস্থা সাতক্ষীরা-১ এর অধীন বেড়িবাঁধের। এই অংশের ৫ কিলোমিটার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। যে কোনো সময় তা ভেঙে অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা সাতক্ষিরার শ্যামনগর ও রয়েছেন উপকুলীয়বাসীরা। গেল বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আইলা দূর্গত গাবুরা, পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ উপকূলীয় বাঁধ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। এছাড়াও খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের উপকুলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।