খুলনা মহানগরীতে লাইসেন্সবিহীন ২৬টি ক্লিনিক। স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, দিন দিন বাড়ছে ডায়াগনষ্টিক এর সংখাও

বি, এম, রাকিব হাসান খুলনা ব্যুারো : খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বদলীর আগে নগরীসহ বিভাগের ১০ জেলার প্রায় একশ’টি ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। এসব ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ থাকলেও এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে নবায়ন পর্যন্ত যে বাণিজ্য চলে সেটিও অকপটে স্বীকার করেন ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিকের কোন কোন মালিক। যে কারণে নিয়ম-কানুনের বালাই না থাকলেও লাইসেন্স দেয়া হয় প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের। আর এভাবে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লাইসেন্স দেয়ার ফলেই নগরীসহ বিভাগের বিভিন্ন স্থানের ক্লিনিকে অপচিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় প্রায়ই।
এদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগকে ম্যানেজ করে খুলনাঞ্চলে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গজিয়ে উঠলেও এখনও রয়েছে অনেক লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, খুলনা মহানগরীতে ৭৩টি ক্লিনিক ও ৫৮টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থাকলেও এর মধ্যে ২৬টিরই লাইসেন্স নেই। অর্থাৎ অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের কারণে স্বাস্থ্যসেবায় ঝুঁকি বাড়ছে বলেও মনে করছেন অনেকে। কিছু দিন পূর্বে নগরীর বয়রা এলাকার একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে অপচিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নগরীর রয়্যাল মোড়ের একটি ক্লিনিকে মৃত্যু হয় এক শিশুর। বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের একটি ক্লিনিকে প্রায়ই রোগী মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গিয়ে ডুমুরিয়ার চুকনগরের একাধিক ক্লিনিকে অপারেশন করেন একজন সার্জারীর ডাক্তার। সেখানেও প্রায়ই রোগী মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। বিভাগের অন্যান্য স্থানেও রয়েছে অপচিকিৎসার খবর। কিন্তু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে এভাবে স্বাস্থ্যসেবার নামে জীবনহানির ঘটনা ঘটলেও স্বাস্থ্য বিভাগে জনবল সংকটের অভাবের কথা বলে প্রতিনিয়তই গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে স্বাস্থ্য পরিচালকসহ অন্যান্য পদেও রয়েছে কর্মকর্তা শূন্য। একজনমাত্র কর্মকর্তা দিয়েই চলছে খুলনার স্বাস্থ্যবিভাগ। স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রটি জানায়, মহানগরীর প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো দেখভালের জন্য গঠিত কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্বাস্থ্য পরিচালক আর সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সিভিল সার্জন। পক্ষান্তরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোর তদারকির মূল দায়িত্বটি পালন করে থাকেন সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনবৃন্দ। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিক সেন্টার পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানোর পর এখান থেকে নবায়ন করা হয়। কিন্তু নতুন লাইসেন্স দেয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। খুলনার স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের সূত্রটি জানায়, বর্তমানে শুধুমাত্র খুলনা মহানগরীতেই ২৬টি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে লাইসেন্সবিহীন। এগুলো হচ্ছে গল্লামারী এম.এ বারী রোডের আইডিয়াল ডায়াগনষ্টিক ও পীস্ হসপিটাল, ভৈরব স্ট্যান্ড রোডের ডাঃ মোঃ আমান-উল্লাহ-ক্লিনিক, হাজী মহসীন রোডের ল্যাব টেক ডায়াগনষ্টিক, আবু নাসের হাসপাতাল সংলগ্ন শেখ ডায়াগনষ্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার ও কমফোর্ট ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, খুমেক হাসপাতালের সামনের নাহিদ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও খুলনা হেলথ্ গার্ডেন(প্যাথলজীসহ), শান্তিধাম মোড়ের থাইরয়েড কেয়ার এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, দৌলতপুরের ডক্টরস পয়েন্ট ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, বসুপাড়া বাঁশতলা মোড়ের এম,আর ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, সাউথ সেন্ট্রাল রোডের নার্গিস মেমোরিয়াল হাসপাতাল(প্রা:) লি:(প্যাথলজীসহ), কেডিএ এভিনিউর সিটি হাসপাতাল, আহসান আহমেদ রোডের অঙ্কুর ডায়াগনষ্টিক এন্ড হেলথ কেয়ার, বাবুখান রোডের দেশ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, খানজাহান আলী রোডের খানজাহান আলী হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, শেরে বাংলা রোডের সেবা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, শামসুর রহমান রোডের কেয়ার ডায়াগনষ্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার ও আনোয়ারা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, নবপল্লীর এ. হোসেন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, সোনাডাঙ্গা দ্বিতীয় ফেজের হেলথ্ এলার্ট ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, সাউথ সেন্ট্রাল রোডের শেফা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এবং সিটি ল্যাব ডায়াগনষ্টিক এন্ড মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টার। লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার সম্পর্কে খুলনার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, রুটিন কাজ নিয়েই তিনি ব্যস্ত। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের কাজে সময় দিতে পারছেন না তিনি। তাছাড়া এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনাও নেই। নতুন পরিচালক যোগদানের পর তিনিই এসব কাজ করবেন। তার পরেও তিনি আজ সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক(প্রশাসন)’র সাথে কথা বলবেন। তার নির্দেশনা পেলে তিনি কিছু প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন। অপরদিকে, খুলনার একাধিক ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে একজন প্যাথলজিষ্ট রিপোর্ট দেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে প্রয়োজনীয় জনবল আছে কি না সেটি যাচাই-বাছাই না করেই স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে লাইসেন্স দেয়া হয়। যে কারণে সার্জনরা রোগীদের সাথে চুক্তি করে ছোট খাট ক্লিনিকে নিয়ে অপারেশন করেন। অথচ সেখানে সব বিভাগের ডিউটি ডাক্তার আছে কি না সেটি নিশ্চিত হন না তারা। আর এসব কারণেই কোন কোন ক্লিনিকে রোগী মৃত্যু হয়। তবে মৃত্যু হলেও রোগীর লোকদের কোন অভিযোগ থাকত না যদি সেখানে ডাক্তার-নার্স উপস্থিত থাকতেন। সচেতন মহল স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিক পরিদর্শনকালে এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এতে তাদেরও অনেক দায়বদ্ধতা চলে আসে। বিষয়টি মিটিংয়ে একাধিকবার বলাও হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের প্রতিনিধি রাখতে নারাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *