ফটিকছড়ির নারায়ণহাট রেঞ্জের চারটি বনবিটে অনিয়ম দুর্নীতি ও কাঠ পাচারের হিড়িক

শওকত হোসেন করিম,ফটিকছড়ি(চট্টগ্রাম)সংবাদদাতা:ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট রেঞ্জের চারটি বনবিট অফিসে নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও সংরক্ষিত বনায়ন থেকে কাঠ পাচারের হিড়িক পড়েছে। বিধি ভঙ্গ করে একজন বিট কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণহাট রেঞ্জে অফিসের নিয়ন্ত্রণে দাঁতমারা বনবিট, নারায়ণহাট বনবিট, বালুখালী বনবিট ও ধুরুং বনবিট রয়েছে। ৩-৪ বছর নারায়ণহাট বনবিটের কর্মকর্তা ছিলেন মো: ইছমাইল হোসেন। সম্প্রতি তাকে ধুরুং বনবিটে বদলি করা হয়েছে। এদিকে রেঞ্জ কর্মকর্তা আলী আকবর কাজী বদলি হওয়ায় সেখানে অতিরিক্ত রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে। যা সরকারি চাকরি বিধিমালা ভঙ্গের শামিল।
২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ চার বনবিটের ২০০৪-০৫ সালের সামাজিক বনায়নের বাগান নিলাম হয়েছে। নিলামের তালিকা তৈরির সময় গাছ ব্যবসায়ী, কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে শুভঙ্করের ফাঁকি রাখা হয়েছে। আবার গাছ কর্তন করার সময় লটপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা করে ঘুষ নিচ্ছে বন কর্মকর্তা ও বন প্রহরীরা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সৃজিত বনায়নের উপকারভোগী নিয়োগেও ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। প্লটপ্রতি ২০-৩০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে উপকারভোগী থেকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সামাজিক বনায়নের জন্য প্লটপ্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা করে অবৈধ অর্থ নিচ্ছে দাঁতমারা বিট কর্মকর্তা আশরাফ, বালুখালী বিট কর্মকর্তা আলাউদ্দিন, নারায়ণহাট বিট কর্মকর্তা মিনার, ধুরুং বিট কর্মকর্তা ইছমাইল ও সংশ্লিষ্ট বন প্রহরীরা। বনবিটগুলোর প্রচুর জায়গায় ভূমিহীন মানুষ ও ভূমিহীন উপকারভোগীদের বসতঘর রয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শনকালে তারা জানায়, এদের বসতঘর প্রতি বালুুখালী বিট কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ১০-১৫ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। এ বিটের আলীয়ার ছোলা, কুমারী, পুজারঘাট, বান্ধরমারা, আনন্দপুর, ধৈলারখীল এলাকা থেকে দালাল ইছমাইলের মধ্যস্থতায় ব্যাপক বনায়নের গাছ কাটা হচ্ছে। নারায়ণহাট-শ্বেতছড়া সড়ক দিয়ে প্রতিরাতে গাছ পাচার হচ্ছে। দাঁতমারা বিট কর্মকর্তা আশরাফের সহযোগিতায় ২০১০ সালের সামাজিক বনায়নের টিলা কেটে জমি তৈরি হচ্ছে। রামগড়, মানিকছড়ি থেকে এ বনের ভেতর দিয়ে ব্যাপক গাছ পাচার হচ্ছে। নারায়ণহাট বিট কর্মকর্তা মিনার কৈয়া, সাপমারা, হাঁপানিয়া, সন্দ্বীপ পাড়ার ভূমিহীন মানুষের কাছ থেকে ১০, ১৫, ২০ হাজার টাকা করে ঘরপ্রতি চাঁদা নিচ্ছে। এ রকম চাঁদা না দেয়ায় গত ২৮ মে সাপমারা এলাকায় বেশ কিছু ভূমিহীন মানুষকে পিটিয়ে মামলা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সম্প্রতি বিট কর্মকর্তার যোগসাজশে বনের এক কিলোমিটারের ভেতর দুটি ইটভাটা তৈরি করা হচ্ছে। ফটিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী অভিযান চালিয়ে এগুলো বন্ধ করে দেয়ার পর নারায়ণহাট বিট কর্মকর্তা তাদের নামে মাত্র নোটিশ করে। ধুরুং বিট কর্মকর্তা ইছমাইলের যোগদানের পর থেকে উত্তর কাঞ্চনপুর, নয়া বাজার, গাড়িটানার উত্তরের টিলা, কারবালা টিলা, কাঞ্চন নগর ও রাঙ্গামাটিয়া রাবার বাগান এলাকা থেকে সংরক্ষিত বনায়ন ও সামাজিক বনায়নের ব্যাপক গাছ কেটে গাছ পাচারকারী ও ইটভাটার মালিকের কাছে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। নারায়ণহাট ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বালুখালী ও নারায়ণহাট বিট অফিসের নানা অনিয়ম দুর্নীতির কথা আমি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) আবদুল লতিফ মোল্লাকে অবহিত করেছি। ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কাঠ পাচার রোধে ও বনাঞ্চল উজাড় রোধে উপজেলা চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সভায় কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম বাবু বলেন, বন ও পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতরা যেখানে অনিয়ম করে সেখানে বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *