ফকিরহাটের বেতাগা ইউনিয়ন সারাদেশের একটি শ্রেষ্ঠ মডেল
বি. এম. রাকিব হাসান,খুলনা ব্যুরো: বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়ন সারাদেশের মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ মডেল ইউনিয়ন হিসাবে স্বিকৃতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও জনগনের সতস্ফুর্ত অংশ গ্রহন অক্লান্ত পরিশ্রম ত্যাগ শততা এবং পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক তা বাস্তবায়ন করার কারণে এটি করা সম্ভাব হয়েছে। বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদের মডেল এবং অর্জিত সকল অর্জন অনুকরন করে তা সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদে চালুর পরিকল্পনা গ্রহন ও তা বাস্তবায়ন করলে সরকারের ভিশন-২০২১ দ্রুত সুসম্পন্ন করা সম্ভাব হবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারনা। জানা যায়, উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার দারিদ্র নিরক্ষর জনগোষ্ঠিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমৃদ্ধ করার জন্য একাদিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করেন। সে মোতাবেক ১৪টি স্থায়ী কমিটি শক্তি শালী করণের মাধ্যমে একের পর এক নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহন ও তা বাস্তবায়ন করেই চলেছেন। যারী ধারাবাহিকতায় তারা ইউনিয়নের সকল রাস্তার পার্শ্বে বৃক্ষ রোপন, বঙ্গবন্ধু বনায়ন প্রকল্প প্রতিষ্ঠা, শিক্ষারমান উন্নয়ন ঘটাতে ইউনিয়ন উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারন প্রকল্প চালু, প্রতিবন্ধীদের কল্যানে ও উন্নতি কল্পে প্রতিবন্ধীবান্ধব প্রকল্প চালু,স্বাস্থ্য স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে শতভাগ স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন তৈরীর মাধ্যমে উন্নত স্যেনিটেশন ব্যবস্থা চালু, কৃষি কাজে উন্নতি সাধন করতে অর্গানিক বেতাগা পলী তৈরী, শতভাগ হোল্ডিং ট্রাক্স ক্যাম্পাইনের মাধ্যমে আদায় ও নিজস্ব আয় বৃদ্ধি, বাল্য বিবাহ রোধ, ইউনিয়ন স্যানিটেশন ও সুপেয় পানি ব্যবস্থাপনা, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, শতভাগ পাকা রাস্তা নির্মাণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে উপকার ভোগীদের স্ববলম্বি করা, ভূমিহীনদের পূণবাসন, আশ্রয়ন প্রকল্প, আদর্শ গ্রাম, গুচ্ছগ্রাম, কৃষিতে উন্নতির মাধ্যমে কৃষকদের স্বাবলম্বি করা, প্রতিবন্ধিদের জীবন মানের উন্নতি করতে প্রতিবন্ধি বান্ধব প্রকল্প চালু করাসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষা ক্ষেত্রে ঝরে পড়া কমানো, শিশু মূত্যু কমানো, মাতৃ স্বাস্থ্যের উন্নতি, স্যানিটেশন ব্যাবস্থার উন্নতি ও বাল্য বিবাহ রোধে এই ইউনিয়ন পরিষদ অগ্রনী ভূমিকা পালন করেই চলেছেন। যে কারণে তারা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যয়ে একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তারা নারী ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য দুরীকরনে সুনিদিষ্ঠ কোন কর্মসূচি না থাকলেও দৃষ্ঠিভঙ্গির পরির্বতন আনতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, সংসার প্রতিপালনে নারীদের মতামতের গুরুত্বকে প্রধান্য দেওয়া, কৃষি শ্রমিক, শিল্প শ্রমিক থেকে নানামুখী কাজে নারীদের অংশ গ্রহন তাদের সিধান্ত গ্রহনের জায়গা তৈরীর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পেরেছে। ২০১০-১১ অর্থ বছর থেকে ২০১৪-১৫অর্থ ৫বছরে তাদের ট্যাক্স আদায় গড় ৯৭.৫৯%। শুধু তাই নয়, ট্যাক্স আরোপের ক্ষেত্রে সরকারের মডেল ট্যাক্স সিডিউল ২০১৩অনুকরন করে অংশগ্রহনমুলক ব্যাবস্থাপনায় ট্যাক্স আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। তারা বাড়ী বাড়ী গিয়ে ট্যাক্স নির্দ্ধারনে স্বঃস্বঃ ইউনিয়নবাসি নিজ উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদে এসে ট্যাক্স প্রদানে উদ্ভুদ্ধ হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটাতে ইউনিয়ন উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারন প্রকল্পের মাধ্যমে ডাঃ আবু তালেব বৃত্তি, শিক্ষানুরাগী হৃদয় রঞ্জন দাশ বৃত্তি,শিল্পপতি এসএম আমজাদ হোসেন বৃত্তি, শিল্পপতি আব্দুল জব্বার বৃত্তি, শিক্ষানুরাগী নগেন্দ্রনাথ দাশ বৃত্তি, শিক্ষানুরাগী কেশবলাল দাশ বৃত্তি চালু করা হয়েছে, এবং অচিরেই প্রকৌশলী সুবোধ চন্দ্র দাশ বৃত্তি চালু করার উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। বেতাগার আধুনিকায়নে প্রতিমাসে ৬০হাজারেরও বেশি টাকা বৃত্তি পাচ্ছেন উচ্চশিক্ষা গ্রহনে শিক্ষাথীরা। ইউনিয়নবাসির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পরিকাঠমোগত কিছু সমস্যা থাকলেও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র, ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক সক্রিয়ের মাধ্যমে তা পূরণ করা সম্ভাব হয়েছে। এবং ৩য় কমিউিনিটি ক্লিনিকের কাজ সমাপ্তের পথে। সম্প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের ১৫বছর পূর্তিতে বেতাগা ইউনিয়নের বিঘাই গ্রামে ডাঃ অমুল্য বিশ্বাস কমিউিনিটি ক্লিনিক চত্তরে প্রতিষ্ঠা বাষিকী পালিত হয়েছে। কৃষিতে বাস্তব ও উন্নয়ন মুখী করতে অগার্নিক পল্লী গড়ে রাসায়নিক মুক্ত ফসলাদী উৎপাদন ও বাজারজাত করনে সারাদেশে সাড়া জাগিয়েছেন। এই সাড়াজাগানোর কারণে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে চেয়ারম্যান স্বপন দাশ প্রশিক্ষনে অংশ গ্রহন করার জন্য আমেরিকা চীন শ্রীলংকা ভারত মালেশিয়া নেপাল থাইল্যান্ড মায়ানমার নেদারল্যান্ড জার্মানী ও ইতালী সফর করেছেন। শুধু তাই নই ২০০৬সালে তিনি নিজ উদ্যোগে সর্বপ্রথম উন্মুক্ত ওর্য়াড সভা ও উন্মুক্ত বাজেট প্রনায়ন সভা শুরু করেন। যা সরকারী ভাবে সারাদেশে ২০০৯সালে আইন আকারে পাশ হয়। জলাবায়ু পরিবর্তন ও জলাবদ্ধতা প্রচলিত কৃষি ব্যাবস্থায় বিপর্যয় রোধ করে কৃষিতে উন্নতি করেছে। সিডর পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০০৭সালে ইউনিয়ন পরিষদের কৃষি, মৎস্য, প্রাণী সম্পদ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি কৃষি অফিসের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। মাসকাটা শ্রীকৃষ্ণপুর মৌজার প্রায় ৫০একর জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত সবজী উৎপাদন ও তা বাজারজাত করে সারাদেশে সাড়া জাগিয়ে ফেলেছেন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অসহায় দুঃস্থ ব্যাক্তিরা সফলতার সাথে এর উপকারিতা ভোগ করে ইউনিয়কে একটি শ্রেষ্ঠ মডেল ইউনিয়ন হিসাবে এগিয়ে নিয়েছেন। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদ নিজ উদ্যোগে আধুনীক বেতাগাকে তুলে ধরার জন্য বেতাগা দিবস পালন করেছে। এই দিবসে সকল অর্জন তুলে ধরা এবং সফল ব্যাক্তিদের পুরস্কৃত করায় তাদের ভিশনÑ২০১৮ বাস্তবায়ন হতে চলেছে। ২০১৪সালে এই ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অগ্রনী ভূমিকা পালনা করায় জেলা শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন হিসাবে পুরস্কার পেয়েছে। এধরনের একাধিক কাজে অগ্রগতী অর্জন করায় ২০১৪ সালে ২৭জুন মোজাম্বিকের সাবেক রাষ্ঠ্রপতি জেকুইম আলবার্তা সিসানোসহ বিশিাল একটি প্রতিনিধি দল বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শনে আসেন। তারা বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদের নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন কল্পে দেশেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। শুধু তাই নই, দি গ্লোবাল হাঙ্গার প্রজেক্টের অনুসন্ধানে সারাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মডেল ইউনিয়ন হিসাবে স্বিকৃতিও প্রদান করেনে। এই সফলতা অর্জনের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন দাশ এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, স্বচ্ছতা জবাবাদিহিতা ও উন্মুক্ত ওয়ার্ড সভার মাধ্যমে যদি জনগনের সকল চাহিতা পূরণ করা যায়, তাহলে সব কিছু করা সম্ভাব। তিনি স্থানীয় ইউনিয়নকে শক্তি শালী করার পেছনে জনগনকে মুল চাবিকাঠি হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, তাদের সহযোগীতার কারণে এটি করা সম্ভাব হয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সরকারকে শাক্তি শালী করতে সরকারের যে ভিশন-২০২১ তার পূর্বেই তিনি (২০১৮সালের মধ্যে) তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন বলে আশাবাদী। উল্লেখ্য উক্ত ইউনিয়ন পরিষদে শিক্ষার হার ৮৩%, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ০৪টি একটি বালিকা বিদ্রালয়, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ০২টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ০৯টি, জন্ম হার ১.২৫%, মূত্যু হার .৬১%,জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার .৬৪%, পেশা কৃষি ৫৬%, ব্যাবসা ১৮%, সরকারী চাকুরী ৪%, বেসরকারী ৬%, শিক্ষাকতা ১.৭%, মৎস্য চাষি/পোল্ডি কামারী ৭%, শ্রমজীবি/শ্রমিক-৯%, আয়তন ২৩বর্গ কিঃমিঃ, জনসংখ্যা ১৬০৭০জন, পুরুষ ৮০৭৮জন, মহিলা ৫১২৫জন, পরিবার খানা সংখ্যা ৩৮৫০টি, মোট ভোটার সংখ্যা ১০২০৫জন। ২০১৪-২০১৫অর্থ বছর পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স ৪.৮৯.৫০০/ টাকা, ২০১৫-২০১৬অর্থ বছরে প্রস্তাবিত হোল্ডিং ট্যাক্স ৪.৮৯.৯৫০/টাকা।