সরকারি কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট প্রদানে কড়াকড়ি হচ্ছে
সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) নিয়োগ করা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা (ক্যাডার ও নন-ক্যাডার) ছাড়া অন্য কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে আর অফিশিয়াল পাসপোর্ট দেওয়া হবে না। এ ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব জনবলের কেউ অফিশিয়াল পাসপোর্ট পাবেন না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে কড়াকড়ি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজ বুধবার পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। এটি হলে যেসব সরকারি কর্মকর্তা এর আওতায় পড়বেন, তাঁদের পাসপোর্টের ধরন পরিবর্তন করতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে জানান, সরকারি পাসপোর্টের অপব্যবহার রোধ করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা সেজে অফিশিয়াল পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাধারণ পাসপোর্টকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হবে। সাধারণ মানুষকে যে সবুজ রঙের পাসপোর্ট দেওয়া হয়, ওই একই পাসপোর্ট দেওয়া হবে প্রথম শ্রেণির নিচের কর্মকর্তাদের। সাধারণ মানুষের জন্য এখন যেমন আছে, তেমনই থাকবে। এর মধ্যে যেসব সরকারি কর্মকর্তা সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করবেন, তাঁদের পাসপোর্টে লেখা থাকবে পিজি (পাসপোর্ট গভর্নমেন্ট)। আর অফিশিয়াল পাসপোর্টের নম্বরের আগে লেখা থাকবে ওসি (অফিশিয়াল পাসপোর্ট)। বর্তমানে পিয়ন থেকে শুরু করে অতিরিক্ত সচিবেরা অফিশিয়াল পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। সচিবেরা ব্যবহার করেন কূটনৈতিক পাসপোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা সাজিয়ে বিভিন্ন দেশে ‘অফিশিয়াল পাসপোর্টে’ মানব পাচারের ঘটনার অভিযোগ আসায় এবং বেশ কয়েকটি দেশ থেকে অফিশিয়াল পাসপোর্ট সংকুচিত করার অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সচিব এ পরিবর্তনের বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তাদেরও অফিশিয়াল পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, যেসব সরকারি কর্মকর্তা সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করবেন, তাঁদের সরকারি আদেশ (জিও) নিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। শুধু এনওসি (অনাপত্তিপত্র) দিয়ে যেতে পারবেন না। বর্তমানে ১৩টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অন অ্যারাইভাল ভিসা (বিমানবন্দরে আগমনের পর দেওয়া ভিসা)চুক্তি রয়েছে। এসব দেশে যেতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগে ভিসা নিতে হয় না। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার সঙ্গেও এ চুক্তি করা হয়েছে, তবে এখনো কার্যকর হয়নি। সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহারকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আর অন অ্যারাইভাল ভিসা লাভের সুযোগ পাবেন না। তাঁদের ভিসা নিয়েই এসব দেশে যেতে হবে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, উন্নত দেশগুলোতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়া কাউকে অফিশিয়াল পাসপোর্ট দেওয়া হয় না। অফিশিয়াল পাসপোর্টের বিপরীতে দ্রুত ভিসা পাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। তাই একটি ধাপ রক্ষা করে শুধু পদস্থ কর্মকর্তারা উন্নত দেশগুলোতে অফিশিয়াল পাসপোর্ট পান।
বর্তমানে সচিব থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা কূটনৈতিক পাসপোর্ট বা লাল রঙের পাসপোর্ট পেয়ে থাকেন। অফিশিয়াল পাসপোর্টের রং নীল। এ ছাড়া অন্যান্য সাধারণ পাসপোর্টের রং সবুজ। মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব হলো সরকারি কর্মকর্তাদের দুই ধরনের পাসপোর্ট থাকবে। যাঁরা অফিশিয়াল পাসপোর্টের জন্য প্রাধিকার হবেন, তাঁরা সরকারি সফরের ক্ষেত্রে নীল রঙের অফিশিয়াল পাসপোর্ট ব্যবহার করবেন। এর বাইরে প্রাধিকার/নন-প্রাধিকার নির্বিশেষে অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সবুজ রঙের পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে। সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা সাজিয়ে মানব পাচারের ঘটনা ধরা পড়ায় অফিশিয়াল পাসপোর্টের ধরন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। অফিশিয়াল পাসপোর্টে বিদেশে যেতে শুধু প্রয়োজন হয় সরকারি আদেশ বা জিও। তুরস্ক সরকারের দেওয়া এক চিঠির সূত্র ধরে সরকারি কর্মকর্তা সাজিয়ে মানব পাচারের বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে ঠিক কতজন এভাবে বিদেশে গেছেন, তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি বর্তমানে কাজ করছে।