সান্তাহারে প্লাবন ভূমি উপ-কেন্দ্রের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে কুঁচিয়ার পোনা উৎপাদনে বি এফ আর আই এর ব্যাপক সফলতা অর্জন
সাগর খান(আদমদীঘি)প্রতিনিধি: দেশে প্রথম বারের মতো কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে কুঁচিয়া মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বি এফ আর আই) বিজ্ঞানীরা। ইনস্টিটিউটের বগুড়ার সান্তাহারে প্লাবন ভূমি উপ-কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা পুকুর ও সিমেন্টেড ট্যাংকে পিজি (পিট্যুইটারি গ্ল্যান্ড) এবং এইচসিজি (হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন) হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে সম্প্রতি কুঁচিয়ার কৃত্রিম প্রজনন ঘটাতে সক্ষম হন। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে কুঁচিয়ার পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি সফল হওয়ার ফলে দেশে কুঁচিয়ার পোনা প্রাপ্যতার সংকট দূর হবে এবং সেই সাথে চাষীরা তাদের খামারে অন্যান্য মাছের সাথে কুঁচিয়া চাষ করতে সমর্থ হবে। আমাদের দেশে কুঁচিয়া সাধারণত মাইট্যা কুঁচিয়া (মাড ইল) নামে বহুল ভাবে পরিচিত। এটা খুবই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু মাছ এবং এর ঔষধি গুণ রয়েছে। এই মাছটি প্রাকৃতিকভাবে অগভীর উন্মুক্ত জলাশয়ে, যেমন হাওড়, বাওড়, বিল, খাল এবং প্লাবনভূমিতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশেও কুঁচিয়ার টিকে থাকার ক্ষমতা রয়েছে, যেমন নি¤œ অক্সিজেন মাত্রা, উচ্চ তাপমাত্রা এবং অগভীর পানি। যদিও শুধুমাত্র আদিবাসী জনগোষ্ঠী এই মাছটি খেয়ে থাকে, তবুও রপ্তানি চাহিদার কারণে এর যথেষ্ঠ বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ কুঁচিয়া রপ্তানী করে আসছে। ২০০৮-২০০৯ সালে বাংলাদেশ কুঁচিয়া রপ্তানির মাধ্যমে ২.৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করেছে যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩-১৪ সালে ১৪.৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে পৌছেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিন কোরিয়া সহ বিশ্বের ১৫ টি দেশে কুঁচিয়া রপ্তানি করছে। ইনস্টিটিউটের সান্তাহারস্থ প্লাবন ভূমি উপ-কেন্দ্র থেকে সম্প্রতি কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে প্রথমবারে মোট দুই হাজার পাঁচশত টি পোনা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। উক্ত উপকেন্দ্রে ‘বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কুঁচিয়া প্রজাতির খাদ্য, খাদ্যাভাস বিশ্লেষণ এবং কৃত্রিম প্রজনন’ শীর্ষক একটি কোর গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১১ সাল থেকে কুঁচিয়ার উপর নিরলসভাবে গবেষণা পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায় এ কুঁচিয়ার উপর গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কুঁচিয়ার জন্য জীবন্ত খাদ্য (লাইভ ফিড) প্রয়োজন হয়। ইনস্টিটিউটের প্লাবনভূমি উপ-কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিড রিন্টু দাস, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুর রহমান ও মোছাঃ সোনিয়া শারমীন কুঁচিয়ার কৃত্রিম প্রজনন বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রমে জড়িত আছেন। বিগত ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে কুঁচিয়া ও কাঁকড়ার উপর গবেষণা করার নির্দেশ দেন। কুঁচিয়া ও কাঁকড়ার উপর ব্যাপকভাবে গবেষণা পরিচালনা করার লক্ষে ‘বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুঁচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা’ শীর্ষক একটি উন্নয়ন প্রকল্প তিন বছরের জন্য অনুমোদিত হয়। উক্ত উন্নয়ন প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ১ জুলাই ২০১৫ হতে ৩০ জুন ২০১৮ পর্যন্ত ধরা হয়েছে এবং প্রকল্পটি বি এফ আর আই ও মৎস্য অধিদপ্তর যৌথ ভাবে বাস্তবায়ন করবে বলে জানা যায়। কুঁচিয়ার কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা সম্ভব হলে এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের প্লাবন ভূমি উপ-কেন্দ্রের প্রধান এবং উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিড রিন্টু দাস বলেন কুঁচিয়ার কৃত্রিম প্রজননের ফলে বিলুপ্ত প্রায় এ প্রজাতিটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কুঁচিয়ার চাষা বাদ করতে এর কৃত্রিম প্রজনন আরো সহজ ভাবে করা যায় কিনা তার উপর গবেষণা পরিচালনা করতে হবে। এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান কুঁচিয়া চাষ আগামী দিনে বাংলাদেশে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে পরিণিত হবে। কুঁচিয়ার বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হলে কুঁচিয়া রপ্তানি করে আরো বেশী পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এছাড়া, কুঁচিয়া চাষ ও গবেষণা বিষয়ক নতুন উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদিত হওয়ায় দেশে কুঁচিয়ার চাষ ও গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।