ইন্টারনেট সেবা সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা
আগামী অর্থবছরের বাজেটে সেলফোন অপারেটরদের সিম বা রিম কার্ডভিত্তিক সব ধরনের সেবার ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এরই মধ্যে অর্থ আইন, ২০১৫-এর নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পর পরই তা কার্যকর করেছে অপারেটররা। নতুন এ শুল্ক আরোপের ফলে ভয়েসভিত্তিক সেবার পাশাপাশি ডাটাভিত্তিক সেবার মূল্যও বেড়েছে। এতে দেশে ইন্টারনেট সেবা সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে সেলফোন সেবায় ১৫ শতাংশ মূল্যসংযোজন কর (মূসক) আরোপ আছে। অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ হলে সব মিলিয়ে ২০ শতাংশ কর দিতে হবে গ্রাহকদের। এ প্রসঙ্গে শীর্ষ সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন্স সৈয়দ তালাত কামাল বলেন, ‘৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ আমাদের গ্রাহকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ইন্টারনেট সেবা সম্প্রসারণের প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত করতে পারে এটি। ফলে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য রয়েছে, তার ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে।’দেশে ইন্টারনেট সেবা সম্প্রসারণে গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে ব্যান্ডউইডথের মূল্য কমিয়ে এনেছে সরকার। পাশাপাশি ওয়াইম্যাক্স ও থ্রিজির মতো তারবিহীন ইন্টারনেট সেবাও চালু করা হয়েছে। ফলে সেবাটির গ্রাহকও বেড়েছে। আর ইন্টারনেট গ্রাহকের সিংহভাগই সেলফোন অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করছে। থ্রিজি প্রযুক্তি চালুর পর অপারেটরদের ডাটাভিত্তিক সেবা আরো সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে দেশে ইন্টারনেট সংযোগ সংখ্যা ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৭৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু সেলফোন অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবার সংযোগ সংখ্যা ৪ কোটি ৪২ লাখ ২৩ হাজারের বেশি। বাকি ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) ও পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন) অপারেটরদের সেবাগ্রহণকারী ১২ লাখ ৫৬ হাজার এবং ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক ১ লাখ ৯৮ হাজার। অন্যদিকে একই সময়ে দেশে সেলফোন গ্রাহক ১২ কোটি ৪৭ লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক ৫ কোটি ২৩ লাখ ৫৪ হাজার, বাংলালিংকের ৩ কোটি ২০ লাখ ৪৪ হাজার, রবি আজিয়াটার ২ কোটি ৬৬ লাখ ৩০ হাজার, এয়ারটেলের ৮৩ লাখ ৫১ হাজার, টেলিটকের ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ও সিটিসেলের ১২ লাখ ৩০ হাজার। প্রস্তাবিত বাজেটে সেলফোন অপারেটরদের নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে সিমপ্রতি শুল্ক ৩০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সিম প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১০০ টাকা শুল্ক অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সিমকার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোর এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে সেলফোন অপারেটররা। এ বিষয়ে রবি আজিয়াটার ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশন অ্যান্ড করপোরেট রেসপন্সিবিলিটি) ইকরাম কবীর বলেন, ‘সিম কর কমানোর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে মোবাইল সংযোগের বিস্তার ঘটানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে আমরা আশা করেছিলাম সিম কর পুরোপুরি মওকুফ করে দেয়া হবে। এর পরও সিম কর কমানোর এ সিদ্ধান্ত নিশ্চিতভাবেই সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ ও পদক্ষেপকে ত্বরান্বিত করবে। তবে সেলফোন সেবার ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ আমাদের গ্রাহকদের জন্য বাড়তি চাপ হিসেবে দেখা দেবে। ফলে এই খাতের সামগ্রিক আয় কমে আসার আশঙ্কাও রয়েছে। সরকারকে করপোরেট ট্যাক্সের বিষয়টিও পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি। কারণ করপোরেট ট্যাক্স কমালে নিশ্চিতভাবেই এ খাতে আরো বেশি প্রত্যক্ষ দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ উত্সাহিত হবে।’ ২০১৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নিলামের মাধ্যমে থ্রিজির তরঙ্গ বরাদ্দ পায় গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল। পরবর্তীতে একই বছরের ৭ অক্টোবর গ্রামীণফোন, ২১ অক্টোবর বাংলালিংক, ৩০ অক্টোবর রবি ও ৭ নভেম্বর এয়ারটেল বাণিজ্যিকভাবে এ সেবা চালু করে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটক পরীক্ষামূলকভাবে থ্রিজি সেবাদান শুরু করে আরো এক বছর আগে। ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর সেবাটি চালু করে টেলিটক। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে সেলফোন অপারেটরদের থ্রিজিপ্রযুক্তির সেবার আওতায় এসেছে ১ কোটি ১৫ লাখের বেশি গ্রাহক। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের থ্রিজি গ্রাহক ৪৬ লাখ ২ হাজার ৯৭৫, রবির ২৭ লাখ ৪৩ হাজার, বাংলালিংকের ১৯ লাখ, এয়ারটেলের ১০ লাখ ২৮ হাজার ও টেলিটকের ১২ লাখ ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে।