‘খুলনা শহরে বসবাস করলেও ছুটতে হয় গ্রামে’

বি. এম. রাকিব হাসান: ‘খুলনা মহানগরীর গা ঘেঁষে বসবাস করলেও দাপ্তরিক প্রয়োজনে ছুটতে হয় বটিয়াঘাটা বা ডুমুরিয়া থানা ও উপজেলা পরিষদে। শহরের সীমানার বাসিন্দা হওয়ার দো-টানায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে নানা ভাবে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। শহরে বসবাস করলেও দাপ্তরিক প্রয়োজনে ছুটতে হয় গ্রামেই।’ কথাগুলো বললেন গল্লামারী বুড়ো মৌলভীর দরগাপাড়ার (কাসেমিয়া জামে মসজিদের পাশের) বাসিন্দা দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী এম শাহিন আহমেদ। তার মতে, অবিলম্বে এ সমস্যা সমাধান হলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিকসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কেসিসির সীমানা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া নানা জটিলতায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন তিনটি থানা এলাকা কেসিসি’র মধ্যে আনার উদ্যোগ এখনও কার্যকর হয়নি। ফলে থানা তিনটি কেএমপির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলেও কার্যতঃ উপজেলার নাগরিকই রয়ে গেছেন এসব এলাকার মানুষ। কেএমপি’র সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন নতুন তিনটি থানায় ওসি নিয়োগ দেয়া হয়। এই তিন থানা বৃদ্ধির ফলে মহানগরীর পাশ্ববর্তী এলাকার প্রায় ২০টি মৌজা কেএমপি’র অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৯৮৬ সালে কেএমপি যাত্রা শুরুর হলেও ২৬ বছর পর প্রথমবারের মত থানার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। কেসিসি সূত্র জানায়, কেএমপি’র অন্তর্ভুক্ত ২৬টি মৌজাকে কেসিসি’র মধ্যে আনার কাজ চলছে। ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বর কেসিসি’র তৃতীয় সাধারণ সভায় এ প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়। বর্তমানে এর আয়তন ৪৫ দশমিক ৬৫ বর্গকিলোমিটার কিন্তু প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন হলে আয়তন ৭০ বর্গকিলোমিটার। ১৯৮৮ সালে কেসিসি’র সীমানা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হলেও ২০০৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ২০টি মৌজাকে অন্তর্ভুক্ত করতে সর্বশেষ প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সভা, চিঠি আদান-প্রদানের মধ্যেই এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। সূত্রটি জানায় খুলনা সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি দায়িত্ব গ্রহণের পরই সীমানা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই মধ্যে কেএমপির আওতায় নতুন থানা ৩টি (লবণচরা, হরিণটানা ও আড়ংঘাটা) এলাকা কেসিসি’র প্রস্তাবের মধ্যে না থাকায় সীমানা বৃদ্ধির প্রস্তাবটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে । সূত্রটি আরও জানায়, নতুন এ তিনটি থানা এলাকার ৬টি মৌজা হচ্ছে বটিয়াঘাটা উপজেলার সাচিবুনিয়া, ঠিকরাবাদ, রাজবাঁধ এবং ডুমুরিয়া উপজেলার বিল শলুয়া, রংপুর ও ধাইগ্রাম মৌজার পূর্বাংশ। এর আগে সীমানা বৃদ্ধির প্রস্তাবে ছিল বটিয়াঘাটা উপজেলার হরিণটানা, মাথাভাঙ্গা, ডুবি, খোলাবাড়িয়া, আলুতলা, কৃষ্ণনগর, ডুমুরিয়া উপজেলার চক মথুরাবাদ, চক-আসানখালী, লতা পাহাড়পুর এবং বিল পাবলার পূর্বাংশ। এ ছাড়া দৌলতপুরের আড়ংঘাটা, খানজাহান আলী থানার তেলিগাতী, বিল ডাকাতিয়া, যোগীপোল, শিরোমনি, শ্যামগঞ্জ, গিলাতলা, আটরা, মশিয়ালী ও দেয়ানা মৌজার আংশিক। সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, কেএমপি’র বর্ধিত তিন থানার বাসিন্দারা সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার রয়েছেন। কেএমপি সীমানা বৃদ্ধি হলেও কেসিসি’র পরিধি বৃদ্ধি না হওয়ায় উক্ত তিন থানা এলাকার বাসিন্দারা মহানগরীর ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন না। উক্ত এলাকাসমূহ কেসিসি’র আওতাভুক্ত হলেই নগরীর নাগরিক হতে পারবেন সেখানকার বাসিন্দারা। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, জনবসতি ঘনত্বের বিবেচনায় অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের তাগিদে প্রস্তাবিত ২৬টি মৌজা কেসিসি’র মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বাস্তবায়ন জরুরী। মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়ে দিয়েই খ্যান্ত থাকলে খুলনায় কোন উন্নয়নই পৌঁছাবে না। খুলনাবাসীর স্বার্থে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনাটি বারংবার তদ্বীর করতে হবে। সীমানা প্রসঙ্গে সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি বলেন, নতুন তিন থানাসহ মোট ২৬টি মৌজাকে কেসিসি’র ভেতরে আনার প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দ্রুত এটি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *