লোহাগড়ায় দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে
কাজী আশরাফ,লোহাগড়া(নড়াইল)প্রতিনিধি: নড়াইলের লোহাগড়া দেশি প্রজাতির সুস্বাদু হরেক রকম মাছের জন্য এক সময় বিশেষ খ্যাতি ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তা আজ রুপকথার গল্পের মতো। হাওর ও খাল-বিল সমৃদ্ধ এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে আইড়, চিতল, রুই, কাতল, মৃগেল, শোল, শিং, মাগুর, কৈই, পাবদা, বাইন, তারাবাইন, বাইলা, নানা জাতের চিংড়ি কয়েক রকম টেংরা, চাপালি, খলিসা, চেলা, মেনি, টাকি, পুঁটি, সরপুঁটি, কাচকি ইত্যাদি নানা জাতের সুস্বাদু মাছ এক সময় প্রচুর পরিমানে ধরা পড়তো। এখন এসব প্রজাতির অনেক মাছই জলাশয়ে বিরল। পরিমানেও অনেক কমে গেছে। এলাকার হাওর, নদী, খাল-বিলে নানা রকম দেশি প্রজাতির মাছ এক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যেত। উপজেলার বিভিন্ন বিলে এখন বড় বড় বাধ দিয়ে শুরু হয়েছে মাছ চাষ। সেখানে দেশি প্রজাতির তেমন কোন মাছ চাষ হয় না। অতি লাভের আশায় মাছ ছাষীরা অল্প সময়ে যে ধরনের মাছ বেশী দামে বিক্রি করতে পারে সেই ধরনের মাছ চাষ করা হয়। ফলে বিলগুলোতে দেশি প্রজাতির মাছগুলো বংশ বৃদ্ধি করতে পারে না। এখন অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলছে। এ উপজেলায় আহরিত দেশি মাছ স্থানীয় চাহিদা পূরন করে দেশের অন্যান্য জেলা ও উপজেলার বাজার-বন্দরেও বিক্রি করা হতো বলে জনশ্র“তি রয়েছে। এখন আর তা হয় না বললেই চলে। মাছের দুর্মূল্য ও দুস্প্রাপ্যতায় এ উপজেলার সাধারন মানুষ এখন প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পুরণে ব্যর্থ হচ্ছেন। কৃত্রিম খামারের মাছই এখন বাজারগুলো দখল করে ফেলেছে। অভিজ্ঞ জেলেসহ এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে লোহাগড়া হতে বেশ কিছু দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। আরও বহু প্রজাতি মাছের অস্তিত্ব বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। সঠিক পরিচর্যা ও নজর না দিলে এগুলোও এক সময় প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে। বর্ষাকালে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি আশাতিত নয়। বহু হাওর ও খাল-বিল সমৃদ্ধ মিঠা পানিতে পরিপূর্ণ এ উপজেলায় এক সময় প্রায় ১৫০ রকম দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব, খাল-বিল ভরাট করে বাড়ি তৈরি, জলমহালগুলোতে ইজারাদারদের স্বেচ্ছাচারিতা, মাছের প্রধান প্রধান উৎসস্থলের পার্শ্ববর্তী ধানি জমিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারে মৎস্য সম্পদ উজাড় হচ্ছে। এছাড়াও অপরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে মাছের চলাচল বাধা সৃষ্টি, সেচ প্রকল্প বাস্তাবায়নে পাটিবাধ ও বিলের পানি সেচের মাধ্যমে মাছ আহরণ, কারেন্ট জাল ও মশারি জালে রেণু পোনাসহ নিবির্চারে নানা আকারের মাছ ধরায় দেশি প্রজাতির মাছ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এভাবেই দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্ত হওয়া মাছের মধ্যে রয়েছে মহাশোল, পাঙ্গাশ, রাণী, পান, রিটা, খলিসা, বৈচা, ফলি, পাবদা, চেং মাছ, বাঘাইর, সিলন, হলা, লাচু, এলগনা, গলদা চিংড়ি, টাকিমাছ ইত্যাদি। এছাড়াও বিলুপ্তির পথে রয়েছে কৈ, শিং, মাগুর, বতাসী, ইলিশ, মলা, রুই, কাতল, বজুরি, গুতুম, সরপুঁটি, চান্দা, বাইম মাছ ইত্যাদি। এগুলির কোন কোন প্রজাতি এখন কৃত্রিম হেচারির পোনা দিয়ে পুকুরে আবাদ করা হচ্ছে। তবে এসব মাছ প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছের মতো সুস্বাদু হয় না। শীত মৌসুমে সম্পুর্ন পানি নিষ্কাশন করে কিংবা কিটনাশক প্রয়োগ করে দেশের কিছু অতিলোভী প্রকৃতির মানুষের মাছ ধরার প্রবনতার কারনেই আজ লোহাগড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মিঠা পানির মৎস্য সম্পদ বিলুপ্ত হতে চলেছে। এলাকার সচেতন মানুষের দাবি-“অচিরেই মাছ ধরার এই প্রক্রিয়া রোধ করতে না পারলে এবং ব্যক্তি পর্যায়ের জলাভূমি ও কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারী জলাশয় সহ খাল-বিলে মাছের অভয়ারণ্য ঘোষনা করতে না পারলে কালের আবর্তে বাকি মৎস্য সম্পদটুকুও হারিয়ে যাবে”। এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসনে আরা হ্যাপি বলেন- কৃষি জমিতে যথেচ্ছ কীটনাশক ব্যবহার, নদি এবং খালবিলে পানির নাব্যতা সহ মা মাছ ধরে ফেলার কারনে দেশিয় প্রজাতির মাছ কমে যাছে। আমরা ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা মূলক প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছি। আশাকরি অচিরেই এর সুফল পাওয়া যাবে।