গাইবান্ধা সদর থানা হেফাজতে পুলিশি নির্যাতনে মেধাবী ছাত্র সাজিদ এর চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের দাবি

PHOTO-02y„ZZnnRআশরাফুল ইসলাম, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি গাইবান্ধা : গাইবান্ধা সদর থানা হেফাজতে পুলিশের বর্বরোচিত নির্যাতনে নিহত মেধাবী ছাত্র সাজিদুর রহমান সাজিদ এর চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সম্মুখে এক মানববন্ধনের কর্মসূচী পালিত হয়।

পরিবার ও এলাকাবাসির পক্ষ থেকে আয়োজিত এই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাগরিক কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম গোলাপ, নিহত সাজিদের বাবা মো. আব্দুর রউফ সরকার, নিহতের বড় ভাই মো. আব্দুল মাজেদ সরকার, ব্যবসায়ী সংগঠনের সানোয়ার হোসেন, পলাশবাড়ির মনোহরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাফি মন্ডল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বিগত ২০০৬ সালের ১৮ মে বিনা অপরাধে পরিকল্পিতভাবে সাজিদকে আটক করে দু’দিন থানা হাজতে আটকে রেখে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। সাজিদকে হত্যার পর গাইবান্ধা সদর থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুর আলম ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। ময়নাতদন্তে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে রিপোর্ট দিলে ওসি পুনরায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যা ছিল তার প্রণীত হত্যাকান্ড ধামাচাপা দেয়ার জন্য সাজানো মামলা। এব্যাপারে নিহত সাজিদের পিতা মো. আব্দুর রউফ সরকার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে গেলে তার মামলা রেকর্ড না করে ওসির সাজানো ওই মামলার নম্বরটি প্রতারণামূলকভাবে পিতার দায়েরকৃত এজাহারে সংযুক্ত করা হয়।
এ নিয়ে গোটা গাইবান্ধা দায়ী পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, প্রতারণামূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে গাইবান্ধার সর্বস্তরের মানুষ। সেসময় লাগাতার বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও থানা ঘেরাও কর্মসূচীও পালিত হয়। এমতাবস্থায় নিহত সাজিদের বড় ভাই আব্দুল মাজেদ সরকার (নং পি-১১৭৫) ও নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আমিনুল ইসলাম গোলাপ বাদি হয়ে (নং পি ১১৭৪) আদালতে দুটি পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ দুটি মামলায় সদর থানার ওসি নুর আলম, এএসআই আবু ইউসুফ, পিএসআই ফাহিমা হায়দার, কনস্টেবল মিজান, দুলাল এবং তৎকালিন বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলুকে আসামি করা হয়। আদালত দুটি মামলার সম্বনয় করে সিআইডিতে তদন্তের জন্য হস্তান্তর করলেও সিআইডি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘকাল তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করা থেকে বিরত থাকে। পরবর্তীতে নিহত সাজিদের পিতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ওসি নুর আলমসহ আবু ইউসুফ, ফাহিমা হায়দার, মিজান, দুলাল এবং দেলোয়ার হোসেন দেলুকে অভিযুক্ত করে রিপোর্ট দাখিল করে। চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মামলায় তদন্ত রিপোর্ট মোতাবেক আসামিদের সংযুক্ত করে মামলাটি জজ কোর্টে বিচারের জন্য প্রেরণ করে (সেসন নং ২০২/১১)। এরপর দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলাটির চার্জ গঠন করা হয়নি এবং মামলাটি স্থবির রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে আবু ইউসুফ এবং ফাহিমা হায়দার ছাড়া অন্য আসামিরা জামিন প্রাপ্ত হয়ে সকলেই সাময়িকভাবে বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছেন। অন্যতম আসামি ফাহিমা আকতার যথাযথ কর্তব্য পালন করছেন। অথচ এই ফাহিমা হায়দারই হাজতে সাজিদ নিহত হওয়ার সময় থানায় কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার ছিলেন। অথচ তাকে সুকৌশলে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার অপচেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। আর আবু ইউসুফ জামিন নিয়ে পালিয়ে বিদেশে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *