‘সুখির কপালে সুখ হলো না’ একুশ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে লাশ হয়ে ফিরল সে
বাগেরহাট প্রতিনিধি : “ টাকা নিয়ে না গেলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে মা । আমাকে শেষ দেখা দেখে রাখ। কোন অন্যায় করলে মাফ করে দিও। আর কোন দিন হয়তো তোমরা আমাকে দেখতে পারবে না।” গত এক মাস পূর্বে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে এ কথাগুলো বলেছিল বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা গ্রামের মোস্তফা গাজীর মেয়ে ফাতেমা আক্তার সুখি (২৫)। তার এ কথা সত্য প্রমানিত হয়েছে। ২১ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বুধবার সকালে লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে সুখিকে।
কেউ হয়তো আদর করে নাম রেখেছিল “সুখি”। কিন্তু সুখ যে তার কাছে ধরা দেয়নি। ছোট বেলায় পিতা দ্বিতীয় বিয়ে করে। অন্যত্র বিয়ে হয় মায়ের। ফাতেমা আক্তার সুখি মামার বাড়িতে বড় হয়। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শিখে স্বাবলম্বি হবে। কিন্তু অভাবের কাছে হার মেনে মাত্র নবম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় তার। স্বামী বাহারকে নিয়ে একটি সুখের সংসার বানাতে চেয়েছিল সুখি। কিন্তু ভাগ্য তার সাথে প্রতারণা করেছে।
বুধবার সকালে লাশ নিয়ে ফেরার সময় বাগেরহাট দড়াটানা ব্রীজের নিচে বসে নিহত ফাতেমা আক্তার সুখির মামা এমদাদ হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, বাপ-মা হারা সুখিকে তারা মানুষ করেছে।
অভাবের ভিতরও তারা অনেক কষ্ট করে সুখির লেখা পড়া চালাচ্ছিলেন। ২০০৯ সালে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে সুখিকে গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর উপজেলার আঃ রাজ্জাক শেখের ছেলে বাহার উদ্দিন সেখ দেখে পছন্দ করে। সব কিছু জেনে শুনে পারিবারিক ভাবে বাহারের সাথে সুখির বিয়ে হয়। এ সংসারে নুশরাত নামে সাতে ৩ বছরের একটি কন্য সন্তান রয়েছে।
বাহার উদ্দিন বিয়ের ২/৩ মাস পর থেকে সুখিকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। চালাতে থাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। সুখির সুখের কথা চিন্তা করে তার ৮ মামা কয়েক দফায় তারা দেড় লক্ষ টাকা যৌতুক দেয়। কিন্তু গত মাসখানেক আগে এক লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে দেয়ার জন্য সুখিকে চাপ দিতে থাকে। শুরু করে শারিরিক নির্যাতন। সুখির জানা ছিল মামাদের অভাব-অনটনের কথা। সে অস্বীকৃতি জানানোর পরও নির্যাতন সইতে না পেরে, মামার বাড়িতে আসে। সুখি সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে টাকা ছাড়াই সে ফিরে যায় স্বামীর বাড়ি মকসুদপুরে।
নিহতের মামা ও অন্য আতিœয়রা মকসুদপুর গিয়ে স্থানীয়দের কাছে শুনেছেন, এপ্রিল মাসের ২৭ বা ২৮ তারিখ সুখিকে তার স্বামীর পরিবারের ৪/৫ সদস্য মিলে নির্যাতন করে চেপে ধরে মুখে বিষ ঢেলে দেয়। এদিন রাতে তাকে ঘরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। সারা রাত ঘরের বাইরে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়লে, পরের দিন তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করে। ৪ দিন পর গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ৩ দিন পর ৫ মে তাকে ঢাকার গ্রীনলাইফ হাসপাতালে ভতি করে। সুখির মামাদের এ বিষয় কিছু জানানো হয়নি। গত ১৫ মে সুখির মুমুর্ষ অবস্থায় তার মামাদের খবর দেয়া হয়। এ ভাবে ২১ দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে মঙ্গলবার বিকালে সে মারা যায়। সুখির মৃত্যুর সাথে সাথে হাসপাতাল থেকে তার স্বামীসহ সকলে পালিয়ে যায়।
সুখির মামা অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার রাতে তারা মকসুদপুর থানায় অভিযোগ করতে যান। কিন্তু ডিউটি অফিসার তাদের সাথে খারাপ আচরন করে মামলা নেয়া হবেনা জানিয়ে তাদের নিজেদের থানায় ( বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ) মামলা দিতে পরামর্শ দেন।
এ বিষয় কথা বলার জন্য নিহতের স্বামী বাহার উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। বুধবার সকাল থেকেই তার সেলফোন বন্ধ ছিল। দুপুরের দিকে একবার নাম্বারটি খোলা পেয়ে কল করা হলে অপর প্রান্ত থেকে জানতে চাওয়া হয় কে ? পরে সাংবাদিক পরিচয় শুনে কলটি কেটে দিয়ে সেল ফোনটি বন্ধ করে রাখা হয়।
এ বিষয় মকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবিজুর রহমান বলেন, আমরা কেন মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানাবো? অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।