সতীনের বাসায় সতীন খুন, আটক বড়জন

Ctg21চট্টগ্রাম: নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার একটি ফ্ল্যাটে সতীনের বাসায় বেড়াতে এসে খুন হয়েছেন শারমিন আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় নিহতের বড় সতীন রোজি আক্তারসহ (৩৫) তার ভাইকে আটক করেছে পুলিশ। পারিবারিক বিরোধের জেরে বড় সতীনের পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে পাঁচলাইশের মির্জাপুল এলাকার ইকুইটি ভিলেজের চতুর্থ তলার ই-ফাইভ ফ্ল্যাট থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। নিহত শারমিন বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদণ্ডীর হাকিম বাড়ীর আবুধাবী প্রবাসী এমএ হাকিমের দ্বিতীয় স্ত্রী। তার দশ মাস বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে গৃহবধূ শারমিন আক্তার খুন হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সিআইডি, ডিবি ও পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। খুনের মোটিভ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘ডাকাতি বা এ ধরনের কোনো কিছু হলে একবাসায় থাকা দুজন নারীর মধ্যে অন্যজনও কিছুটা না কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হতেন। যেহেতু সে ধরনের কোনো কিছু হয়নি, তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের বড় সতীনকে আটক করা হয়েছে।’

হাকিমের বড় বউয়ের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে নিহত শারমিনের মামা আব্দুর রহিম বেলাল বলেন, ‘২০১৩ সালের নভেম্বরের ১৮ তারিখ বড় বউয়ের সম্মতিতে আমাদের একই এলাকার আবুধাবী প্রবাসী এমএ হাকিমের সঙ্গে শারমিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বড় সতীন রোজি তার তিন মেয়ে নিয়ে মির্জারপুল ইকুইটি ভিলেজের চতুর্থ তলার ই-ফাইভ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতো। আর আমার ভাগনী শারমিন থাকতো বহদ্দারহাট খতিবের হাট এলাকার সিপিডিএল ভবনের চতুর্থ তলার সেভেন-ডি নম্বর ফ্ল্যাটে। শারমিনের ঘরে আহমেদুর রহমান নামে দশ মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গত দেড়মাস আগে তার স্বামী হাকিম আবুধাবী চলে যান। এরপর বহদ্দারহাটের বাসা থেকে গত বৃহস্পতিবার মির্জারপুলের বাসায় বেড়াতে এসেছিল শারমিন। আর বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে খবর পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিশ্চয়ই বড় বউের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সকালের দিকে এ ঘটনা ঘটলেও বড় বউ আমাদের কোনো ফোন করেনি। আর ডাকাত এলে তাকেও তো ক্ষতি করতো।’

পাঁচলাইশ থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পারিবারিক বিরোধের জেরে বড় সতীন রোজির পরিবারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে ছুরিকাঘাত করে শারমিনকে খুন করেছে। শারমিনের মাথার পেছনে ছুরির আঘাত রয়েছে। একইভাবে ডান পেটেও ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

দুপুর তিনটার দিকে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, এ বাসায় চারটি শয়নকক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে একটি বেডরুম ও ডাইনিং রুমের মেঝেতে শারমিনের রক্তের ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে। বড় স্ত্রী রেজি আক্তারের নিজ কক্ষের টয়লেট থেকে রক্তাক্ত একটি ছোরা উদ্ধার করেছে সিআইডি।

নগর পুলিশের সিনিয়র সহকারি কমিশনার (পাঁচলাইশ) দীপক জ্যোতি খীসা বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রবাসী ধনাঢ্য এম এ হাকিমের বড় স্ত্রী রোজি আক্তারের পরিকল্পনায় ছোট স্ত্রী শারমিন খুন হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এঘটনায় রেজিকে সহযোগিতা করেছেন তার ভাই। এই দুজনকেই ওই বাসা থেকে আমারা আটক করতে সক্ষম হয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোজি ও তার ভাইকে আটকের পাশাপাশি তাদের গাড়ী চালক আনিস ও গৃহ শিক্ষক মোহাম্মদ আলীকে থানায় আনা হয়েছে। এঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।’

এসি দীপক জ্যোতি খীসা আরো বলেন, ‘ঘটনার আগে বড় স্ত্রী রোজি তার দুই মেয়ে ও গৃহশিক্ষককে কালামিয়া বাজার বোনের বাসায় সকালে পাঠিয়ে দেয়। দুপুর ১২টার পর থেকে নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখে। এসময় তার ভাইকে বাসায় ডেকে পাঠান। এর পরপরই শারমিনকে ওই বাসায় মাথায় ও পেটে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়। কিন্তু এরপরও তিনি নিজের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। এমনকি রক্তাক্ত শারমিনকে হাসপাতালেও তিনি পাঠাননি। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর তার রুমের দরজা খুলে তাকে বের করে। এসময় এ খুনের ব্যাপারে তিনি কোন উত্তরও দিতে পারেননি। এমনিক তার কথায় অসংলগ্নতা লক্ষ্য করা গেছে।’

এদিকে নিহতের মামা বেলাল জানান,  ছোট স্ত্রী খুনের খবর পেয়ে আবুধাবী থেকে চট্টগ্রামে আসছেন প্রবাসী এম এ হাকিম। শুক্রবার ভোর ৫টার মধ্যে তিনি চট্টগ্রামে এসে পেঁছৈবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *