অনেক দেরিতে হলেও সরকার উদ্যোগ নিচ্ছেন ৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনাদের মূল্যায়নের

linkpic150নূরুজ্জামান প্রধান : ১৯৭১-এ দেশ মাতৃকার  স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বাজি রেখে এক অনিশ্চিতদ যুদ্ধে যারা ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো,তারাই আমাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচিত। আর এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনী ও তার এ দেশীয় দোসরদের লালসার শিকারে পরিণত হয়ে যে সকল নারী তাদের জীবনের পরম সম্পদ সম্ভ্রম হারিয়েছেন তারা আমাদের কাছে বীরাঙ্গনা বলে পরিচিত। আর,স্বাধীনতার পর জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানই চরম ত্যাগ স্বীকারকারী এ সকল নারীদের বীরাঙ্গঁনা আখ্যা দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। কিন্তু এ স্বীকৃতির পর বীরাঙ্গনাদের  বিষয়ে সম্ভবতঃ আর বেশী দুর এগোয়নি। তাই, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছর  পরেও এ বীরাঙ্গনারাই সর্বাধিক বঞ্চিত ও উপেক্ষিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া এ বীরাঙ্গনা খেতাব ব্যতিত তাদের ভাগ্যে এমন কী জুটেছে!! শুধু প্রসঙ্গক্রমে, বিশেষ বিশেষ সভা-সেমিনার বা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা, বিবৃতি ছাড়া কোথাও কি আছে এ ত্যাগ স্বীকারকারী বীবঙ্গনাদের স্বীকৃতি বা কোন স্থান ? এ বীবাঙ্গনাদের জীবন-জীবিকা, মর্যাদা ,সামাজিক অবস্থান ও প্রাসঙ্গিক সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়-কি কোন আলোচনা সভা-সমাবেশ সিমিনার ? মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভাগ্য বিড়ম্বিত এ সকল নারীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া বীবঙ্গনা খেতাবটি যেমন তাদের মধ্যে তেমন কোন গৌরববোধ জাগিয়ে তুলতে পারিনি, তেমনিভাবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকেও করেনি সম্ভ্রমবোধ দ্বারা প্রভাবিত। আজ স্বাধীনতার ৪৪ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে। এ মহান স্বাধীনতার জন্য যাদের অনুমাত্র ক্ষতিও স্বীকার করতে হয়নি, তাদের অনেকেই আজ স্বাধীনতার সুফলভোগী। অথচ যাদের চরম ক্ষতির মূল্যক্রীত বাংলাদেশের স্বাধীনতা,আর এ স্বাধীন দেশে আজ তারা কেবল মর্যাদাহীন ও স্বীকৃতিহীনই নন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাপন করছেন এক চরম দারিদ্রক্লিষ্ট মানবেতর জীবন। তাছাড়াও বীরাঙ্গনা খেতাব প্রদানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আনুষ্টানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে গেলেও সম্ভবতঃ সরকারী কাগজ-কলমে সংরক্ষণ ব্যবস্থার মধ্যে এ নারীদের সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা অন্তভূক্তি ঘটেনি।এদিকে, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছরে এ চরম ত্যাগ স্বীকারকারী বহু বীরাঙ্গনাই আজ কাল প্রবাহে হারিয়ে গেছেন। সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় এ সকল বীরাঙ্গনাদের অনেকে বেঁচে রয়েছেন বলে জানা যায়। কারণ, বীরাঙ্গনা হিসেবে আতœপ্রকাশের সম্মানজনক অনুকূল পরিবেশ বরাবরই অনুপস্থিত। তাই, মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল নারী তাদের জীবনের পরম সম্পদ সম্ভ্রম হারিয়েছেন, অনেক দেরিতে হলেও বর্তমান সরকার সম্মানজনক ভাবে তাদের পরিচয় প্রকাশের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিসহ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহিত ব্যবস্থাদীর ন্যায়, চরম ত্যাগ স্বীকারকারী বীরাঙ্গনাদের  নীতিগত ও পদ্ধতিগত দিক প্রবর্তনের মধ্যে দিয়ে বীরাঙ্গনাদের সম্মানজনক মূল্যায়নের যে উদ্যোগ নিচ্ছেন সে উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *