নতুন বিদ্যুৎ আইন, নাশকতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধ
ঢাকা: সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার অনত্যম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ স্থাপনা। বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা, আগুন দেয়া, কর্মীদের মারধরসহ নানা অঘটন ঘটাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর হতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য বিদ্যুৎ আইন সংস্কার করা হচ্ছে। নতুন আইনের খসড়ায় বিদ্যুৎ স্থাপনায় নাশকতার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বিদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি, বেসরকারি কেন্দ্র গ্রাহকের কাছে সরাসরি বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ, বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংগঠন (ট্রেড ইউনিয়ন) গঠনে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে বিদ্যুৎ আইনের সংস্কার করা হচ্ছে। শিগগিরই আইনটি মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। সব প্রক্রিয়া শেষে জাতীয় সংসদে পাসের মাধ্যমে এ বছরই আইনটি কার্যকরে চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘বিদ্যমান বিদ্যুৎ আইন প্রণয়ন করা হয় ব্রিটিশ আমলে ১৯১০ সালের দিকে। এরপর শত বছর পেরিয়ে গেলেও আইনটির সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে। তাই সরকার এ আইনকে যুগোপযোগী করা উদ্যোগ নিয়েছে।’
সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮৩ ও ১৯৯১ সালে বিদ্যুৎ আইনের কিছু ধারায় সংশোধন আনা হয়। আর বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টিতে ১৯৯৬ সালে প্রণীত হয় একটি নীতিমালা। এছাড়া এ আইনে কোনো সংস্কার হয়নি।
বিদ্যুৎ আইনকে যুপোযোগী করতে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তাপস কুমারের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। আইন তৈরিতে কমিটিকে কারিগরি সহায়তা করেছে ইশতিয়াক আহমেদ অ্যাসোসিয়েটস। বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল আইন সংশোধনের বিষয়টি দেখভাল করছে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের বাজার বা পাওয়ার মার্কেট থাকবে যেখানে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে কেউ বিদ্যুৎ কিনতে পারবে। বাণিজ্যিক কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে সরাসরি বিক্রি করা যাবে। এক্ষেত্রে দুই পক্ষ আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে বিদ্যুতের দাম ঠিক করবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্ধারিত মূল্যে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছেও বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে বেসরকারি উদ্যোক্তারা। বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালনের জন্য দেশের বিদ্যমান সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারবে।
বর্তমানে একক ক্রেতা হিসেবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সরকারি বেসরকারি সব পর্যায়ের বিদ্যুৎ কিনে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। আর বিদ্যুৎ সঞ্চালনের পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার কাজটি করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সরকারের অনুমতিসাপেক্ষে কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে বাংলাদেশের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে। আবার বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারবে। খসড়া আইনে বিদ্যুৎ বিভাগের সব প্রতিষ্ঠানকে শ্রম আইন ২০০৬ এর আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট কোনো সরকারি বা বেসরাকরি প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে না।
বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে একটি এলাকায় বা সারা দেশের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটালে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে খসড়ায়। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। নিজের মিটার থেকে অন্য কাউকে সংযোগ দিলে ছয় মাস কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মিটার নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিরীক্ষার সুপারিশও করা হয়েছে ।
চুরি ও বিলখেলাপি সংক্রান্ত ১১টি ধারা রাখা হয়েছে খসড়ায়। বিলখেলাপি বা অবৈধ সংযোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে।
নিয়মিত আদালতের পাশাপাশি ২০০৯ সালে প্রণিত ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব অপরাধের বিচার করতে পারবেন। নতুন আইনে বিদ্যুৎ খাতের জন্য স্থায়ী বিচারক (ম্যাজিস্ট্রেট) নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ আইনের বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে একটি ‘পাওয়ার সেক্টর মনিটরিং অ্যান্ড ইয়ালুয়েশন সেল’ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে একজন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ও প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শক এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিদর্শক নিয়োগ করতে পারবে বিদ্যুৎ বিভাগ।
খসড়া আইন অনুসারে দুর্যোগকালীন ও বিশেষ সময়ের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কাজের সঙ্গে যুক্ত স্থাপনায় সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবে।