সুদখোর আব্দুস সামাদ আজাদের অত্যাচারে হরিণাকুন্ডুর মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : সুদাসল দু‘ই দেয়, তবুও গ্রাহকের টাকা পরিশোধ হয় না। পাওনা থাকে বছরের পর বছর। চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে ওঠা সুদের খেসারত দিতে গিয়ে গ্রাহকের হারাতে হয় বসত ভিটা, নয়তো গোয়ালের গরু। শেষ সম্বল বিক্রি করে সুদের টাকা পরিশোধ করতে হয়। আর এভাবেই দিনের পর দিন কাবলিওয়ালাদের মতো সুদখোরদের অত্যাচার চলছে ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই এলাকার রগোন সমবায় জোট নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে আব্দুস সামাদ আজাদ নামে এক প্রভাষক বছরের পর বছর চড়াসুদের ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তার অবৈধ কর্মকান্ডে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আব্দুস সামাদ আজাদ হরিণাকুন্ডুর কাপাশহাটিয়ার হাজী আরশাদ আলী ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক। একই উপজেলার ঘোরদাহ গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে তিনি। গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ঋনের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। সরেজমিনে হরিণাকুন্ডু উপজেলার শিতলী গ্রামে গিয়ে জানা গেছে ওই গ্রামের মতুরেশ কুমার পাচ বছর আগে সুদখোর আব্দুস সামাদ আজাদের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকার ঋন নেন। লাভসহ তাকে ৫৩ হাজার টাকা প্রদান করার পর একদিন আব্দুস সামাদ বলেন আপনাকে আরো ৩১ হাজার টাকা দিতে হবে। এই টাকা দিতে অস্বিকার করায় তিনি আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আমার বাড়িতে চরমপন্থিদের পাঠিয়ে হত্যার হুমকী দেন। আমি নিজের জীবন ও মান সম্মানের ভয়ে আমার একটি গর্ভবতি গরু বিক্রি করে তাকে আরো ৩১ হাজার টাকা দিয়ে রক্ষা পায়। ৪০ হাজার টাকা নিয়ে হুমকী ধমকী দিয়ে সুদখোর আজাদ এভাবে আমার কাছ থেকে সর্বমোট ৮৪ হাজার টাকা আদায় করেন। হাজী আরশাদ আলী ডিগ্রী কলেজের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী ডাবলু মিয়া অভিযোগ করেন একই কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক আব্দুস সামাদের কাছ থেকে প্রয়োজনে দুই দফায় ৩০ হাজার করে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। এই টাকা নিয়ম মাফিক আসল ও লাভসহ ১ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। এখন তিনি আমার কাছে নতুন করে ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা দাবি করছে। এই টাকা দিতে না চাওয়াই আমাকে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। এমনকি চাকরি কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। শিতলী গ্রামের রিপন নামে এক যুবক আব্দুস সামাদের রগোন সমবায় জোট থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ৪৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়। টাকা দিতে না পেরে রিপন এখন এলাকা ছাড়া। বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে মোতালেব হোসেনসহ সব শিক্ষক অবগত হলেও সুদখোর শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। এমনকি অধ্যক্ষ নিজেও এই সুদখোরের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিচার সালিশ করেছে। অভিযোগ উঠেছে আর্থিক লেদদেন করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি এবং সমাজসেবা থেকে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়। কিন্তু সরকারের কোন অনুমতি ছাড়াই শিক্ষক আব্দুস সামাদ আজাদ তার বাড়িতে অবৈধ ভাবে এই জমপেশ সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সারা জেলায় তার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। আছে লাঠিয়াল বাহিনী। ঝিনাইদহ শহরসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামে তার রমরমা সুদে ব্যবসা চলছে। এই সুদখোরের অত্যাচারে গ্রামের মানুষ আজ বিপন্ন। দায়ঘায়ের কারণে সুদের টাকা নিয়ে মানুষের এখন মরণ দশা। এ বিষয়ে হাজী আরশাদ আলী কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও রগোন সমবায় জোটের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুস সামাদ সুদে কারবারের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি টাকা দিয়ে আসলসহ সামান্য লাভ নিয়েছি। তাদের প্রতি কোন জুলুৃম করা হয়নি। যে দুই জন অভিযোগ করেছেন, তারা আমার কলেজের কর্মচারী। তিনি বলেন এ নিয়ে আমার কলেজের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।