দামুড়হুদার বাড়াদি সীমান্তে বিএসফের নির্যাতনে আহত গরু ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদের মৃত্যু
হাবিবুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হেরে গেলেন বিএসএফর নির্যাতনে আহত গরু ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ (৪০)। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মারা যান তিনি। বৃহস্পতিবার ভোরে গরু আনতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গেলে আব্দুল মজিদকে বিএসএফ আটক করে। পরে তাকে রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে মুমুর্ষ অবস্থায় মাথাভাঙ্গা নদীতে ফেলে যায়। নিহত আব্দুল মজিদ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোরে আব্দুল মজিদসহ ৪/৫ নাস্তিপুর সীমান্তে যায় গরু আনতে। এ সময় ভারতের বিজয়পুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা মজিদকে আটক করে। পরে তাকে পিটিয়ে গুরুতর জখম অবস্থায় মাথাভাঙ্গা নদীতে ফেলে রেখে যায়।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল মজিদ মারা যায়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সউফ কবির মালিক জন জানান, বিএসএফের নির্যাতনে আহত হয়েছে এমন তথ্য দিয়েই আব্দুল মজিদকে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কিন্তু হাসপাতালে ছাড়পত্র না নিয়েই শনিবার হাসপাতাল ত্যাগ করে মজিদ। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবারো তাকে যখন হাসপাতালে নেওয়া হয় তখন আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পাই। নিহতের স্ত্রী সাবিনা বেগম জানান, পুলিশি ঝামেলা এড়াতেই হাসপাতাল থেকে কাউকে না জানিয়ে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। এদিকে রাত দশটায় নিহত মজিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার লাশ ঘিরে স্বজনরা আহাজারি করছে। বৃদ্ধ মা , স্ত্রী, ও তার দু কন্যার বুক ফাটা কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসিরা ভীড় করছে তার লাশ দেখার জন্য। সেই সাথে বিজিবির দর্শনা ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার রবিউল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ঘটনা শুনছেন-জানছেন। এ সময় তিনি জানালেন, ঘটনাটি ৫ দিন আগের। মজিদকে কে বা কারা মেরেছে তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছেনা। তবে ঘটনার দিন যদি মজিদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ কার হতো কিংবা বিজিবিকে জানানো হতো তাহলে বিএসএফকে প্রতিবাদ জানানো যেতো। এ সময় নিহত আব্দুল মজিদের শাশুড়ি ও শ্যালকরা জানালেন, মজিদ বৃহস্পতিবার রাতে গরু আনতে ভারতে গিয়েছিল। এরপর রাত দশটার দিকে খবর পাই মজিদকে বাড়াদি সীমান্তে বিজয়পুর ক্যাম্পের বিএসএফরা ধরে নিয়ে রাইফেলের আট দিয়ে বুকে আঘাত করে, পা ভেঙ্গে দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে জখম করে সীমান্তবর্তী মাথাভাঙ্গা নদীতে ফেলে দিয়েছে। এরপর কামারপাড়া গ্রামের লোকজন তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে দিয়ে যাই।
তবে চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক লেঃ কর্নেল এসএম মনিরুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা তাৎক্ষানিকভাবে সংশ্লিষ্ট বিওপিতে যোগাযযোগ করেও ঘটনার সত্যতা মেলেনি। এদিকে আজ বুধবার সকালে মজিদের লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।