দুই পুলিশের অবহেলায় বর্ষবরণে নারী নিপীড়ন
ঢাকা: দুই পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বর্ষবরণে টিএসসিতে নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে বলে বেরিয়ে এসেছে পুলিশের তদন্তে।
গত বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তাতে উঠে এসেছে এ পর্যবেক্ষণ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র রোবাবার এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, পহেলা বৈশাখের নারী নিপীড়নের ঘটনায় গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটি প্রায় এক মাস তদন্তকাজ সম্পন্ন করে এ প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ কে সাইদুল হক ভুঁইয়া ও এসআই আশরাফুল ইসলামের দায়িত্বে অবহেলার কথা উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদনে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বর্ষবরণসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানসহ আশাপাশের এলাকায় অন্যান্য সময়ের অনুষ্ঠানগুলোতে কি ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে সে ব্যাপারেও সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রায় এক মাসেও বর্ষবরণে নারী নিপীড়নকারীদের সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করতে না পারার ব্যাখ্যাও রয়েছে পুলিশের ওই প্রতিবেদনে। পুলিশের নিজস্ব তদন্তে অভিযুক্ত এসআই আশরাফুলকে ইতোমধ্যেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে পরিদর্শক সাইদুল আছেন বহাল তবিয়তে।
সূত্র জানিয়েছে, গত ১৪ এপ্রিল বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নারী লাঞ্ছনার ঘটনার পরই তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করে ডিএমপি। ওই কমিটিতে ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মোহাম্মদ ইব্রাহিম ফাতেমী, যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিকস) ওয়াই এম বেলালুর রহমান, ডিবির উপ কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর। তাদের তদন্তের কাজে সহায়তা করছেন রমনা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার।
একটি কমিটি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নারী নিগ্রহের ঘটনায় জড়িতদের সনাক্তে কাজ করে। অন্য কমিটি পুলিশের ভূমিকা ও দায়-দায়িত্ব খতিয়ে দেখে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা থাকলেও পরে সময় বাড়ানো হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের কাছে দায়িত্বরত শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ কে সাইদুল হক ভুঁইয়া ও এসআই আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে বলা হয়, সেদিন পুলিশের কিছু সদস্য ঘটনার আশপাশে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলেও তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি।
তদন্তে সুপারিশ করা হয়েছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা উৎসব চলাকালে বিকাল তিনটার পর থেকে সোহরাওয়ার্দীর একটি ফটক খোলা রেখে সবগুলো ফটক বন্ধ করে দিয়ে নজরদারির মধ্যে রাখা উচিৎ। সেই সঙ্গে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী থাকা উচিৎ। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সিসি ক্যামেরা বাড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
নারী লাঞ্ছনার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ না দেয়ায় পুলিশ বাদি হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। সে মামলাটির তদন্ত চলছে পৃথকভাবে। সেখানেও কার্যকর অগ্রগতির সংবাদ মেলেনি। মামলাটির তদন্তভার আদালতের নির্দেশে ডিবিতে ন্যস্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য ও ডিবির উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, ‘বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নারী লাঞ্ছনার সত্যতা পাওয়া গেলেও বিজ্ঞাপন দিয়েও কারো কাছ থেকে সুর্নিদিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে। ডিবি ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে গত ১৬ এপ্রিল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা হয়। এ কমিটি ওইদিনের ঘটনার তদন্তে হাত দেয়। কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসরিন আহমেদ বলেন, ‘গণমাধ্যমে অনেক তথ্য প্রকাশিত হলেও, স্বশরীরে এসে কেউ কোনো তথ্য দেয়নি। কাজেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ও ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্ত করতে হচ্ছে।’