সাত খুন: ‘না রাজি’ দিবেন বিউটি
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলায় আদালতে দেয়া চার্জশিটের শুনানি হবে ১১ মে। এদিনে একটি মামলায় আদালতে চার্জশিটের বিরুদ্ধে ‘না রাজি’ দিতে যাচ্ছেন মামলার বাদী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, নারায়ণগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সাত খুন মামলার নির্ধারিত তারিখ সোমবার। এদিন চার্জশিটের ব্যাপারে শুনানি হবে।
সেলিনা ইসলাম বিউটি সাংবাদিকদের জানান, যারা আমার স্বামী হত্যায় সম্পৃক্ত ও যাদের আসামি করে মামলা করেছিলাম তাদের মধ্যে নূর হোসেন ছাড়া অন্য পাঁচজনকে অব্যাহতি দেয়াতে আমি ক্ষুব্ধ। আমার মনে হয় অনেক কিছু গোপন রাখা হয়েছে। আমি চাই নূর হোসেনকে দেশে এনে রিমান্ডে নেয়া হোক। আমার মামলায় ৬ জনকে আসামি করেছিলাম। কিন্তু একজনকে রেখে কিসের জন্য ৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়নি সেটা প্রশ্নবিদ্ধ থাকায় আমি আদালতে না রাজি দিব।
বিউটি আরো বলেন, ‘নূর হোসেন ও ইয়াসিন এলাকায় জমি দখল, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। আমার স্বামী এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার কারণেই তাকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সিটি কর্পোরেশনের একটি রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজকে কেন্দ্র করে নূর হোসেনের ফুফাতো ভাই মোবারকের সঙ্গে নজরুলের বিরোধ ও বাগবিতণ্ডা হয়। সেদিন আসামিরা আমার স্বামীকে মারতে অস্ত্র নিয়ে এসেছিল। তাদের সবার হাতে একটা দুটা করে অস্ত্র ছিল। তাদের কেন বাদ দেয়া হলো? এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীকেও বের করা হোক? দেশে ফিরিয়ে আনা হোক নূর হোসেনকে।
প্রসঙ্গত, সাত খুনের ঘটনায় নজরুল ইসলামের শূন্য ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছে তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। সাত খুনে তিনি একটি মামলা করেন। অপরদিকে অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার ও গাড়ি চালক ইব্রাহিমকে অপহরণ ও হত্যা মামলার বাদী ছিলেন চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। এ মামলায় আসামি অজ্ঞাত করা হয়েছিল। তবে চার্জশিটের ব্যাপারে কোনো ধরনের আপত্তি নেই চন্দন সরকার পরিবারের।
গত ৮ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দুটি মামলাতেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সাতজনকে অপহরণের পরদিন ২৮ এপ্রিল ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম। মামলার আসামীরা হলেন- সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া, ইকবাল, হাসু, রাজু ও আনোয়ার। এর মধ্যে হাসু প্যানেল মেয়র নজরুলের চাচাশ্বশুর।
মামলায় বাদী আশঙ্কা করেছিলেন, অপহরণকারী নূর হোসেন ও হাজী ইয়াসিন যেকোনো মুহূর্তে দেশ ত্যাগ করতে পারে।
গত ৮ এপ্রিল বুধবার আদালতে দায়ের করা চার্জশিটে ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তারকৃত সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ র্যাবের চাকরিচ্যুত তিনজন আলোচিত কর্মকর্তাসহ ৩৫জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এজাহারভুক্ত ৫ আসামিকে। অভিযুক্তদের মধ্যে নূর হোসেন ভারতে গ্রেপ্তার হলেও তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
চার্জশিটে অব্যাহতি প্রাপ্ত এজাহারভুক্ত ৫ আসামি হলো সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া, ইকবাল, হাসমত আলী হাসু, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রাজু ও আনোয়ার। মামলায় এ ৫জনকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ ৫জনের সঙ্গে নূর হোসেন এজাহারভূক্ত ছিলেন। তিনি গত বছরের ১৪ জুন ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।
মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ জনের মধ্যে ১৩ জনকে পলাতক দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে নূর হোসেন ও সহযোগীসহ ৫ জন ও র্যাবের ৮ সদস্যের নাম রয়েছে।
মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ জনের মধ্যে ২২ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। তারা হলো – চাকরিচ্যুত র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক মোহাম্মদ সাঈদ, উপ-অধিনায়ক মেজর আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার এম এম রানা, ল্যান্স নায়েক বিল্লাল হোসেন, সাবেক এসআই পুর্ণেন্দু বালা, হাবিলদার মো. ইমদাদুল হক, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন, সিপাহী আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. সিহাব উদ্দিন, রেডিও অপারেটর গেইন (আরওজি) মো. আরিফ হোসেন, এএসআই বজলুর রহমান, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার ও গাড়ি চালক নাসিরউদ্দিন, সিপাহী নুরুজ্জামান, বাবুল হাছান, সিপাহী সাবেক সেনা সদস্য আসাদুজ্জামান ও নূর হোসেনের প্রধান বডিগার্ড মর্তুজা জামান চার্চিল, প্রধান ক্যাশিয়ার আলী মোহাম্মদ, ক্যাশিয়ার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ প্রচার সম্পাদক আবুল বাশার, মাদক স্পট, জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য পরিচালনাকারী রহম আলী ও মিজানুর রহমান।
মামলায় অভিযুক্ত নূর হোসেনসহ পলাতকরা হলেন- নূর হোসেনের সহযোগী ভারতে গ্রেপ্তার সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাহজাহান ও জামাল উদ্দিন। এছাড়া র্যাবের ৮জন হলেন- করপোরাল লতিফুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলী, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, এএস আই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান।