ছাত্র ইউনিয়নের তারেক-লাকির মাথা ফাটালো পুলিশ
ঢাকা: বর্ষবরণে টিএসসিতে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তিসহ ৬ দফা দাবিতে ‘পাল্টা আঘাত’ কর্মসূচি পালন করার সময় ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে সংগঠনটির সভাপতি হাসান তারেক ও সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তারসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। পুলিশ দাবি করেছে এ ঘটনায় ৬ জন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে।
রোববার দুপুর ১টার দিকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, যৌন নিপীড়ন বিরোধী ‘পাল্টা আঘাত’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাওয়ের লক্ষ্যে বেলা ১২টার দিকে মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপুর্ণ সড়ক প্রদিক্ষণ করে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের দিকে যায়।
ছাত্র ইউনিয়নের এ কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। বিশেষ করে ঢাবি ক্যাম্পাস ও শাহবাগ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ব্যারিকেড তৈরি করা হয় শাহবাগে।
ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলটি শাহবাগের দিকে না গিয়ে উল্টোপথে টিএসসি-কার্জন হল হয়ে ডিএমপি কার্যালয়ের দিকে চলে যায়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের কাছে পুলিশি বাধায় পড়ে মিছিলটি। বাধা পেয়ে ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা রাস্তায় অবস্থান নেয় এবং নেতারা বক্তব্য দিতে থাকে। অবস্থানের প্রায় আধা ঘণ্টার মাথায় বিনা উসকানিতে পুলিশ ছাত্র নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ করে ছাত্রিইউনিয়ন নেতারা।
পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে সংগঠনের সভাপতি হাসান তারেক, সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদ এসএম জিলানী শুভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিটন নন্দী, মসিউর সজিব, ধ্রুব মাহমুদুল হাসানসহ অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনায় হাসান তারেক ও লাকি আক্তারের মাথা ফেটে গেছে বলে জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় আটকরা হচ্ছেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপাঞ্জন সিদ্ধান্ত কাজল, কর্মী আরিফুল ইসলাম অনিক, তেজগাঁও কলেজের অন্তু নাগ, আশা ইউনিভার্সিটির সাদ্দাম হোসেন ও বুয়েটের অনিক রায়।
ছাত্র ইউনিয়নের একটির সূত্র জানিয়েছে, আহত ছাত্রনেতারা চিকিৎসা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। বিকেলে মধুর ক্যান্টিনে এ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনও ডাকা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আহত পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন- রমনা থানার ওসি (তদন্ত) আলি হোসেন, এসআই কামরুল, নায়েক জাহিদ, কনস্টেবল আরাফাত, কনস্টেবল শাহীন ও কনস্টেবল মোহাম্মদ আরিফুল।
রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়ন স্মারকলিপি দেয়ার কথা বলে মূলত নাশকতা সৃষ্টির জন্য এসেছিল।’
তিনি বলেন, ‘তারা পুলিশের তিনটি ব্যারিকেড (দোয়েল চত্বর, মৎস্যভবন, কাকরাইল মসজিদ মোড়) ভেঙে সর্বশেষ বেইলি রোডের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। এখানে তারা ব্যর্থ হয়ে রাস্তায় বসে পড়ে। তাদের উঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এসময় তিন রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইপ-পাটকেল ছুঁড়ে। এতে ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়।’
এ ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের ৫ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন ওসি মশিউর।