লোহাগড়া থেকে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ
কাজী আশরাফ, লোহাগড়া(নড়াইল)প্রতিনিধি : খেজুর গাছ এক ধরনের শাখা বিহীন বৃক্ষ। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সুমিষ্ট ফল হিসাবে এর গ্রহণ যোগ্যতা পাওয়া যায় অনেক বছর পূর্ব থেকে। খেজুর গাছের ফলকেই খেজুর হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। মাঝারী আকারের গাছ হিসাবে এর উচ্চতা ১৫ মিটার থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর লম্বা পাতা রয়েছে পাখির পালকের আকার বিশিষ্ট। দৈর্ঘ্যে পাতা গুলো ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা।
সুদীর্ঘ কাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার কিয়াদাংশে জনসাধারনের কাছে খেজুর প্রধান উপদেয় খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে খেজুরের চাষাবাদ কিংবা খেজুর গাছের উৎপত্তি সম্বন্ধে সঠিক কোন তথ্য জানা যায় নি। ধারণা করা হয় যে, পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোয় সর্বপ্রথম এর চাষাবাদ হয়েছিল। সম্ভবতঃ প্রাচীনকাল থেকেই মেসোপটেমিয়া থেকে প্রাগৈতিহাসিক মিশরের অধিবাসীরা খ্রিষ্ট-পূর্ব ৪ হাজার বছর থেকে এ গাছের গুনাগুন সম্পর্কে অবগত ছিল। খ্রিস্ট-পূর্ব ৬ হাজার বছর আগের সময় প্রতœতাত্বিক নিদর্শনে দেখা যায় যে, পূর্বঞ্চলীয় আরবেও এর চাষাবাদ হতো।
নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার মানিকগঞ্জ, সত্রহাজারি, রামপুরা, তালবাড়িয়া, গোপীনাথপুর, ইতনা, লাহুড়িয়া, দেবী-শরুশনা, কলনা ইত্যাদি গ্রামে এক সময় প্রচুর পরিমান খেজুর গাছ দেখা যেত। শীতের সময় খেজুরের রসের নানা পিঠা তৈরি হত। শীতের ভীড়ে খেজুর রস খাওয়ার ধুম পড়ে যেত এ অঞ্চলের অলিগলিতে। আজ কালের বিবর্তনে এবং অনিয়ন্ত্রীত ভাবে বসতবাড়ি, ইটের ভাটা ইত্যাদি তৈরিকরে খেজুর গাছ সহ ফলজ বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। ইটের ভাটা গুলোতে ঘুরে দেখা যায় আম, কাঠাল, খেজুর, তাল ইত্যাদি ফলজ গাছ ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আগে লোহাগড়ার প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে এই সময় ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার পথে খেজুর গাছের তলা থেকে খেজুর কুড়িয়ে নিয়ে পকেট ভরে স্কুলে যেত। সেই দৃশ্য আজ ইতিহাস হয়ে গেছে।
একটি খেজুর গাছ ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এসব গাছ থেকে ফল ও রস সংগ্রহ করা যায়। চারা উৎপাদন, রোপণ, গাছের পরিচর্যা, রস সংগ্রহ, গুড় তৈরি এবং বাজারজাতসহ বিভিন্ন ধরনের কাজের মাধ্যমে লোহাগড়ার বহু দরিদ্র ও বেকার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। খেজুরের পাতা দ্বারা পাটি, থলে, বাড়ি ঘরের ছাউনি, বেড়া ও কান্ড চেরাই করে ঘরের খুটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাতা ও অন্যান্য অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লোহাগড়ার প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে যদি কয়েক হাজার খেজুর গাছ লাগানো সম্ভব হত তাহলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেত।