আরডিপি দশমিনা শাখা লাপাত্তা হওয়ার পায়তারা
সাইদুর সাইদ, দশমিনা : বেসরকারী অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান আরডিপি ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট এমসিএস লিমিটেড পটুয়াখালীর দশমিনা শাখা ম্যানেজার আসাদুজ্জামান রাতের আঁধারে উধাও হয়েছে। তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারন মানুষদেরকে মোটা অংকের মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে আমানত হিসেবে ৩কেটি ৭২লক্ষ ১৬হাজার টাকা উত্তোলন করেন। গ্রাহকদের উক্ত টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি লাপাত্তা হওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানের কতিপয় মাঠকর্মীর চাকুরী ছেড়ে দেওয়ার কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রাহকদের মধ্যে হতাশা ও দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়েছে। যে কোন মুহুর্তে এ প্রতিষ্ঠানটি লাপাত্তা হতে পারে বলে গ্রাহকদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
অফিস সূত্র ও আমানত ম্যানেজার মো: জাহিদুল ইসলাম জানান, ২০১০ সালের নভেম্বর মাসের দিকে অত্র উপজেলায় আরডিপি ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট এমসিএস লিমিটেড নামের এ অর্থ লগ্নী প্রতিষ্ঠানটি দৈনিক সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে সর্ব্বোচ্চ যে কোন পরিমানের টাকা জমা রাখলে আকর্ষণীয় মুনাফাসহ এককালীন ফেরৎ দেওয়ার শর্তে দৈনিক সঞ্চয় প্রকল্প (উঝঝ), সাপ্তাহিক সঞ্চয় প্রকল্প (ডঝঝ), মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প (গঝঝ), শিক্ষা সঞ্চয় প্রকল্প (ঊঝঝ), হজ্ব সঞ্চয় প্রকল্প (ঐঝঝ), মাসিক লভ্যাংশ ভিত্তিক মেয়াদী প্রকল্প(গচউজ),নির্ধারিত মেয়াদী জমা (ঋউজ), দ্বিগুন জমা প্রকল্প(উগজ), তিন গুন জমা প্রকল্প (ঞগজ), বিশেষ বন্ড (ঝচঊঈওঅখ ইঙঘউ), ল্যান্ড বন্ড (খঅঘউ ইঙঘউ), লাখপতি বন্ড (খঅঈ চঙঞও ইঙঘউ) প্রকল্প নামে কার্যক্রম শুরু করে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারন মানুষ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১ – ৩ বছর, ৫ বছর, ৮ বছর এবং সাড়ে ১০ বছর মেয়াদীতে মোটা অংকের মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহক সৃষ্টি করে দৈনিক সঞ্চয়ী আমানত হিসেবে ১৬ লক্ষ টাকা, মাসিক সঞ্চয়ী আমানত হিসেবে ৫৩ লক্ষ ১হাজার টাকা, শেয়ার সঞ্চয় আমানত হিসেবে ৭ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা, এককালীন সঞ্চয় আমানত হিসেবে ৯৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১ কোটি ৭২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা আমানত আদায় করা হয়েছে। মাসিক লভ্যাংশ ভিত্তিক মেয়াদী প্রকল্প ১ বছর মেয়াদে কোন গ্রাহক ১ লক্ষ টাকা আমানত প্রতি মাসে ১ হাজার ৬শত টাকা, ২ বছর মেয়াদীতে প্রতিমাসে ১ হাজার ৭শত টাকা, ৩ বছর মেয়াদী আমানতে প্রতিমাসে ১ হাজার ৮শত টাকা এবং ৫ বছর শেয়াদী আমানতে প্রতিমাসে ২হাজার টাকা করে মুনাফা প্রদান করা কথা এ প্রতিষ্ঠানের পাশ বইতে উল্লেখ রয়েছে। গ্রাহকদেরকে কয়েক মাস শর্তানুযায়ী মুনাফা প্রদান করা হলেও প্রতিষ্ঠানের অর্থ সংকটের কারনে তা এখন ব›েদ্ধর পথে। প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের টাকা উত্তোলন করে গ্রাহকদেরকে ফেরৎ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এ শাখার কোন কর্মী চাকুরী ছাড়ার জন্য আবেদন করেনি। তবে বিনিয়োগ কর্মী মাকসুদার শিশুর অসুস্থ্যতা এবং ক্যাশিয়ার মোর্শেদা বেগম নিজে অসুস্থ্য থাকায় তারা ছুটিতে আছে।
এলাকাবাসী সূত্র জানান, সরকারের নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে এ প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলাটর অর্থরিটি (এমআরএ) কোন নিয়মই মানা হচ্ছে না। ফলে এ প্রতিষ্ঠানটি তাদের ইচ্ছামত ঘোষনাপত্র তৈরি করে সাধারন মানুষদেরকে প্রলোভন দেখাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা সত্যকে গোপন করে মিথ্যাকেই বেশী প্রচার করছে। তাদের হিসাবমতে আমানত যা প্রচার করা হচ্ছে তার চেয়ে দ্বিগুন আমানত উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতি গ্রাহক ৫০০ টাকা করে দৈনিক সঞ্চয় টাকা জমা করলে সাড়ে ৫ বছরে ২৫ হাজার টাকা জমা হলে মেয়াদপূর্তিতে গ্রাহককে মুনাফাসহ ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা প্রদান করা হবে, সাপ্তাহিক ১ হাজার টাকা করে ৬ বছরে গ্রাহকদেরকে মুনাফাসহ ৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে এমন কথা বলে সঞ্চয়ের টাকা আদায় করেছে। এমনকি যে কোন মুহুর্তে জমাকৃত সঞ্চয়ের টাকা ফেরৎ আনা যাবে। কিন্তু গ্রাহকদের জমাকৃত সঞ্চয়ের টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে হয়রানী শিকার ও ঘোষিত মুনাফা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরৎ চাইলে তাদের সাথে দূর্ব্যবহার, হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। এমনকি গ্রাহকদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানী করার হুমকি ও থানা পুলিশের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা অধিক মুনাফার আশা ছেড়ে দিয়ে জমাকৃত সঞ্চয়ের টাকা উত্তোলন নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে।
উল্লেখ, বেসরকারী অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান আরডিপি ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট এমসিএস লিমিটেড নামের এ প্রতিষ্ঠানটি জামায়েত ও এর অঙ্গ সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা তা উচ্চ পর্যায়ে খতিয়ে দেখার জন্য সুশিল সমাজ দাবী করছে।