লোহাগড়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন
কাজী আশরাফ, লোহাগড়া(নড়াইল) প্রতিনিধিঃ নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠলেও সেই হাসি ম্লান হয়ে যাচ্ছে । কারন একটাই- ন্যায্যমুল্য না পাওয়ার ভয়ে। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার প্রবীর দাস বলেন, ‘আমাদের চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬ হাজার ৯ শ ১০ হেক্টর জমি, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে।
আবাদি জমি গুলোতে অগভীর নলকুপ এবং এল,এল,পি(লো লিপ্ট পাম্প) এর মাধ্যমে সেচ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত ও সুখে স্বাচ্ছন্দে উন্নত জীবন যাপনের লক্ষ্যে এ অঞ্চলের কৃষকরা সামান্য জমিও পতিত ফেলে রাখেনি। কৃষকরা তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের জমিতে বোরো আবাদ করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে শেষ পর্যন্ত লোহাগড়া উপজেলায় ৭ হাজার ১ শত ৫০ হেক্টার জমিতে বোরো আবাদ করা হয়, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চাহিদা মত জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ, সার, নিড়ানি ও সঠিক পরিচর্যার কারনে লোহাগড়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সরেজমিনে গতকাল উপজেলার দেবী আইড়োখাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভালো ফলন হওয়া সত্তেও দেবী গ্রামের কৃষকদের মনে কোন আনন্দ নেই। ঐ গ্রামের বাকাদ্দেস মাস্টারের ছেলে কৃষক সেলীম শেখের সাথে কথা বললে তিন জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে এবার ভাল ফলন হয়েছে। ধানের ফলন দেখে আমরা খুবই খুশি, দু-এক দিনের ভিতরে ধান কাটা শুরু করবো, কিন্তু দুশ্চিন্তার শেষ যেন নেই। কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে পরিমান ধান আবাদে খরচ হয়েছে এবং বাজারে ধানের যে দাম তাতে আমাদের উৎপাদনের খরচ উঠবে বলে মনে হয়না। এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, দেবী গ্রামে ভালো ধান হলেও দুযোর্গপূর্ণ আবহাওয়া নিয়ে আমরা সংকিত। যে কোন সময় ঝড় কিংবা শিলা বৃষ্টিতে ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দুঃশ্চিন্তার শেষ হবে না, আইড়োখাল এলাকায় ধান ভালো হলেও প্রয়োজনীয় রাস্তা ঘাট না থাকায় কৃষকরা ক্ষেতের আইল দিয়ে ধান কেটে বাড়ী নিতে না পারায় অনেক ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন স্থান থেকে ক্ষেতে আগত ফাড়িয়া বা দালালদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। সত্রহাজারী গ্রামের কৃষক সবুর কাজী বলেন, আমি ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারন কৃষকের ঘরে যখন ধান উঠে তখন সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করে ধান কেনা শুরু করে না। ধান যখন মহাজনের গোলায় চলে যায়, সরকার তখন সরকারী ভাবে ধান চাল কেনা শুরু করে। এতে কৃষকরা লাভবান হয় না, ধান ব্যবসায়ীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যান। দেবী গ্রামরে কৃষক ইসলাম কাজী বলেন, ধান রোপনের সময় কৃষকদের হাতে প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা না থাকায় স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বেশির ভাগ কৃষককে বোরো আবাদ করতে হচ্ছে। ঋণ আনতে গিয়ে অনেক কৃষক তাদের জমির ধান আগাম বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। আবার অনেক কৃষক সময় মতো মহাজনের ঋণ পরিশোধ করতে সস্তায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। উপজেলার কৃষকদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী, ‘এখনই ধান চালের দাম নির্ধারণ করে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান চাল সংগ্রহ করবেন’। এতে প্রকৃত পক্ষে কৃষকরা লাভবান হবে।