বাগেরহাটের একটি কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় নকলের মহোৎসব : প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ কেন্দ্র সচিবের নীরব পদত্যাগ
বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে এইচ,এস,সি পরীক্ষায় নকলের মহোৎসবের অভিযোগ উঠেছে খোদ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। অনৈতিক এ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে না পেরে, কেন্দ্র সচিবের পদ থেকে নীরব প্রতিবাদ হিসেবে পদত্যাগ করেছেন ওই কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিভাগের সিনিয়র সহকারী অধ্যাপক, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। আর শরণখোলা উপজেলার সর্বত্র চলছে নকলের মহোৎসব নিয়ে আলোচনা সমালোচনা । নকলের এ তুলকালাম ঘটনার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ অতুল মন্ডল । তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রবিবার দুপুরে এ ঘটনার সাথে জড়িত এমন দুইটি কম্পিউটারের দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রাথমিক ভাবে কিছু মালামাল জব্দ করা হয়েছে । এ ছাড়া ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য একটি লিখিত প্রতিবেদন রবিবার রাতের মধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি ।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়,ঘটনার সূত্রপাত ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ইংরেজী ১ম পত্রের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রকাশ্যে নকল করার পাশাপাশি কয়েকজন শিক্ষকের মাধ্যমে বিভিন্ন কক্ষে নকল পৌঁছে দেয়ার দৃশ্য দেখে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান তাৎক্ষনিক শারিরিক অসুস্থতা দেখিয়ে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে কেন্দ্র সচিবের পদ থেকে সরে দাড়াতে লিখিত ভাবে আবেদন করেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলার প্রবীন শিক্ষকসহ সুশীল সমাজের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত ১ এপ্রিল থেকে সারা দেশের ন্যায় উপজেলার মাতৃভাষা কলেজ, তাফালবাড়ী স্কুল এন্ড কলেজ ও শরণখোলা ডিগ্রী কলেজের জেনারেল ও কারিগরি বোর্ড শাখার ৮১৬ জন শিক্ষার্থী শরণখোলা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে চলতি এইচ,এস,সি পরীক্ষায় অংশ নেয়। প্রথম দিন থেকে টুকিটাকি নকল শুরু হয়। মূলত নকলের মহোৎসব হয় ৯ এপ্রিল ইংরেজী ১ম পত্র পরীক্ষার দিন । আর এ অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত মাতৃভাষা কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক আবুল খায়ের ও শরণখোলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক আলতাফ হোসেন । আর এ দুইজন শিক্ষকের সাথে যোগসাজস রেখে অর্থের বিনিময়ে ওই কলেজের কারিগরি শাখার শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম ইংরেজী ১ম পত্রের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর (নকল) অর্থের বিনিময়ে কক্ষে কক্ষে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছে দেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য,কোন কোন শিক্ষক আবার মুল বই হল কক্ষে পৌছে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে । নকলের এমন ভয়াবহতা দেখেও, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কেউই প্রতিবাদ করতে সাহস পান নি। বিষয়টি কেন্দ্র সচিবের নজরে আসলে প্রতিবাদে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। এ বিষয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের এক সহকারী অধ্যাপক বলেন, নকলের এমন ভয়াবহ চিত্র কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনি দেখেন নি। তবে বিষয়টি কলেজের এক ষ্টাফ স্বীকার করে বলেন, পরীক্ষায় পাশের হার বাড়াতে শিক্ষার্র্থীদের সামান্য সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় যাতে লেখালেখি না হয় সে জন্যও তিনি অনুরোধ করেন। এ বিষয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে, তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব তার ভাল লাগেনা বলে তিনি সরে গেছেন বলে জানান। এ ব্যাপারে শরণখোলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ নুরুল আলম ফকির সাংবাদিক পরিচয় জানার পর মুঠোফোনে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।