প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের অপেক্ষায় তার হাতে খড়ির শিক্ষক কাজী মাগফুর রহমান
শেখ জিকু আলম, খুলনা থেকে : প্রধানমন্ত্রীর হাতে খড়ির শিক্ষক কাজী মাগফুর রহমান স্যার থাকেন এখন খুলনায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার বাল্যকালের হাতে খড়ির সেই শিক্ষক কাজী মাগফুর রহমান স্মৃতিচারণে বলেন, শেখ হাসিনার বয়স তখন ৪/৫ বছর হবে। বঙ্গবন্ধু মাঝে মধ্যে টুঙ্গিপাড়ায় এলে জিটি স্কুলে যেতেন। জিটি গ্যামাডাঙ্গা টুঙ্গিপাড়া মাইনর স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ মোঃ মুছা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভায়রা। বঙ্গবন্ধু জিটি স্কুলে যাওয়া আসার এক পর্যায়ে একদিন তিনি স্কুলে এসে তার ভায়রাকে বললেন, তার মেয়ে শেখ হাসিনাকে প্রাথমিক হাতে খড়ি শিক্ষা দেয়ার জন্য একজন ভাল ছাত্রের ব্যবস্থা করে দিতে। প্রধান শিক্ষক শেখ মোঃ মুছা তখন আমাকে (কাজী মাগফুর রহমান) ডেকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে লজিং মাষ্টার থাকার জন্য অনুরোধ করেন। আমিও স্যারের কথায় রাজি হয়ে গেলাম। তখন ১৯৫২/৫৩ সাল হবে। আমি তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমাকে কাছে ডেকে বললেন, তুই কবে আসবি আমার বাড়ী। আমি বললাম আগামীকাল যাব। পরের দিন বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গি পাড়ার বাড়ীতে উপস্থিত হলে বাড়ীর কাজের ছেলেকে বঙ্গবন্ধু আমার থাকার জায়গাটি দেখিয়ে দিতে বললেন। বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক কাচারি ঘরে আমার থাকার ব্যবস্থা হল। সেখান থেকে আজকের প্রধানমন্ত্রী অ, আ, ক, খ, হাতে খড়ি শিক্ষা জীবন শুরু হয়। কাজী মাগফুর রহমান স্যার তার স্মৃতিচারণে আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা (হাসু) ছিল খুবই চঞ্চল। তাকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রথমে বই নিয়ে বসাতে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। তবে ২/১ দিনের মধ্যে পড়াশুনায় মনোযোগী হয়ে উঠে। তিনি তার স্মৃতিচারণে আরও বলেন, ছোট বেলায় হাসিনা চঞ্চল সাহসী ও মেধাবী ছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ছোট বেলায় কত বছর পড়িয়েছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন প্রায় দুই বছর হবে। প্রধানমন্ত্রী হাতে খড়ির শিক্ষক কাজী মাগফুর রহমান তার অতীত স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু সাহচর্যে থাকা ১৯৫২ সালের যুক্তফ্রণ্টের নির্বাচন, এমনকি শেখ হাসিনার বিয়ের পর টুঙ্গিপাড়ার বাড়ীতে আসলে বেগম মুজিব তার কন্যাকে দোয়া করার জন্য আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তার বাড়ীতে। বঙ্গবন্ধু বাড়ীতে আসলেও আমাকে খাবার টেবিলে ডেকে নিয়ে খাবার খেতেন এবং মাষ্টার বলে সম্মোধন করতেন। ১৯৬২ থেকে ৭৭ পর্যন্ত জিটি হাইস্কুল বর্তমান যার নাম টুঙ্গিপাড়া হাইস্কুল নামে নাম করণ করা হয়েছে। সেই স্কুলে দীর্ঘ ১৫ বছর শিক্ষকতা করার পর অবশেষে খুলনা চলে এসে ১৯৮৩ সালে সেন্ট জোসেফস হাইস্কুলে শিক্ষকতা করি। তিনি প্রায় ১০ বছর অবসরে আছেন। তিনি খুলনা মহানগরীর পশ্চিম টুটপাড়া নুর মসজিদ সড়কে ২৪/১৩, বাড়ীতে বসবাস করেন। তিন মেয়ের জনক তিনি। বেসরকারী স্কুলে শিক্ষকতা করায় আর্থিক তেমন কোন সুযোগ সুবিধা তিনি পাননি। এক সময়ের সেই মেধাবী মাগফুর স্যার এখন বয়সের ভারে ন্যূজ। বৃদ্ধ বয়সে সংসার চালাতে এখন তিনি হিমসিম খাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে খড়ির শিক্ষক হয়ে আপনার অনুভূতি কি? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার শিক্ষকতা জীবনে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আজ প্রতিষ্ঠিত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমার ছাত্রী হওয়ায় আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আপনার কি চাওয়া পাওয়া আছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর ০১৯২৬২০৫৬৬৮ দিয়ে বললেন আমার বিশ্বাস তার বাল্য শিক্ষককে তিনি ভূলবেন না। স্মরণ করবেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অনেকবার গণভবনে তার রাষ্ট্রীয় অফিসে দেখার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। ১৮-৮-২০১৩ সালে রেজিষ্ট্রি চিঠি দিলেও কোন উত্তর পাইনি। তিনি বলেন, আমার সেই চিঠি তিনি আদৌও পেয়েছিলেন কিনা তা আমার জানা নাই। তিনি বলেন, তাহলে আর এ জীবনে আমার ছাত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাত কি আর পাবনা? ১৯৬৯ সাল এর পর দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সাথে আজও তিনি সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ পাননি। তবে তিনি আশা ছাড়েননি। তার বিশ্বাস বয়সের শেষ প্রান্তে এসে তিনি একটিবার হলেও তার হাতে খড়ি দেওয়া ছাত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাত পাবেন। এই আশায় তিনি আজও পথ চেয়ে রয়েছেন।