সন্তান যখন কুলাঙ্গার….
বাগেরহাট প্রতিনিধি : ‘ছেলে নয়,- ওটা কুলাঙ্গার, এমন সন্তান যেন কারো না জন্মে, কথাগুলো বলছিলেন গীতা বালা নামে এক বিধবা নারী। সন্তানের ঘৃন্য কর্মকাণ্ডের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বর্তমানে এই নারীর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে এলাকার আকাশ-বাতাস। কিন্তু কোন কিছুতেই এই পাষণ্ড ছেলের মন গলাতে পারেন নি তিনি। বিষয়টি ঘিরে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
গীতা বালার সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার আড়–য়াবর্ণী গ্রামের মৃত: সনাতন বালার স্ত্রী তিনি। এখন থেকে প্রায় ১৮ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। স্বামীকে হারিয়ে বিধবা গীতা খুবই নিরুপায় ও অসহায় হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি দেড় বছর বয়সী পুত্র সন্তান সুমনকে নিয়ে কোন ভাবে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকতে সংগ্রাম শুরু করেন। পিতৃহারা সন্তানকে মানুষ করেছেন তিনি সীমাহীন । সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আশায় বুক বেঁধে ছিলেন তিনি। এমনকি স্বামী হারানোর শোক পর্যন্ত ভুলে ছিলেন সন্তানের কথা ভেবে। কিন্তু তার সব আশা-ভরসা এখন ধূলোয় মিশে গেছে।
তার আদরের সন্তান সুমন প্রতিবেশি এক ব্যক্তির খপ্পরে পড়ে তাকে না জানিয়ে ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং সে বিয়ে করেছে ওই ব্যক্তির মেয়েকে। গত ১ এপ্রিল বুধবার অন্য ধর্ম মতে তাদের বিয়ে হয়। শ্বশুর বাড়ির লোকজনের খপ্পরে পড়ে নিজের পিতৃ সম্পত্তি বাস্তুভিটাসহ পুরোটাই লিখে দিয়েছে শ্বাশুড়ীর নামে। এমনকি মায়ের বসবাসের ঘরটুকু পর্যন্ত বিক্রি করতে বাকি রাখেনি। এ অবস্থায় চাপের মুখে দু:খিনি গীতা বালা বর্তমানে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পাগলের মত অন্যের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর অঝোরে কাঁদছেন সারাক্ষণ। কোথায় যাবেন কার কাছে নালিশ দেবেন,- কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। সন্তান আর বাস্তুভিটা এ দুই হারিয়ে এখন পথের ভিখারী হয়েছেন তিনি।
গীতা বালার এক নিকট আত্মীয় জানান, সম্পত্তির লোভে ওই ব্যক্তি সুমনকে ফুসলিয়ে তার মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছেন এবং তাকে ধর্মান্তরিত করেছেন। এক একর ৩৭ শতক জমি সুমনকে দিয়ে পাওয়ার অব এ্যাটর্নি করে ওই ব্যক্তি তার স্ত্রীর নামে লিখে নিয়েছেন এবং তাকে জামাই করেছেন। বর্তমানে এ সম্পত্তির বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে আড়–য়াবর্নি গ্রামের এক বিশিষ্ট সমাজপতি শেখ আতিয়ার রহমান এ কাজের সমালোচনা করে জানান, কাজটি খুবই ন্যাক্কার জনক। আমরা একই পাড়ায় হিন্দু-মুসলমান খুব সুন্দর ভাবে মিলে মিশে বসবাস করছি অথচ ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য একটি পরিবারকে পথে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।